আজকাল ওয়েবডেস্ক: গ্রেল্যাবস এআই-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও অমন গোয়েল এবং তাঁর স্ত্রী হর্ষিতা শ্রীবাস্তব তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন। দু’জনেই আইআইটি-স্নাতক এবং দু’জনই ব্যস্ত কর্মজীবনের মানুষ। ফলে বাড়ির খুঁটিনাটি কাজ—রান্না, পরিষ্কার, মেরামত, বিল দেওয়া, বাজার করা—সব মিলিয়ে তাদের পক্ষে সামলানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। তাই তাঁরা মাসে ১ লক্ষ টাকা বেতনে একজন ‘হোম ম্যানেজার’ নিয়োগ করেছেন। আর এই সিদ্ধান্তই নেটমাধ্যমে প্রশংসা যেমন পেয়েছে, তেমনি কটূক্তিরও শিকার হয়েছে।


বাড়ির সমস্ত দায়িত্ব হোম ম্যানেজারের হাতে

অমন গোয়েল একটি পোস্টে জানান, তাঁদের হোম ম্যানেজার শুধু পরিচারিকা নন, বরং একজন দক্ষ পেশাজীবী, যিনি আগে একটি হোটেল চেইনের অপারেশনস হেড হিসেবে কাজ করেছেন। এখন তিনি গোয়েল দম্পতির পরিবারে—

খাদ্য তালিকা তৈরি

বাজার করা

ঘর পরিষ্কার

কাপড়ের ব্যবস্থাপনা

মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ

বাড়ির সকল হেল্পার ও সার্ভিস প্রোভাইডারের সমন্বয়

—সব কিছুই সামলান।

গোয়েল লিখেছেন, “আমাদের সময় সীমিত। আমরা চাই আমাদের সমস্ত শক্তি গ্রেল্যাবস গড়ার কাজে দিতে। তাই বাড়ির দায়িত্ব একজন পেশাদারকে দেওয়া হয়েছে।”


পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের কথা ভেবেও সিদ্ধান্ত

অমন গোয়েল জানান, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী হর্ষিতা দু’জনেই কাজে ব্যস্ত। ফলে তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মায়ের উপর বাড়ির দায়িত্ব চাপানো তাঁরা সঠিক মনে করেননি। তিনি বলেন, “বাড়ি চালানো একটা বড় কাজ। আমরা চাইনি আমাদের বাবা-মা এই সব চাপ নিন। তাই সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক।”

১ লাখ টাকার বেতন—সমালোচনার ঝড়

গোয়েল জানান, হোম ম্যানেজারকে মাসে ₹১,০০,০০০ এবং বছরে ₹১২ লাখ বেতন দেওয়া হয়। এই তথ্য প্রকাশ করার পরই শুরু হয় তীব্র ট্রোলিং ও সমালোচনা। অনেকেই মন্তব্য করেছেন—

তিনি অযথা টাকার অপচয় করছেন,

বিনিয়োগকারীর অর্থ নষ্ট করছেন,

বিলাসিতার দম্ভ দেখাচ্ছেন।


একজন তো লিখেছেন, “আপনার জীবন কোন কোম্পানির চেয়ে বড়। টাকা রোজগার করতে গিয়ে জীবন নষ্ট করবেন না।” সমালোচনার উত্তরে অমন গোয়েল স্পষ্টভাবে জানান, এই বেতন কোম্পানির বা বিনিয়োগকারীর টাকা দিয়ে নয়, বরং তাঁর ব্যক্তিগত আয় থেকে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “আমি আমার আগের স্টার্টআপ কোটি ডলারে বিক্রি করেছি। এই টাকা আমার ব্যক্তিগত। তাই কারও বলার কিছু নেই।”

যদিও অনেকেই তাঁকে ট্রোল করেছেন, বিপরীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ তাঁর সিদ্ধান্তের প্রশংসাও করেছেন। তাঁদের মতে—

একজন দক্ষ গৃহব্যবস্থাপক নিয়োগ করা নতুন নয়

কাজের মর্যাদা বোঝাতে ভালো বেতন দেওয়া প্রশংসনীয়

দুই কর্মজীবী মানুষের সময় বাঁচানোই বুদ্ধিমানের কাজ


একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, “তিনি একজন দক্ষ হোম ম্যানেজারকে বাজারদরের চেয়ে বেশি বেতন দিয়ে নিয়োগ করেছেন, যাতে বাবা-মায়ের যত্ন ভালোভাবে হয় এবং তাঁরা কাজে মন দিতে পারেন। অথচ নেহাতই ট্রোলাররা তাঁকে জ্ঞান দিতে ব্যস্ত।”

সমাজে নতুন ধরনের ‘গৃহব্যবস্থাপনা’ সংস্কৃতি? শহুরে কর্মজীবী, উচ্চ-আয়ের তরুণ দম্পতিদের মধ্যে ‘হোম ম্যানেজার’ বা ‘ডোমেস্টিক ম্যানেজার’ নিয়োগের প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে—

সময় বাঁচে

বাড়ির কাজের মান বাড়ে

পেশাদারি ব্যবস্থাপনা আসে

বয়স্ক সদস্যদের উপর চাপ কমে

গোয়েল দম্পতির ঘটনা সেই আলোচনাকেই আরও সামনে নিয়ে এসেছে। অমন গোয়েল এবং তাঁর স্ত্রীর সিদ্ধান্ত যেমন সামাজিক মাধ্যমের এক অংশের কাছে বিলাসিতা বলে মনে হয়েছে, তেমনি অনেকের কাছে এটি আধুনিক শহুরে জীবনযাপনের বাস্তব ও যুক্তিসংগত চিত্র। ব্যক্তিগত জীবনের সিদ্ধান্তে মানুষের স্বাধীনতা বনাম সামাজিক ‘মতামত’-এর সংঘাত—আধুনিক সময়ের এই চেনা আলোচনাই আবারও সামনে এল।