আজকাল ওয়েবডেস্ক:  চেন্নাইয়ের কাছাকাছি কাট্টানকুলাথুরে অবস্থিত এসআরএম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বৃহস্পতিবার থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যৌন হয়রানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ পুলিশে জানানোর পরিবর্তে চুপ থাকতে নির্দেশ দেয় এবং দোষ চাপায় তার পোশাকের ওপর। ঘটনাটি ঘটে দিনের বেলায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা হোস্টেলের ভিতরে।

৩য় বর্ষের ওই ছাত্রী অভিযোগ জানানোর পর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তকে শনাক্ত করেন। অভিযুক্ত একজন আউটসোর্সড মেস কর্মী। কিন্তু হোস্টেল কর্তৃপক্ষ তাকে বারবার বিষয়টি প্রকাশ না করতে চাপ দেয়। ছাত্রীদের দাবি, এটি ফৌজদারি অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও পুলিশে অবিলম্বে জানানো হয়নি। হোস্টেলের ছাত্রীরা বলেন, ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব ছিল অবিলম্বে এফআইআর দায়ের করা।

ঘটনার পর হোস্টেলের ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন ছেলেদের হোস্টেলের ছাত্ররাও। অভিযোগ, প্রশাসন এই ঘটনাকে হালকা করে দেখছে এবং নানা অজুহাতে দোষ ছাত্রীদের ঘাড়ে চাপাচ্ছে।
প্রশাসনের একাংশ এমন মন্তব্য করেছে বলে অভিযোগ—
১) “এটা হয়েছে কারণ তুমি উত্তর ভারতের মেয়ে, দক্ষিণ ভারতের কলেজে পড়ছ।”
২) “এই হোস্টেলের মেয়েরা ধূমপান ও মদ্যপান করে, তাই নিরাপত্তা নিয়ে দাবি তোলার অধিকার নেই।”

আরও পড়ুন: ডেকে উঠল স্বামীর টিয়া! ধরিয়ে দিল গৃহকর্তার পরকীয়া

ছাত্রীদের অভিযোগ, কোনও  সাহায্যের ফোরাম নেই। বরং কর্তৃপক্ষ হুমকি দিয়ে চুপ করানোর চেষ্টা করেছে। বিক্ষোভ দমাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয় অস্ত্রধারী গুন্ডাদের ডেকে আনা হয়। হোস্টেলের দরজা বন্ধ করে ছাত্রীদের আটকে রাখা হয় যাতে তারা বিক্ষোভে যোগ দিতে না পারে। প্রশাসন সংবাদমাধ্যমে দাবি করে— “ছাত্রীরা পরীক্ষার সময়সূচি বাতিল করাতে চক্রান্ত করছে।”

অভিযুক্তকে শেষমেশ গ্রেপ্তার করা হলেও প্রাক্তন ছাত্র বৈভব আগরওয়াল বলেন, “এত দেরিতে কেন গ্রেপ্তার করা হল? যখন আমি পড়তাম, তেমনই নিরাপত্তাহীনতার ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন কখনোই ছাত্রদের নিরাপত্তায় গুরুত্ব দেয়নি।” প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর অভিযোগ, “ওয়ার্ডেনরা আমাদের দোষারোপ করেছে— আমরা নাকি ছোট পোশাক পরি তাই আমাদের দেখে কমনা জাগে, ধূমপান করি, মদ্যপান করি, তাই এমন ঘটনা ঘটে।” হোস্টেলের ভিতরে একটি মেয়ে ছোট প্যান্ট পরে থাকলেই যে নিরাপদ থাকবে, সেই মৌলিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও এখানে নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. এন সেতুরামন বলেন, “অভিযোগ পেয়ে আমরা ছাত্রী ও তার অভিভাবকদের আশ্বস্ত করেছি। কিন্তু ছাত্রীর বাবা লিখিত অভিযোগ করতে চাননি। পরে রাত ১০টার দিকে অভিযোগ দায়ের করি এবং ভোর ৪টায় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযুক্ত আউটসোর্সড কর্মী হওয়ায় তার খোঁজ পাওয়া কঠিন ছিল। এখন থেকে নিয়ম আরও কঠোর করা হবে।”

স্টুডেন্ট কাউন্সিলের এক সদস্য জানান, “ছাত্রী লিফটে ওঠার পর অভিযুক্ত হস্তমৈথুন শুরু করে এবং দরজা খুলতেই পালিয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজে অভিযুক্তের ছবি ধরা পড়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে খবর পৌঁছাতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে।”

যদিও অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়েছে, ছাত্রীরা বলছেন— নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কোথায়? হোস্টেলের ভিতর দিনের বেলায় এমন ঘটনা ঘটলে, সন্ধ্যার পর তারা কিভাবে নিরাপদ বোধ করবেন? প্রশাসনের ভূমিকা, দেরিতে পদক্ষেপ, এবং ভুক্তভোগীকে দোষারোপ— সবকিছু মিলিয়ে ক্যাম্পাসে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।