আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি কেরালায় এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে৷ খবর অনুযায়ী, এক কেরালার বাসিন্দা গুরুগ্রামের সেক্টর ৪০-এ ঘটে যাওয়া একটি ইসলামোফোবিয়ার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চরম আলোড়ন তুলেছেন। তিনি রেডিটে-এ লেখেন যে এই ঘটনাটি গভীর রাতে ঘটে। ঘটনার দিন যখন তিনি একটি র‍্যাপিডো অটো বুক করেন, সেই সময়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন ব্যক্তি৷ আর এই ঘটনা ঘিরেই তোলপাড়। 

জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন ড্রাইভার আসার পরই আবাসিক এলাকার একজন বাসিন্দা তাঁকে থামিয়ে দেন। এরপর তাঁকে নানারকম প্রশ্নে জর্জরিত করতে শুরু করেন। ওই বাসিন্দা ড্রাইভারের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে জানতে চান, তিনি কেন এখানে এসেছেন। এমনকী তিনি ড্রাইভারের ফোনও দেখতে চান।

ঘটনার প্রেক্ষিতে ড্রাইভার বারবার বল চলেন যে এটি একটি বুক করা রাইড, কিন্তু ওই ব্যক্তি কিছুতেই তা শুনতে চাইছিলেন না। রেডিট- এ এক ব্যবহারকারী লেখেন, 'ভাই, সে তো বারবার বলছিল এটা একটা রাইড, কিন্তু এই পাগলটা থামতেই চায় না।'

এরপর ধীরে ধীরে র‍্যাপিডো বুক করা ব্যক্তি নিজেই হস্তক্ষেপ করেন এবং ওই বাসিন্দাকে বলেন, 'এটা আমার রাইড, আমি এখানে থাকি। আপনি কে ঠিক করার জন্য যে কে আসতে পারবে আর কে নয়? কোথায় লেখা আছে যে মুসলিমরা ঢুকতে পারবে না?'

তিনি আরও যোগ করেন যে র‍্যাপিডোর সব রাইড ট্র্যাক করা হয়, তাই এমন সন্দেহ করার কোনও মানে হয় না। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, 'ভাই, এটা র‍্যাপিডো। সবকিছু ট্র্যাক হয়। আমি এই ড্রাইভারের চেয়ে বেশি ভয় পাই আপনাদের মতো নাক গলানো লোকদের।'

আরও পড়ুনঃ হারিয়ে যাওয়া বোনের সঙ্গেই বিয়ের পিঁড়িতে ভাই! নিজের মেয়েকে চিনতে পেরে এ কী করলেন মা!

এই ঘটনায় তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে বলেন, যদি আমাদের চারিপাশে সমাজের মানসিকতাও এমন হয়, তাহলে তিনি হয়তো স্থান পরিবর্তন করতেই বাধ্য হবেন।
তিনি তাঁর পোস্টে যোগ করেন, 'আমি কেরালার মানুষ। আজ পর্যন্ত আমি জীবনে কখনও এরকম কিছু দেখিনি। মানুষ বলে ভারতেই অসহিষ্ণুতা বাড়ছে, আমি ভাবতাম হয়তো একটু বাড়িয়ে বলা হয়। না ভাই, একদম সত্যি।'

তিনি এই ঘটনাকে 'জঘন্য' বলে আখ্যা দিয়ে লেখেন, 'ভাবুন তো, প্রতিদিন শুধু ধর্মের জন্য একজন মানুষের কীভাবে প্রমাণ দিতে হয় যে তিনি কে, কেন এসেছেন, এবং তাঁর এখানে থাকার অধিকার আছে কি না। এই সমাজে বেঁচে থাকা কতটা কঠিন হতে পারে।'

সম্প্রতি এই পোস্ট ঘিরে  রেডিট-এ অনেক ব্যবহারকারী প্রতিক্রিয়া জানান। অনেকে কেরালার ওই ব্যক্তিকে সমর্থন করেন এবং এমন বৈষম্যের তীব্র নিন্দা জানান।

একজন মন্তব্য করে বলেন, 'গুরুগ্রাম হলো ভারতের সবচেয়ে খারাপ জায়গাগুলোর একটি। আমি সেখানে থেকেছি, একেবারে নরক সমান।'

ঘটনার জেরে আরেকজন লেখেন, 'বেঙ্গালুরু আর গুরুগ্রামের পস এলাকায় আমাকে বছরের পর বছর ভাড়া দিতে অস্বীকার করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই বৈষম্য এবং অন্যান্য কারণে আমাকে আমেরিকায় চলে যেতে হয়েছে।'

আরও পড়ুনঃ ছয় বছরের শিশুকে কামড়ে রক্তাক্ত করে ফেলল পথকুকুর, ঘটনা ঘিরে হুলুস্থুল দেশজুড়ে ...

আবার একজন কেরালাবাসী মন্তব্য করেন, 'আপনার কি এটা উত্তর ভারতে প্রথমবার? একবার এক ব্রোকার আমাকে সরাসরি ধর্ম জিজ্ঞেস করেছিল। আমি রেগে গেলে সে সঙ্গে সঙ্গে বলে, ‘চিন্তা করবেন না, মুসলিম না হলেই হলো।’'

বর্তমানে এই পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। ঘটনার জেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতের বিভিন্ন শহরগুলোতে বাড়তে থাকা এহেন অসহিষ্ণুতা ও বৈষম্য নিয়ে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।