আজকাল ওয়েবডেস্ক:  ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর পরিবর্তে কাগজে ব্যালট ফিরিয়ে আনার দাবি জানালেন ভারত রাষ্ট্র সমিতি (BRS)-র কার্যনির্বাহী সভাপতি কে টি রামা রাও (KTR)। মঙ্গলবার তিনি নির্বাচন কমিশনের (ECI) সঙ্গে বৈঠকে এই দাবি তোলেন। তিনি বলেন, "আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছি যেন আগামী বিহার বিধানসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০২৬ সালের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত সমস্ত নির্বাচনে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ চালু করা হয়।"

ইভিএমে জনআস্থার সংকট, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের দৃষ্টান্ত

কেটিআর যুক্তি দেন, “আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ইতালির মতো উন্নত দেশগুলো ইতিমধ্যেই জনআস্থার অভাবে ইভিএম ত্যাগ করেছে। ভারতে এখন প্রায় ১০০ কোটি ভোটার। এমন একটি গণতান্ত্রিক দেশে ভোটের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও বিশ্বাস অত্যন্ত জরুরি।” তিনি বলেন, “যদি মানুষ বিশ্বাস হারায় যে তাঁদের ভোট প্রকৃত প্রার্থীর কাছে পৌঁছচ্ছে না, তাহলে তা গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। নির্বাচন কমিশনকে এসব বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।”

আরও পড়ুন: হিন্দুদের মধ্যে শিশুমৃত্যু হার কেন বেশি? ১০ বছর আগের যুক্তি আবার আলোচনায়, এবার প্রেক্ষাপটে এলন মাস্ক ও 'After the Spike'

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়বদ্ধতা

বৈঠকে কেটিআর আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলিকে নির্বাচনী প্রচারে ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিলে তার জন্য দায়ী করা উচিত। তিনি উদাহরণস্বরূপ বলেন, “টেলেঙ্গানায় কংগ্রেস ৪২০টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যার মধ্যে ছিল গ্যারান্টি কার্ড ও মন্দিরে শপথ গ্রহণ—কিন্তু বাস্তবে কিছুই রূপায়িত হয়নি।” তিনি দাবি করেন, ভুয়ো প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের উচিত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। “লোকজন যদি রাজনীতিকদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ঠকেন, তা গণতন্ত্রের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে,” তিনি মন্তব্য করেন।

বিহারে ৬৫ লাখ ভোটারের নাম বাদ: স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন

বিহারের ভোটার তালিকা থেকে প্রায় ৬৫ লাখ নাম সরিয়ে ফেলার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন কেটিআর। তিনি বলেন, “মৃত, স্থানান্তরিত ও নিষ্ক্রিয় ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলেও তা স্বচ্ছভাবে হয়নি। এতে রাজনৈতিক পক্ষপাতের সন্দেহ থেকে যায়।” এই প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় বুথ, গ্রাম ও মণ্ডল স্তরে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে যুক্ত করা উচিত।”

প্রতীক বিভ্রান্তি নিয়ে অভিযোগ

বৈঠকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তুলেছেন কেটিআর—তা হল নির্বাচন চিহ্ন (symbol) নিয়ে বিভ্রান্তি। তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনে বি আর এস দলের গাড়ির প্রতীকটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ প্রতীক যেমন রোড রোলার, জাহাজ ও চাপাটি মেকার ব্যবহার করে ভুয়ো বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। “আমরা অন্তত ১৪টি আসনে ৬০০০ ভোটের কম ব্যবধানে হেরেছি, যার পেছনে এই বিভ্রান্তিকর প্রতীকের বড় ভূমিকা রয়েছে,” কেটিআর দাবি করেন।

দক্ষিণ ভারতে আরও পরামর্শমূলক বৈঠকের দাবি

তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান, দক্ষিণ ভারতে বিশেষ করে হায়দরাবাদে নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা সভার আয়োজন করুক কমিশন। “যদি বিহারে যেসব সমস্যা দেখা গেছে, তা যদি এখনই সমাধান না করা হয়, তাহলে শীঘ্রই সেগুলি টেলেঙ্গানাতেও দেখা দেবে,” তিনি সতর্ক করেন।

গণতন্ত্র রক্ষায় সক্রিয় পদক্ষেপের আহ্বান

বৈঠকের শেষে কেটিআর বলেন, “আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন আমাদের সুপারিশগুলো গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করবে এবং প্রকৃত গণতান্ত্রিক চেতনা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।” BRS নেতা কেটিআরের এই উদ্যোগকে ঘিরে রাজনীতির ময়দানে নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইভিএম নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে যে সন্দেহ জমে আছে, তা একেবারে অমূলক নয়। তবে ব্যালটে ফেরা কতটা বাস্তবসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কাগজে ব্যালট ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব নতুন নয়, তবে KTR-এর মতো মুখ্যমন্ত্রীপুত্র ও জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বসম্পন্ন নেতার পক্ষ থেকে এভাবে নির্বাচন কমিশনের দোরগোড়ায় পৌঁছানো নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতের গণতন্ত্রে স্বচ্ছতা ও আস্থার প্রশ্নে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় বলে মনে করা হচ্ছে।