আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবারই দেশে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে নতুন আইন আনতে বিল পেশ করেছে কেন্দ্র। বিলে ১০০ দিনের কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ১২৫ দিন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। চমক রয়েছে নামেও। এত দিন এই প্রকল্পের নাম ছিল মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপাওয়ারমেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট, ২০০৫ (সংক্ষেপে মনরেগা)। বিলে এই প্রকল্পের নতুন নাম হয়েছে বিকশিত ভারত- গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ)। সংক্ষেপে ‘জিরামজি’। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে কটাক্ষ করেছেন ইউপিএ আমলের অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁর কটাক্ষ ‘মনরেগা’র নাম পরিবর্তনের অর্থ জাতির জনককে দ্বিতীয়বার হত্যা করা। 

২০০৪ সালের বাজেটে চিদম্বরমই এই প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন। বুধবার সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি-কে দেওয়া একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে জওহরলাল নেহরুকে অপদস্ত করার পর এখন তারা মহাত্মা গান্ধীকে নিশানা করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “মহাত্মা গান্ধীকে অবশ্যই ভারতীয় জনগণের স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে হবে। শিশুরা যেন মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে না জানে। মানুষের মুখে যেন মহাত্মা গান্ধীর নাম না থাকে। তারা দেশের স্মৃতি থেকে মহাত্মা গান্ধীকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে।”

নাম পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে উত্তর-দক্ষিণ হিন্দি-ইংরেজি বিভাজন নিয়েও চিদাম্বরম মন্তব্য করেছেন। ‘জিরামজি’ হল এমন অনেক বিলের মধ্যে একটি, যেটির নাম হিন্দিতে রাখা হয়েছে। সাধারণত প্রতিটি বিলের জন্য একটি হিন্দি এবং একটি ইংরেজি নাম রাখার ঐতিহ্য রয়েছে। কেন্দ্র সেই ঐতিহ্য লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ কেন্দ্রের।

সরকারের যুক্তি দিয়েছে, হিন্দির ব্যবহার ঔপনিবেশিক মানসিকতা দূর করার জন্য করা হচ্ছে। সেই যুক্তির বিরোধিতা করে চিদাম্বরম বলেন, “ভারতের সংবিধান ইংরেজিতে লেখা এবং ভারতের সংবিধান প্রতিশ্রুতি দেয় যে হিন্দি ও ইংরেজি ভারতের সরকারি ভাষা হবে।”

‘জিরামজি’ দেশজুড়ে বিতর্ক তীব্র হচ্ছে। বিজেপি ছাড়া প্রায় সমস্ত শ্রমিক সংগঠন, বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের একাংশের অভিযোগ, এই বিল ‘মনরেগা’র মৌলিক দর্শনকেই বদলে দিতে চলেছে। কংগ্রেস আমলে তৈরি এই আইনে গ্রামীণ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কাজের আইনি অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল। নতুন প্রস্তাবিত বিলে সেই অধিকারকে কেন্দ্রের আর্থিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের অধীন একটি প্রকল্পে রূপান্তর করা হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

নতুন বিলে বছরে কাজের দিন ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের নতুন কাঠামো কাজের দিন বৃদ্ধিকে কার্যত অর্থহীন করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সবচেয়ে প্রতীকী এবং রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হল প্রকল্পের নাম থেকে মহাত্মা গান্ধীর নাম বাদ দেওয়া। সরকারের এটিকে স্রেফ নাম বদল হিসেবে ব্যাখ্যা করলেও, বিরোধীদের দাবি এটি একটি আদর্শগত রূপান্তরের ইঙ্গিত।