আজকাল ওয়েবডেস্ক: ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্কের ভয়ঙ্কর পরিণতি। বিয়ের এক মাসের মধ্যে খুন এ যুবক। সেই হত্যাকাণ্ডের কিনারা কয়েক দিনের মধ্যেই করল পুলিশ। তদন্তে উঠে এসেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ঐশ্বর্য ও তিরুমল রাও জানিয়েছে, দু'জনে মিলে রাজা রঘুবংশী হত্যাকাণ্ডের মতোই তেজেস্বরকে খুন করতে চেয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল, তেজেস্বরের সঙ্গে ঐশ্বর্য ঘুরতে যাবেন বাইকে। মাঝপথেই তেজেস্বরের উপর হামলা হবে। সেখানে তাঁকে করা হবে। এমনটা পরিকল্পনা থাকলেও, পরে আরও আলোচনা করে প্ল্যান বদলে ফেলে তারা।
২৩ বছরের ঐশ্বর্য তেজেস্বরের বাইকে জিপিএস ডিভাইস লাগিয়ে দেয়। নিত্যদিন তাঁর যাতায়াতের সব খবর পেত সে। পাশাপাশি প্রতিবেশী যুবক মোহনকেও তেজেস্বরের উপর নজরদারি রাখতে বলেছিল। এই হত্যাকাণ্ডে আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃতদের তালিকায় ঐশ্বর্য, তিরুমল, ঐশ্বর্যের মা, তিরুমলের বাবা, প্রতিবেশী যুবক ও তিনজন ভাড়াটে খুনি।
অন্ধ্রপ্রদেশের নান্দিয়ালের পানিয়ামের খোলা মাঠ থেকে তেজেস্বরের পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর তিনদিন আগে তাঁর পরিবার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিল। হাতে 'আম্মা' লেখা ট্যাটু দেখে মৃতদেহ শনাক্ত করে পুলিশ। বিয়ের পর তেজেস্বরকে পাঁচবার খুনের চেষ্টা করা হয়েছিল। ষষ্ঠবার ঐশ্বর্যের পরিকল্পনামাফিক খুনের ঘটনাটি ঘটে।
তদন্ত শুরুর পর পুলিশ জানতে পারে, ঐশ্বর্যের মা সুজাতা একটি কোম্পানিতে সাফাইকর্মী হিসেবে কাজ করত। সেখানকার ম্যানেজার তিরুমল রাওয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২০১৬ সাল থেকে তিরুমল ও সুজাতার প্রেম শুরু হয়। মায়ের জায়গায় কাজ করতে যায় ঐশ্বর্য। ঠিক একইভাবে তিরুমলের সঙ্গে ঐশ্বর্যের প্রেম হয়। এদিকে ২০১৯ সালে তিরুমল বিয়ে করে। সেই বিয়ের পরেও স্ত্রীকে খুন করার পরিকল্পনা ছিল তার।
মেয়ের প্রেমের কাহিনি শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে সুজাতা। তড়িঘড়ি করে তেজেস্বরের সঙ্গে ঐশ্বর্যের বিয়ে ঠিক করে। আপত্তি সত্ত্বেও বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। বিয়ের দিন পালিয়ে গিয়েছিল ঐশ্বর্য। অবশেষে ফিরে এসে বিয়ের জন্য তেজেস্বরকে জোরাজুরি করে। ১৮ মে তাদের বিয়ে হয়।
তদন্তে আরও জানা যায়, বিয়ের দিনেও তিরুমলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল ঐশ্বর্য। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ২ হাজারবার ফোনে কথোপকথন হয় তাদের। একদিন ব্যাঙ্কেই তিন যুবক লোন চাইতে আসে। কিন্তু তেজেস্বর জানায়, লোন পাওয়া যাবে, যদি তার কথা মতো একটি কাজ করে দেয়। সেই সময়েই তেজেস্বরকে খুনের পরিকল্পনা জানায় সে।
কথামতো তেজেস্বরকে জমি দেখাতে গাড়িতে তুলেছিল তিন যুবক। এরপর গাড়ির মধ্যে তার গলা কেটে, কুপিয়ে খুন করে দেহ মাঠের মধ্যে ছুড়ে ফেলে তারা। ভিডিওকলে তিরুমলকে মৃতদেহটিও দেখিয়েছিল। এরপর খালে দেহটি ফেলে পালিয়ে যায়।
ঐশ্বর্য ও তিরুমল ভেবেছিল, তেজেস্বরের দেহ কেউ খুঁজে পাবেন না। তাই ২০ লক্ষ টাকা লোন নিয়ে লাদাখ পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। খুনের পরেও তেজেস্বরের বাড়িতে ছিল ঐশ্বর্য। ভেবেছিল, এতে কেউ আর সন্দেহ করবে না। কিন্তু তেজেস্বরের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তে নামে। এক সপ্তাহের মধ্যে খুনের কিনারা করে।
