আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফের এক ভয়াবহ ঘটনা৷ সম্প্রতি কেরালার কোল্লাম জেলার বাসিন্দা আথুল্যা শেখরের মৃত্যু ঘিরে তোলপাড়। জানা গিয়েছে, আথুল্যা গত এক বছর ধরে দেশের বাইরে সারজাহ শহরে কাজের সূত্রে বসবাস করছিলেন। তাঁর ৩০তম জন্মদিনের দিনই নতুন একটি চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সকালেই তাঁকে তাঁর ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ঘটনা জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, আথুল্যার বিয়ের পর থেকেই তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা শুরু হয়। সাথীশ শঙ্কর, আথুল্যার স্বামী। তিনি বিভিন্ন সময়ে আথুল্যাকে মারধর করতেন ও তাঁকে হুমকি দিতেন।  সাথীশ দুবাইয়ের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে সাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতেন। বিয়ের সময় আথুল্যার পরিবার সাথীশকে প্রচুর পরিমাণ সোনা, একটি টু-হুইলার এবং অন্যান্য সামগ্রী উপহার স্বরূপ দিয়েছিলেন। এরপরও এই নির্যাতন থামেনি। আথুল্যার পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের মেয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হতো আরও সামগ্রীর জন্য।

আথুল্যার মা কেরালার পুলিশে অভিযোগে দায়ের করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মেয়েকে গলা টিপে মারা হয়েছে। তাঁর পেটে লাথি মারা হয়, এমনকি একটি প্লেট দিয়ে মাথায় আঘাত করাও হয়। তাঁর মৃত্যুর দিন রাতে আথুল্যা বোনকে নিজের শরীরে বিভিন্ন আঘাতের ছবি ও ভিডিও পাঠিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর মুখে ও হাতে আঘাতের দাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।

সাথীশ শঙ্কর পরে সংবাদমাধ্যমে নিজের বয়ানে বলেন, 'আমি এটা অস্বীকার করছি না যে আমি আথুল্যাকে মারতাম। আমি যখন মদ খেতাম, তখন কখনও কখনও এটা হতো। কিন্তু রোজ না।' তিনি আরও বলেন, 'ও আমাকেও মারত। রেগে গেলে সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত না। আমাদের ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। ও রেগে গিয়েই এসব করত।' এসব বলে তিনি নির্যাতনের দায় এড়ানোর চেষ্টা করতে থাকেন। 

আরও পড়ুনঃ আত্মহত্যা না খুন? প্রশ্ন উঠছে বারবার, এইমস-এর স্নাতকোত্তর ছাত্রের মৃত্যু ঘিরে রহস্য

আথুল্যার মৃত্যুর পর তাঁর স্বামী সাথীশের বিরুদ্ধে কেরালার কোল্লামে খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। কেরালা পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। পাশাপাশি সাথীশ কে জেরা করা হয়েছে। খবর অনুযায়ী, ঘটনার জেরে সাথীশের কর্মস্থল তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে। তাঁকে নিয়ে ওঠা অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির নীতির বিরুদ্ধে। পুলিশ পুরো ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করছে। 

এই ঘটনার কয়েকদিন আগে আরেকটি নির্মম ঘটনা ঘটে। কেরালারই এক যুবতী ভিপাঞ্জিকা মানি (৩৩), তাঁর ১৮ মাস বয়সী কন্যা শিশুকে হত্যার পর নিজেই আত্মহত্যা করেন। ঘটনাটি ঘটে সারজাহর আল নাহদা এলাকায়। সেখানে তাঁরা পরিবারসহ বসবাস করতেন। ভিপাঞ্জিকার লেখা সুইসাইড নোটে উঠে আসে নৃশংস পারিবারিক নির্যাতনের কথা। তিনি লিখেছেন, গর্ভবতী অবস্থায় তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। এমনকি তাঁকে কুকুরের মতো মারধর করা হতো। এখানেই থেমে নেই। শ্বশুর কর্তৃক দিনের পর দিন যৌন নির্যাতনের শিকার হন তিনি। 

তিনি তাঁর লেখায় জানিয়েছেন, সামাজিক ভয় ও লজ্জার কারণে তিনি এই নির্যাতন নীরবে সহ্য করতেন। শেষ পর্যন্ত এই যন্ত্রণার পথ থেকে মুক্তির জন্য নিজে ও তাঁর সন্তানকেও মৃত্যুর পথে নিয়ে যান। ভিপাঞ্জিকার মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর স্বামী নিধীশ শ্বশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন।  পরিবারের সদস্য দাবি করে, দীর্ঘদিন মানসিক ও শারিরীক  নির্যাতনই এর মূল কারণ।