আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরে আইনজীবীদের প্রতিবাদের মধ্যে নিজেই কান ধরে ওঠবস করলেন এক আইএএস অফিসার। ওই দৃশ্যের ভিডিও ভাইরাল হতেই প্রশাসনিক ও আইনি মহলে তীব্র আলোড়ন তৈরি হয়েছে। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ২০২২ ব্যাচের আইএএস রিঙ্কু সিং রাহী, যিনি সদ্যই পুওয়াইয়ান তহশিলের সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট (এসডিএম) পদে যোগ দিয়েছিলেন। ঘটনার সূত্রপাত ২৯ জুলাই, যখন তহশিল পরিদর্শনের সময় এসডিএম রাহী একজন ক্লার্ককে (মুন্সি) প্রকাশ্যে প্রস্রাব করতে দেখেন। সেই ‘অপরাধে’ তিনি নাকি ক্লার্ককে কান ধরে ওঠবস করতে বলেন। এই ঘটনা দেখে ক্ষুব্ধ হন আইনজীবীরা, যারা আগে থেকেই তহশিল চত্বরের শৌচাগারের দুরবস্থা নিয়ে আন্দোলন করছিলেন। তাঁদের বক্তব্য— শৌচাগার ব্যবহারের অযোগ্য হওয়ায় অনেক কর্মী বাধ্য হয়েই খোলা জায়গায় প্রস্রাব করেন।

আরও পড়ুন: ভারতের কৃষি রপ্তানি: ১০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য কতটা বাস্তবসম্মত?

আইনজীবীদের ক্ষোভ প্রশমনে এসডিএম রাহী নিজেই সামনে এসে বলেন, প্রতিবাদ করতে সমস্যা নেই, কিন্তু লাউডস্পিকারের আওয়াজ যেন অফিস কক্ষে না পৌঁছয়। তখনই আইনজীবীরা তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন— "শৌচাগার যদি এত নোংরা হয়, তবে কর্মচারীরা কোথায় যাবেন?" এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই এক অনন্য পদক্ষেপ নেন রাহী। তিনি নিজেই মঞ্চে উঠে কানে ধরে পাঁচবার ওঠবস করেন এবং বলেন, “আমি নিজেও আর খোলা জায়গায় প্রস্রাব করব না। আমাকেও নিয়ম মানতে হবে।” তিনি প্রশাসনিক ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেন এবং তৎক্ষণাৎ শৌচাগার সংস্কারের আশ্বাস দেন।

যদিও রাহীর এই 'আত্মশাস্তি'র পদক্ষেপকে অনেকেই প্রশংসাযোগ্য মানবিকতা হিসেবে দেখেছেন, কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকার তা ভালভাবে নেয়নি। সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ঘটনা ‘অল ইন্ডিয়া সার্ভিস কন্ডাক্ট রুলস’-এর লঙ্ঘন এবং একজন আইএএস অফিসারের জন্য ‘অনুচিত আচরণ’। ফলত, তাঁকে তাঁর বর্তমান পদ থেকে সরিয়ে লখনউ-র রাজস্ব বোর্ডে সংযুক্ত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ট্রাম্পের 'মৃত অর্থনীতি' মন্তব্যে রাহুলের সুরে সুর: "মোদি-নির্মলা ছাড়া সবাই জানে ভারতের অর্থনীতি মৃত"

প্রসঙ্গত, রাহীর জীবন এক অনন্য লড়াইয়ের প্রতীক। ২০০৯ সালে পিসিএস অফিসার হিসেবে মুজফফরনগরে সমাজকল্যাণ আধিকারিক পদে থাকাকালীন তিনি ১০০ কোটি টাকার বৃত্তি কেলেঙ্কারি ফাঁস করেছিলেন। তার জেরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন— তাঁর মুখ ক্ষতবিক্ষত হয়, চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান। তবু থেমে না থেকে আরটিআই ও প্রতিবাদের মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান এবং ২০২২ সালে ৪০ বছর বয়সে আইএএস হন। আইনজীবীদের সমর্থনে জনমত থাকলেও, প্রশাসনের দৃষ্টিতে রাহীর এই ‘আত্মশাস্তি’ এক প্রকার প্রশাসনিক শৃঙ্খলাভঙ্গ। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই বলছেন, এই ধরনের মানবিক ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপই ভবিষ্যতের আইএএস অফিসারদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।