আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১ জানুয়ারি, ২০২৫-৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫। ৩৬৫ দিন। হাজার রকমের খবর। এই দেশ হামলা চালাল, ওই দেশ বোমা ফেলল। কোনও দেশ ভূ-রাজনৈতিক, কূটনীতির মারপ্যাঁচে প্যাঁচে ফেলল অন্য দেশকে। কেউ আবার স্রেফ প্রণয়প্যাঁচে ফেলে বিয়ে করে ফেললেন। জেলা, রাজ্য, দেশ, দুনিয়া, ৩৬৫ দিনে যে কত ঘটনা ঘটল! হিসেব রাখাই দায়। তবু, যেহেতু হিসেব রাখাই আমাদের কাজ, আর পড়াশোনার সাল-তারিখের মতোই, কাল পেরিয়ে আজ এলেই, অর্ধেক কথা ভুলে যাওয়া অনেকের অভ্যেস, তাই বছর শেষে, দেশ-দুনিয়ায় কী কী ঘটল, যা দেখে কোনও এক সকালে বা দুপুরে চমকে উঠেছিলেন আপনি, আজকাল ডট ইন, লাস্ট মিনিট রিভিশনের মতোই, মনে করিয়ে দিচ্ছে সেসব, একজনরে-
দেশের কথা ধরুন, কিংবা গোটা বিশ্বের, ২০২৫ দেখাল বিশ্ব অসহিষ্ণুতাকে। একেবারে ভিড় ট্রেনে কনুইয়ে গুঁতো লাগলে, যেমন ধড়ফড়িয়ে চেঁচিয়ে ওঠেন কেউ কেউ, ঠিক তেমনই রাষ্ট্রনেতারা আঙুল উঁচিয়ে ঝগড়া করলেন যেন। 'সবার দাদা' হতে চাইলেন ট্রাম্প। সেকেন্ড রাউন্ড ক্ষমতায় ফিরেই, একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়লেন শুল্কনীতি নিয়ে। তিনি নিজের মর্জির মালিক। ফলে, তাঁর দেশের বিচক্ষণ ব্যক্তিরাও সিঁদুরে মেঘ দেখলেন যখন, তখনও তিনি নির্বিকার রইলেন। মার্কিন মুলুকের লম্বা গভর্নমেন্ট শাট ডাউনও হল চলতি বছরে। আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট গোটা বছরজুড়েই যেন, নিজেকে বাকি সকল দেশের দাদা প্রমাণ করতে কসরত করলেন। ভারত-পাকিস্তান, রাশিয়া-ইউক্রেন, গাজা-প্যালেস্তাইন।
ভারত-পাকিস্তান প্রসঙ্গে আগে আসা যাক। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁও হামলা এবং তার প্রবল প্রত্যাঘাত হিসেবে ৭ মে মধ্যরাতে ভারতের অপারেশন সিঁদুর। দু'দেশের সংঘর্ষের আবহ দেখল গোটা বিশ্ব। ট্রাম্প দাবি করলেন, সংঘর্ষ থামিয়ে শান্তি এনেছেন তিনিই। অন্যদিকে চলতি বছরেই পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে আরও কিছুটা। যদিও সেখানে ট্রাম্প-এফেক্ট নেই। ২০২৫ জুড়ে আতঙ্ক, যুদ্ধ, হাহাকার জাগিয়ে রাখল রাশিয়া-ইউক্রেন, প্যালেস্তাইন-গাজা। সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করে অস্ফুটে, জোরে বললেন বটে, তবে রাষ্ট্রনেতাদের বুঝি কানে গেল না, 'তোরা যুদ্ধ করে করবি কী তা বল?' তাই, বিশ্বজুড়ে উঠল শান্তির দাবি, চলল মৃত্যু মিছিলও।
মিছিল প্রসঙ্গে বলা যাক, অল্প সময়ে আমেরিকার অলি-গলিতে মিছিল শুরু হয়ে গিয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। যদিও মিছিলের তেজ চলতি বছরে দেখিয়েছে নেপাল। একগুচ্ছ দাবি নিয়ে ক্ষোভ জমছিল। জেন জি'দের মনে অনুঘটকের কাজ করেছিল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যান। কয়েকদিনের জেন জি আন্দোলনে সরকার পড়ে যায় নেপালে। ক্ষমতায় বসেন, সুশীলা কারকি। অন্যদিকে জুলাই আন্দোলনের ক্ষত নিয়েই বাংলাদেশে ফের আগুন