আজকাল ওয়েবডেস্ক: ক্ষমতায় আসার পর ২০০০ সালের ৭ মে থেকে ভ্লাদিমির পুতিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কৌশলগত, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা–ভিত্তিক সম্পর্ক জোরদার করতে অসংখ্য বিদেশ সফর করেছেন। তাঁর সর্বাধিক সফর করা শীর্ষ ১০ দেশের তালিকা নিম্নরূপ—


কাজাখস্তান — ৩৩ বার
পুতিনের সর্বাধিক সফর করা দেশ কাজাখস্তান। ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন ও কলেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন (CSTO)-এর ভূমিকাই দুই দেশের সম্পর্ককে অত্যন্ত গভীর করেছে। আস্তানা ও অন্যান্য শহরে বারবার বৈঠক হয়েছে জ্বালানি সহযোগিতা, বাইকনুর কসমোড্রোম চুক্তি, কাস্পিয়ান সাগর সম্পর্কিত আলোচনা ও আঞ্চলিক সংকট মোকাবিলা নিয়ে।


বেলারুশ — ২৮ বার
বেলারুশ রাশিয়ার অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ‘ইউনিয়ন স্টেট’ কাঠামোর একটি কেন্দ্রীয় অংশ। সামরিক ইন্টিগ্রেশন, যৌথ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, জ্বালানি ভর্তুকি এবং পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া—সবই পুতিনের মিনস্ক সফরের প্রধান এজেন্ডা। ২০২২–এর পর থেকে সফরগুলোতে ইউক্রেন যুদ্ধকেন্দ্রিক সমন্বয়ও বাড়ে।


চীন — ২২ বার
পোস্ট–সোভিয়েত পরিসরের বাইরে চীনই পুতিনের সবচেয়ে বেশি পরিদর্শিত দেশ। “নো-লিমিটস” কৌশলগত অংশীদারত্ব, জ্বালানি মেগা-চুক্তি, প্রতিরক্ষা সমন্বয় এবং পশ্চিমী চাপের বিরুদ্ধে যৌথ অবস্থান—সবই সফরগুলোকে তাৎপর্যপূর্ণ করেছে। অলিম্পিক, বেল্ট অ্যান্ড রোড সামিট ও ট্রেড এক্সপোতেও তিনি অংশ নিয়েছেন।


ইউক্রেন — ২১ বার
২০১৪ সালের আগে পর্যন্ত ইউক্রেন ছিল পুতিনের অন্যতম ঘন ঘন সফরস্থল। ব্ল্যাক সি ফ্লিট, গ্যাস ট্রানজিট এবং সোভিয়েত উত্তরাধিকারভিত্তিক স্মরণ অনুষ্ঠান ছিল অ্যাজেন্ডা। তবে ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ ও ২০২২ সালের আক্রমণের পর দুই দেশের সম্পর্ক ভেঙে পড়ায় সফর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।


জার্মানি — ১৮ বার
ইউরোপে রাশিয়ার প্রধান সংলাপক হিসেবে জার্মানিতে পুতিন বহুবার গেছেন। নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন, বাণিজ্য এবং নরম্যান্ডি ফরম্যাটে ইউক্রেন কূটনীতি—এসবই সফরের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ২০১৪–এর পর সম্পর্কের অবনতি শুরু হয় এবং ২০২২–এর পরে তা আরও তিক্ত হয়।


ফ্রান্স — ১৭ বার
প্যারিস ও ডোভিলের বিভিন্ন বৈঠক, G8/G20 সম্মেলন, সিরিয়া এবং ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে আলোচনার জন্য ফ্রান্স পুতিনের অন্যতম সফরস্থান। মানবাধিকার, ন্যাটো ও পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার পদক্ষেপ নিয়ে মতপার্থক্য সত্ত্বেও দুই দেশের সংলাপ চলেছে।


তুরস্ক — ১৪ বার
তুরস্কের রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে পুতিন বারবার সেখানে গেছেন। তুর্কস্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইন, আক্কুয়ু পারমাণবিক প্রকল্প, S-400 প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং সিরিয়া প্রসঙ্গে আলোচনায় সফরগুলো মুখ্য।


কিরগিজস্তান — ১৩ বার
রাশিয়ার বিমানঘাঁটি, CSTO নিরাপত্তা সহযোগিতা, শ্রম–অভিবাসন ও EAEU ইন্টিগ্রেশন—এসব বিষয় পুতিনের কিরগিজস্তান সফরের মূল আলোচ্য থাকে।


তাজিকিস্তান — ১২ বার
আফগানিস্তানের উত্তরের সীমান্ত হওয়ায় তাজিকিস্তান রাশিয়ার জন্য নিরাপত্তার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। রুশ সামরিক ঘাঁটি, সীমান্ত নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক সন্ত্রাসবিরোধী সমন্বয়ই আলোচনার মূল বিষয়।


ইতালি — ১১ বার
ইতালির সঙ্গে রাশিয়ার ঐতিহ্যগত উষ্ণ রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। জ্বালানি সহযোগিতা, ভ্যাটিকানে বৈঠক, G8/G20 এবং বিভিন্ন এক্সপো—এসব অনুষ্ঠানেই পুতিনের ইতালি সফরগুলো কেন্দ্রীভূত।


ভারতে কতবার এসেছেন ভ্লাদিমির পুতিন?
২০০০ সাল থেকে ভ্লাদিমির পুতিন মোট পাঁচবার ভারত সফর করেছেন। বার্ষিক ভারত–রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলন পদ্ধতির অংশ হিসেবেই এই সফরগুলো হয়ে থাকে।
ডিসেম্বর ২০১০: গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর
ডিসেম্বর ২০১৪: ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ও দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সরবরাহে অগ্রগতি
ডিসেম্বর ২০২১: ইউক্রেন সংকটের আগের মুহূর্তে মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপসহ উচ্চস্তরের বৈঠক
এই সফরগুলো ভারত–রাশিয়া কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও সুদৃঢ় করেছে।