আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওড়িশায় ভয়াবহ ঘটনা। এক তরুনী প্রকাশ্যে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়। বালাসোরে তরুণীর নিজের কলেজের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে। ওই ছাত্রীর ভাই সোমবার জানিয়েছেন যে তাঁর বোনের দেহের ৯৫% অংশ পুড়ে গিয়েছে। বোনের এই পরিণতির জন্য তিনি অধ্যক্ষ ও প্রশাসনকে দায়ী করেছেন। সম্প্রতি ঘটে যাওয় এই নির্মম ঘটনায় চমকে উঠেছে গোটা দেশ৷ 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ফকির মোহন অটোনোমাস কলেজে পড়তেন ওই তরুণী৷ জানা গিয়েছে তরুণী তাঁর বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন৷ এ বিষয়ে সর্বাধিক পদক্ষেপের জন্য কলেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে চান ওই তরুণী। আর এর জেরেই ঘটে গেল চূড়ান্ত ঘটনা৷ প্রতিবাদ হিসাবে আত্মদহনের চেষ্টা করেন নিজের কলেজের সামনেই। ঘটনার জেরে তরুণীর ভাই পুলিশকে খবর দেন। তিনি অভিযোগ তোলেন বিভাগীয় প্রধানের উপর৷ ঘটনার জেরে অভিযুক্ত সমীর কুমার সাহুকে তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ জুলাই প্রথম কলেজের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটির কাছে তরুণী অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানেই সাহুর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করা হয়। তরুণী অস্বীকৃতি জানালে তাঁর একাডেমিক রেকর্ড নষ্ট করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়। তরুণীর পরিবারের সদস্যের বক্তব্য, অভিযোগ দায়েরে করার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে এই অভিযোগ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ ফোন বন্ধ, তারপর থেকেই নিখোঁজ! দিল্লিতে উধাও ত্রিপুরার তরুণী, রহস্য ঘিরে চাঞ্চল্য

খবর অনুযায়ী, বর্তমানে তরুণীর চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন শরীরের ৯৫% পুড়ে গিয়েছে। তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন বলে জানান। এই সংক্রান্ত একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।  তরুণীর ভাই ১৫ দিন আগে তাঁর কলেজে গিয়েছিলেন। তিনি জানার ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে কলেজের ছাত্ররা প্রতিবাদ করছে। কলেজের সামনে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ জানাচ্ছে৷ কলেজ কর্তৃপক্ষ কেন কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না, তা প্রশ্ন ছোড়া হয়। নির্যাতিতার ভাই আরও জানান, তিনিও ছাত্রদের পাশাপাশি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। দাবি করেন ঘটনার পূর্ণ তদন্তের৷ 

তরুনীর ভাই তাঁর বোনের বর্তমান অবস্থার জন্য প্রশাসনকে দায়ি করে বলেন, 'অধ্যক্ষ বলেছেন আমার বোন তার মেয়ের মতো, তিনি মামলাটি খতিয়ে দেখবেন। অধ্যক্ষ, প্রশাসনিক স্তরের লোকেরা সকলেই এর জন্য দায়ি। যদি তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিত, তাহলে এই ঘটনা ঘটত না। আমরা দাবি করছি যে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হোক এবং সমস্ত দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক যাতে অন্য কারও বোনের সঙ্গে এমন ঘটনা না ঘটে।' 

ঘটনার দিন সেখানেই একটি ভিডিও তোলা হয়। হাড়হিম করা  ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে, তরুণী সম্পূর্ণরূপে আগুনে পুড়ে কলেজের করিডোর দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে। এক যুবক তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। পরে তাঁর শার্টে আগুন ধরে যাওয়ায় তিনি পিছু হটেন। আগুন নেভানোর চেষ্টা করা আরেকজনও গুরুতর আহত হন। জানা যায়, তাঁর শরীরেরও প্রায় ৭০% পুড়ে গিয়েছে।

বর্তমানে দুজনই ভুবনেশ্বরের এইমস-এ চিকিৎসাধীন। তরুণীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে খবর। মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি রবিবার হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। গোটা ঘটনার তদন্ত জারি রয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে৷