আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঝমঝমিয়ে ছুটছে ট্রেন। দ্রুত গতিতে। মাঝরাস্তায় ট্রেনেই উঠল প্রসব যন্ত্রণা। শেষপর্যন্ত সেখানেই সন্তানের জন্ম দিলেন মা। গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হল নিশ্চিন্তেই। কীভাবে? 

সহায়তা করতে এগিয়ে এলেন রেলকর্মীরা। জানা গিয়েছে, অসমের বাসিন্দা বছর ২১-এর শাহানা বানু নামে এক মহিলা তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বেঙ্গালুরু থেকে গুয়াহাটি এক্সপ্রেসে করে অসমে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি গর্ভবতী ছিলেন।যাত্রা শুরুর সময় সবকিছু ঠিক থাকলেও, চিন্তা বাড়ে মাঝরাস্তায়। শুক্রবার সকালে চলন্ত ট্রেনের মধ্যেই তাঁর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় বলে জানা গিয়েছে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে। অথচ মাঝরাস্তায় ট্রেনের মাঝে কী করবেন, কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিলেন না পরিবারের সদস্যরা। সময় যত এগোতে থাকে, বাড়তে থাকে যন্ত্রণা। ব্যথায় ছটফট করতে থাকেন গর্ভবতী ওই যুবতী। উপায়ন্তর না দেখে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ট্রেনে কর্তব্যরত আরপিএফ কর্মীদের অনুরোধ করেন, বলেন, কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। 

কিন্তু ট্রেন সেইসময় পূর্ণ গতিতে ছুটে চলেছে। আবার হাতে সময়ও কম। এগিয়ে আসেন আশেপাশে থাকা ওই ট্রেনের অন্য মহিলারা। শেষপর্যন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের মধ্যেই ফুটফুটে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন শাহানা বানু। ইতিমধ্যেই আরপিএফ-এর থেকে খবর পেয়ে ততক্ষণে ওই কামরায় চলে আসেন ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক। তাঁদের তৎপরতায় ট্রেনটিকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদা প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন রেলের অন্যান্য আধিকারিকরা। দ্রুত নেওয়া হয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। 

আরও পড়ুন: রাতের অন্ধকারে মাঝরাস্তায় পুলিশের গাড়ি অকেজো হতেই যা ঘটে গেল মুহূর্তে, রক্তে ভেসে গেল চারদিক

রেলকর্মীরা সদ্যজাত শিশু এবং তার মা'কে নিয়ে সাবধানে ট্রেনের কামরা থেকে বেরিয়ে আসেন। প্ল্যাটফর্মেই প্রস্তুত রাখা হয়েছিল স্ট্রেচার। তৈরি ছিল প্ল্যাটফর্মের পাশে থাকা অ্যাম্বুল্যান্স। রেলকর্মী, ট্রেনে সফররত অন্যান্য যাত্রী এবং স্থানীয়দের সহায়তায় নবজাতক কন্যাসন্তান ও মা'কে নিয়ে যাওয়া হয় বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি করা হয় তাদের। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত সুস্থ আছেন মা ও মেয়ে। 

 

ঘটনার কথা জানাজানি হতেই সকলেই খুশি হয়েছেন। রেলকর্মীদের এই ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রসূতি মায়ের পরিজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয়দের কথায় যেভাবে রেলকর্মীরা ওই মায়ের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। কারণ ওই পরিবারটি সত্যি সত্যি বড় বিপদের মুখে পড়ে গিয়েছিল। ট্রেনের মধ্যে রেলকর্মীদের পাশাপাশি গোটা রেল দপ্তর থেকেই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সহযোগিতার হাত।

 যাতে কিছু সমস্যা না হয় সেজন্য ঘটনার কথা রেল কর্তৃপক্ষ জানার পরেই ট্রেনটি বেলদা স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। দ্রুততর সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় মা ও তাঁর সদ্যজাত কন্যাসন্তানকে স্থানীয় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। যদিও হাসপাতালের তরফেও যথেষ্ট সহযোগিতা করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। সেখানকার চিকিৎসকরা আগে থেকে বিষয়টি জানতে পারার জন্য প্রস্তুতই ছিলেন। ফলে মা ও শিশু পৌঁছনোর পর দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তাঁরা। ফলে সমান প্রশংসা তাঁদেরও প্রাপ্য বলে মনে করেন স্থানীয়রা।