আজকাল ওয়েবডেস্ক: বন্ধুত্ব দিবস উপলক্ষে সুরাটের এক হোটেলে আয়োজিত মদ্যপান পার্টি ঘিরে রীতিমতো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গুজরাট রাজ্যে যেখানে মদ্যপান আইনত নিষিদ্ধ, সেখানে ‘উইকএন্ড অ্যাড্রেস’ হোটেলের একটি ঘরে চার যুবক এবং দুই যুবতীকে মদ্যপান করতে দেখে পুলিশ হানা দেয় এবং ছয়জনকেই গ্রেপ্তার করে। কিন্তু এই ঘটনার সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক ছিল পুলিশের কাছে খবর পৌঁছানোর পদ্ধতি। তথ্য দিয়েছিলেন গ্রেপ্তার হওয়া এক মহিলার শ্বশুর।


টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া এক যুবতীর সঙ্গে তাঁর স্বামীর সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই ভাল যাচ্ছিল না। পারিবারিক অশান্তির জেরে শ্বশুরপক্ষের সঙ্গে সম্পর্কও খারাপ হয়ে পড়ে। বন্ধুত্ব দিবসে নিজের বন্ধুদের সঙ্গে হোটেলে পার্টি করতে যান ওই যুবতী। তবে তাঁকে গোপনে অনুসরণ করেন শ্বশুর এবং পরে সুরাট পুলিশের কন্ট্রোল রুমে ফোন করে জানান যে তাঁর পুত্রবধূ হোটেলের ৪৪৩ নম্বর ঘরে মদ্যপান করছেন বন্ধুদের সঙ্গে।

ডুমাস থানার অভিযানে হানা: 
তথ্য পাওয়ার পর ডুমাস থানার পুলিশ ‘উইকএন্ড অ্যাড্রেস’ হোটেলে হানা দেয়। তল্লাশি চালিয়ে হোটেল ঘর থেকে একটি আধা ভর্তি মদের বোতল এবং চারটি গ্লাস উদ্ধার করা হয়। ঘরটিকে বন্ধুত্ব দিবস উদ্‌যাপনের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ জানায়, ওই ঘরে থাকা ছয়জন — চার পুরুষ এবং দুই নারী — সকলেই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন।

আরও পড়ুন: হড়পা বানে নিমেষে নিশ্চিহ্ন গ্রাম, নিখোঁজ শতাধিক, উত্তরকাশীতে বাড়ছে মৃত্যুমিছিল, দুর্যোগের হাত থেকে এখনই নেই রেহাই!

গ্রেপ্তার হওয়া দুই মহিলার পেশা চিত্রশিল্পী, অপরদিকে চার পুরুষ পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁদের বয়স ২৩ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। পুলিশ তাঁদের সকলকে সুরাট সিভিল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করায়, যেখানে প্রত্যেকের শরীরে মদের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
গুজরাটে মদ্যপান নিষিদ্ধ হওয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। গুজরাট প্রহিবিশন অ্যাক্ট অনুযায়ী, মদ্যপান, তা বহন বা বিতরণ — সবকিছুই অপরাধের আওতায় পড়ে।


এই ঘটনার মাধ্যমে একটি বড় সামাজিক প্রশ্নও উঠে এসেছে— পারিবারিক কলহের জেরে একজন শ্বশুর নিজের পুত্রবধূর বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নিলেন, যাতে তাঁকে আইনি জটিলতার মধ্যে পড়তে হয়। এটি কি শুধুই আইন রক্ষার জন্য দায়িত্ববান নাগরিকের ভূমিকা, না কি ব্যক্তিগত প্রতিশোধের রূপ?

অনেকে মনে করছেন, পুত্রবধূর স্বাধীন জীবনযাপন পছন্দ না হওয়াতেই তিনি এমন কৌশল অবলম্বন করেন, যাতে সমাজের চোখে তাঁকে লজ্জিত করা যায়। অপরদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি তদন্তাধীন এবং শ্বশুরের উদ্দেশ্য নিয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বন্ধুত্ব দিবস যেখানে বন্ধন মজবুত করার দিন, সেখানে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও প্রতিশোধের অভিপ্রায়ে একজন নারীকে ফাঁসানোর ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তোলে পারিবারিক সম্পর্ক, ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে। আইন যেমন একদিকে সমাজকে শৃঙ্খলিত করে, অন্যদিকে ব্যক্তিগত প্রতিশোধের হাতিয়ার হয়ে উঠলে সেই ব্যবহারের সততা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

গুজরাট পুলিশের এই অভিযান কেবল একটি মদের পার্টির ফাঁস নয়, বরং এক জটিল পারিবারিক সম্পর্কের অন্তরালের কালো ছায়া তুলে ধরল। তদন্তের অগ্রগতি অনুযায়ী আগামী দিনে হয়তো আরও অনেক চমকপ্রদ তথ্য উঠে আসবে।