আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বে প্রায় ৪ কোটি মানুষকে প্রভাবিত করা মারাত্মক রোগ এইচআইভি (HIV) এর চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচনের ইঙ্গিত মিলেছে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান ফ্রান্সিসকোর (UC San Francisco) এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, পরীক্ষামূলক ইমিউনোথেরাপির সমন্বিত চিকিৎসা এইচআইভি আক্রান্তদের দীর্ঘমেয়াদি অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (ART) ছাড়াই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।
ডিসেম্বর ১—বিশ্ব এইডস দিবসে—Nature জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফল বিজ্ঞানী মহলে আশাবাদ জাগিয়েছে। গবেষণায় অংশ নেওয়া ১০ জন রোগীর মধ্যে ৭ জন বহু মাস ধরে ART বন্ধ রাখার পরও ভাইরাসের মাত্রা কম রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
গবেষণার সহ-প্রধান লেখক ড. স্টিভেন ডিক্স বলেন, “অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগের মধ্যে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা অভূতপূর্ব। আমরা এখন সেই বাস্তব অগ্রগতির কাছে পৌঁছাচ্ছি যেখানে মানুষ সারা জীবন ওষুধের উপর নির্ভর না করেও সুস্থ থাকতে পারবে।”
গবেষণাটি পরিচালনা সম্ভব হয়েছে আমফার (amfAR)-এর ৫ বছর মেয়াদি ২ কোটি ডলারের গবেষণা অনুদান এবং মার্কিন জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (NIH)-এর সহায়তায়।
কীভাবে কাজ করেছে নতুন চিকিৎসা?
১৯৯০–এর দশকে ART চালু হওয়ার পর এইচআইভি একটি মরণব্যাধি থেকে দীর্ঘস্থায়ী নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগে পরিণত হয়। কিন্তু ART ভাইরাসকে পুরোপুরি নির্মূল করে না—ওষুধ বন্ধ করলেই ভাইরাস আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে।
নতুন গবেষণায় তিন ধাপের ইমিউনোথেরাপি ব্যবহার করা হয়:
১. থেরাপিউটিক ভ্যাকসিন: রোগীর টি-সেলকে সুপ্ত ভাইরাস শনাক্ত ও আক্রমণ করতে সক্রিয় করে।
২. অ্যান্টিবডি ককটেল: শরীরে উপস্থিত ভাইরাসের পরিমাণ কমায়।
৩. চূড়ান্ত অ্যান্টিবডি ডোজ: ART বন্ধের আগে শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা স্থিতিশীল করে।
সাধারণত ART বন্ধ করলে দুই সপ্তাহের মধ্যেই ভাইরাস দ্রুত বেড়ে যায়। কিন্তু এই পরীক্ষায় মাত্র তিনজনের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে। ছয়জন রোগীর ভাইরাসের মাত্রা কম থাকে এবং একজনের শরীরে ভাইরাস একেবারেই ফিরে আসেনি।
গবেষক ড. র্যাচেল রুটিশাউজার জানান, যারা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছেন, তাদের টি-সেলগুলো অস্বাভাবিকভাবে সক্রিয় হয়ে ভাইরাসকে দ্রুত প্রতিরোধ করতে পেরেছে। তার ভাষায়, “এটা যেন শিকারির অপেক্ষায় থাকা বিড়ালের মতো—সুযোগ মিলতেই ভাইরাসের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।”
গবেষকরা সতর্ক করে বলেন, পরীক্ষাটি ছোট পরিসরে হয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ ছিল না। তাই আরও বড় ও দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা প্রয়োজন।
গবেষণার প্রধান লেখক ড. মাইকেল পেলুসো বলেন,“এটাই চূড়ান্ত সমাধান নয়। তবে এই ফলাফল প্রমাণ করে—অনেক কঠিন বলে বিবেচিত সমস্যাতেও বাস্তব অগ্রগতি সম্ভব।”
যদি ভবিষ্যৎ গবেষণা সফল হয়, তাহলে ভালো প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন এইচআইভি রোগীদের হয়তো আর জীবনভর ওষুধ সেবন করতে হবে না—যা বিশ্ব জনস্বাস্থ্যে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এই গবেষণা এইচআইভি নিরাময়ের পথে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা ভেঙে নতুন আশা দেখালো।
