আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশজুড়ে বিমানবন্দরে তীব্র বিশৃঙ্খলা। লাগেজের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, খাবার বা পানীয়ের কোনও ব্যবস্থা নেই, অন্যদিকে ইন্ডিগোর কাউন্টারগুলো ফাঁকা।

এভাবেই টানা চতুর্থ দিন অপারেশনাল সমস্যায় জর্জরিত ভারতের অন্যতম বৃহৎ বিমান সংস্থা ইন্ডিগো। এর জেরে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৬০০টিরও বেশি বিমান বাতিল হয়েছে।

যার প্রভাব পড়েছে দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, গোয়া, কলকাতা সহ দেশের প্রায় সব বড় বিমানবন্দরে। দিল্লি বিমানবন্দরের চিত্র আরও ভয়াবহ।

সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিমানবন্দরের মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে হাজার হাজার স্যুটকেস। বহু যাত্রী মেঝেতে শুয়ে রাত কাটিয়েছেন।

কেউ ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন, কেউ স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এক যাত্রীর কথায়, ‘১২ ঘণ্টা হয়ে গেল। প্রতি ঘণ্টায় বলা হচ্ছে এক ঘণ্টা দেরি, দু’ঘণ্টা দেরি। বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলাম, কিন্তু লাগেজটাই পাইনি। কোনও পরিষ্কার তথ্য দিচ্ছে না। এখনকার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ এয়ারলাইন। বুঝতে পারছি না নতুন যাত্রী নিলেও লাগেজ কোথায় জমা করছে!’

আরেক যাত্রীর কথায়, বারবার ফ্লাইট পিছোচ্ছে। কোনও পরিষ্কার বক্তব্য নেই।’ অন্য এক যাত্রী বলেন, ‘১৪ ঘণ্টা ধরে বসে আছি। কোনও খাবারের কুপন নেই, কোনও সহায়তা নেই। কানেক্টিং ফ্লাইটও বাতিল হয়ে গেছে। মানুষ চেঁচাচ্ছে, কিন্তু কর্মীরা কোনও নির্দেশ দিতে পারছে না। জরুরি পরিস্থিতি সামলানোর প্রশিক্ষণ নেই তাদের।’

শুধু দিল্লি নয়, একই পরিস্থিতি দেখা গেছে হায়দরাবাদ বিমানবন্দরেও। খাবার বা যাত্রীদের আসনের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ যাত্রীদের একটি দল এক এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট আটকে দেন। গোয়া বিমানবন্দরেও উত্তেজনা ছড়ায়।

ইন্ডিগো কর্মীদের সঙ্গে যাত্রীদের তীব্র বাকবিতণ্ডার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মোতায়েন করা হয় বহু পুলিশকর্মী।

মুম্বইয়ে ১১৮টি, বেঙ্গালুরুতে ১০০টি, হায়দরাবাদে ৭৫টি, কলকাতায় ৩৫টি, চেন্নাইয়ে ২৬টি এবং গোয়ায় ১১টি ফ্লাইট বাতিল হয় বলে জানিয়েছে পিটিআই। অন্যান্য বিমানবন্দরও রেহাই পায়নি।

ইন্ডিগো জানিয়েছে, নতুন নিয়মে রাতের ডিউটির সময়সীমা বদলের কারণে ক্রু নিয়োগ করার হিসেবে ভুল হয়েছিল। ফলে অপারেশন ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে বড় ফাঁক থেকে যায়।

সেই সঙ্গে শীতকালীন কুয়াশা এবং বিমানবন্দরগুলির ভিড় পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। জানা গিয়েছে, ইন্ডিগোর তরফে গোটা ঘটনাটি কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রী এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশনকে জানানো হয়েছে।

তবে এর পাশাপাশি সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে আগামী কয়েকদিনে এই সমস্যা অব্যাহত থাকবে। আগামী দু-তিন দিন ফ্লাইট বাতিল অব্যাহত থাকতে পারে।

৮ ডিসেম্বর থেকে ইন্ডিগো ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে অপারেশন স্থিতিশীল করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সংস্থার সিইও পিটার এলবার্স কর্মীদের উদ্দেশে বার্তায় জানিয়েছেন, স্বাভাবিক পরিষেবা ফিরিয়ে আনা ‘সহজ লক্ষ্য নয়’।

বৃহস্পতিবার রাতে সংস্থাটি আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চেয়ে জানিয়েছে, গত দু’দিনে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটেছে নেটওয়ার্ক ও পরিষেবায়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। মন্ত্রক, ডি জি সি এ, বিসিএএস, এএআই এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমাদের দল সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।’