আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চল থেকে নির্বাচিত ভারতীয় বংশোদ্ভুত রুশ বিধায়ক অভয় সিং বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দিল্লি সফরকে ঘিরে ভারত যেন এস–৫০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অর্জনের জন্য উদ্যোগী হয়। বিহারের পাটনায় জন্ম নেওয়া সিং জানিয়েছেন, ভারতের হাতে থাকা এস–৪০০ ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী হলেও এস–৫০০ রাশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, যা এখনও কোনও দেশকে সরবরাহ করা হয়নি।


সিং বলেন, “এস–৪০০ খুব ভাল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, কিন্তু এস–৫০০ হচ্ছে একেবারে সর্বশেষ প্রযুক্তি। এটি এখন কেবল রাশিয়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে। রাশিয়া যদি সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়, ভারতই হবে প্রথম দেশ যে এই প্রযুক্তি পাবে—চীনও এখনও পায়নি। তাই ভারতের এটির জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত। এটি ভারতের জন্য বিশাল অর্জন হবে। সুখোই-৫৭ ও অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তি।”


পুতিনের এবারের সফর চার বছরের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে—এক সময় যখন ইউক্রেন যুদ্ধ, রাশিয়ার সস্তা অপরিশোধিত তেলের প্রতি ভারতের ঝুঁকে পড়া এবং সেই প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন মাত্রা তৈরি করেছে। ডিসেম্বরে ভারত–রাশিয়া শীর্ষ বৈঠকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যৌথ প্রযুক্তি উন্নয়ন, পারমাণবিক প্রকল্প, বাণিজ্য, কৃষি ও কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার মতো বহু ইস্যু আলোচনায় উঠে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


অভয় সিং বলেন, পুতিনের সফর “ভারতই শুধু নয়, রাশিয়াতেও ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।” তাঁর মতে, এই বৈঠক দুই দেশের মধ্যে অত্যন্ত মজবুত কৌশলগত সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। “চার বছর পর পুতিনের ভারত সফর নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, এই সফর দুই দেশের মধ্যে আরও ভালো কৌশলগত অংশীদারত্বের পথ প্রশস্ত করবে।


তিনি জানান, আলোচনায় উন্নত যুদ্ধবিমান সুখোই -৫৭ নিয়ে সহযোগিতা, পরবর্তী প্রজন্মের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, কৃষি, প্রযুক্তি আদান–প্রদান এবং ভারতে কাজ করতে আগ্রহী পেশাজীবীদের জন্য সম্ভাব্য কর্ম ভিসা–ফ্রেমওয়ার্ক অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এগুলো দুই পক্ষের জন্যই “পারস্পরিক লাভজনক” হবে বলে মনে করেন তিনি।


শ্রমিক সংকটের বিষয়েও সিং মন্তব্য করেন। তাঁর দাবি, পশ্চিমের দেশগুলি বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র—যেখানে ভারতীয়দের দীর্ঘমেয়াদি থাকা কঠিন করে তুলছে, সেখানে রাশিয়া দক্ষ ও অদক্ষ ভারতীয় কর্মীদের জন্য নতুন সুযোগ উন্মুক্ত করছে।


তিনি বলেন, “রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম ভূখণ্ডের দেশ, আর ভারত জনসংখ্যায় শীর্ষে। রাশিয়ায় বিভিন্ন শিল্পে প্রবেশ–স্তর থেকে দক্ষ টেকনিশিয়ান পর্যন্ত শ্রমিকের বড় ঘাটতি রয়েছে। সাদা–কলার থেকে ব্লু–কলার—সব ধরনের কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। ভারতীয়দের উচিত এই সুযোগ অনুসন্ধান করা।”
নিজের রাজনৈতিক যাত্রা প্রসঙ্গে অভয় সিং জানান, প্রেসিডেন্ট পুতিন তাকে অনুপ্রাণিত করলেও নির্বাচনে জিততে তিনি অবলম্বন করেছেন ভারতের ঘরোয়া গণ–যোগাযোগ কৌশলই। “ইউপি-বিহারের মতো জায়গায় স্কুলপড়ুয়া শিশুরাও রাজনীতি বোঝে। রাশিয়ায় রাজনীতিবিদরা সাধারণত জনগণের সঙ্গে বেশি মেশেন না। কিন্তু আমি প্রথমবার ২০১৭ সালে প্রার্থী হওয়ার সময় ভারতীয় ধাঁচে প্রচার করেছি—বেশি বেশি মানুষের সঙ্গে দেখা করেছি, সভা করেছি। এতে জনগণ আমাকে গ্রহণ করে এবং দুবার রেকর্ড ব্যবধানে জিতেছি।”


তিনি আরও বলেন, রাশিয়ায় ভারতীয়দের উপস্থিতি ধীরে ধীরে বাড়ছে, এবং তারা চাইলে সমাজসেবা ও রাজনীতিতে আরও এগিয়ে যেতে পারে। সিং আশাবাদী—পুতিনের এই সফর প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি ও শ্রম–গতিশীলতা—সব ক্ষেত্রেই ভারত–রাশিয়া সম্পর্ককে আরও গভীর করবে।