জ্বলেছে। খুন, মৃত্যু, ভাঙচুর। সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, মুজিব কন্যা শেখ হাসিনার ফাঁসির সাজা ঘোষণা হয়েছে। অপর এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া প্রয়াত হয়েছেন বছরশেষে। ২০২৫, আসলে বিশ্বকে সাধারণ চোখের আড়ালে বিরাট ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। চীন, রাশিয়া, ভারত ও ইরানের মতো দেশগুলির অবস্থান, নয়া সমীকরণে উদ্বেগ বেড়েছে।
উদ্বেগ বেড়েছে এই দেশের অভ্যন্তরেও। বিষয় এসআইআর। ২০২৫-এ গোটা দেশ, নামতা মুখস্থর মতো আওড়াল এসআইআর, এনুমারেশন ফর্ম, ড্রাফট লিস্ট, হিয়ারিং ইত্যাদি প্রভৃতি। তাতে রাজনীতি হল বিস্তর। অভিযোগ, পালটা সাফাই চলল এবং ২০২৫-এও যেটা বদলাল না, তা হল সাধারণের উপর, দুর্বলের উপর ক্ষমতাবানের হেনস্থা। কখনও ক্ষমতাবানের জায়গায় দাঁড়াল রাষ্ট্রযন্ত্র। সোনালি বিবিকে তাই অনায়াসে পাঠিয়ে দিতে পারল কাঁটাতারের ওপারে। কখনও ক্ষমতাবানের জায়গায় দাঁড়াল 'পুরুষ'। বছরভর সামনে এল, একের পর এক হেনস্থা, ধর্ষণ, খুনের নারকীয় ঘটনা। আহমেদাবাদের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার, মৃত্যুমিছিল এখনও দগদগে ক্ষত হয়ে রয়েছে। মাঝে প্রবল বর্ষণে উত্তরবঙ্গ থেকে হিমাচল, ক্ষতিগ্রস্ত হল। এক একটা রাজ্যে ভোট এল। রাজনীতির ময়দানে নতুন দল এল। ভোট চলেও গেল আবার। ২০২৬ এও ভোট এই বাংলায়। শীতেও তার উত্তেজনা স্পষ্ট, তীব্র, প্রবল। আগামী গ্রীষ্মে তাপ কতটা থাকতে পারে তা বোঝা যাচ্ছে বিলক্ষণ।
এসবের মাঝে বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম স্বস্তির কথা। ধর্ম, ভেদাভেদ, হিজাব, নারী, পুরুষ, হিন্দু, মুসলিমের মতো শব্দ বন্ধের মাঝে স্বস্তি এসেছে ২০২৫-এ। সোজা মহাকাশ থেকে। মহাকাশ থেকে খুশির ফোয়ারা এনেছেন শুভাংশু শুক্লা। 'মেয়েরা এত রাতে বাইরে থাকবে কেন?' শোনার সময়েও, ন'মাস মহাকাশে থেকে পৃথিবীতে ফিরেছেন সুনীতা উইলিয়ামস। মেয়েদের বিশ্বকাপ জিতেছেন ভারতের মেয়েরা। ২০২৫-এই, মহিলাদের দৃষ্টিহীন বিশ্বকাপ প্রথমবার হল, চ্যাম্পিয়ন ভারত। বাইশ গজ পেরিয়ে ২৪ নভেম্বর, কবাডির বিশ্বমঞ্চেও ভারতের মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন। শুধু হার-জিত নয়, মাঠে ময়দানের বাইরেও, ২০২৫-এ মাঠ দাপানো মেয়েরা মন জিতেছে বন্ধুত্ব দিয়ে। যেমন মন জিতেছে অনামী গাঁয়ের প্রাইমারি স্কুলের মেয়েটি, তাঁর স্যারকে জীবনের শেষকালে ওই গাঁয়েই ফিরতে বলে।
লেখাটা পড়তে পড়তেই, টুপ করে ২০২৫ থেকে ২০২৬-এ ঢুকে পড়লেন তো! কিংবা কেউ কেউ পড়লেন সোজা ২০২৬-এ ঢুকেই। যাক বাবা। একসঙ্গে আরও একটা বছর পেরিয়ে এলাম আমরা। হোল্ড অন। আগামী বছরেও হাজার হাজার জটিল বিষয় থাকবে। নিফটি, সেনসেক্স, সোনার দাম ওঠানামা করবে, দেশে দেশে সম্পর্কের সমীকরণ বদলাবে।
শুধু, আজকাল ডট ইন-এর সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক না বদলালেই হল। যাতে ২০২৬-এর শেষেও, এভাবেই একনজরে গোটা বছরে চোখ বুলিয়ে নিতে পারি। একসঙ্গে।
