আজকাল ওয়েবডেস্ক: গোয়ার একটি জনপ্রিয় নাইটক্লাবে ভয়াবহ আগুনে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন। তদন্তকারী সূত্রে জানা গেছে, ক্লাবটির কাঠের নির্মাণ, আসবাব এবং মাত্র দুটি বেরোনোর পথ থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেক মানুষ ভিতরে আটকা পড়েন। কোনও  বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি বলে কর্মকর্তারা স্পষ্ট করেছেন।

তদন্তে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে ২৩ জনের দেহে কোনও  দগ্ধ হওয়ার চিহ্ন নেই। অক্সিজেনের তীব্র ঘাটতি এবং শ্বাসরোধেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেবল দুইটি দেহে মারাত্মক দগ্ধ হওয়ার চিহ্ন পাওয়া গেছে।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ১৭ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবং ৬টি দেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মৃতদের তালিকা প্রস্তুত করে পরিচয় নিশ্চিতকরণ ও আনুষ্ঠানিক হস্তান্তরের কাজ চলছে।

এদিকে ঘটনাকে কেন্দ্র করে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে গেট ম্যানেজার ঠাকুরও রয়েছে। ক্লাবের মালিক সৌরভ লুথরা ও গৌরব লুথরার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মালিকদের খোঁজে একটি বিশেষ পুলিশ দল দিল্লিতে পৌঁছেছে। সূত্র বলছে, ক্লাব মালিক মূলত দিল্লির বাসিন্দা এবং তিনি পলাতক।

নিরাপত্তাহীনতা, অনুমতি জালিয়াতি ও নজরদারির প্রশ্নে স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তাদের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত চলছে। ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ও নিরাপত্তা অনুমোদনে যুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এদিকে মানবিক উদ্যোগ হিসেবে ঝাড়খণ্ডের তিন মৃতদেহ বিশেষ বিমানে করে রাঁচিতে পাঠিয়েছে গোয়া সরকার, যাতে দ্রুত শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করা যায়।

গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী ড. প্রমোদ সাওয়ান্ত এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গোয়ার পর্যটনের ইতিহাসে এই ঘটনা প্রথমবার ঘটল। শনিবার গভীর রাতেই স্থানীয় বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন তিনি। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নাইটক্লাবের দ্বিতীয় তলায় প্রথমে আগুন লেগেছিল। তারপর ছড়িয়ে পড়ে ডান্স ফ্লোরে। সরু পথ বলেই সকলে নিরাপদে আশ্রয়ে পালিয়ে যেতে পারেননি। 

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, বির্চ বাই রোমিও লেন নাইটক্লাবের জেনারেল ম্যানেজারকে রবিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এফআইআর দায়ের করা হয়েছে মালিকের বিরুদ্ধেও। তাঁর বিরুদ্ধেও অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট রয়েছে। গোয়া মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন আহতদের শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। 

পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিতই ছিলেন না নাইটক্লাবের মালিক। সরু গলি পেরিয়ে নির্জন এলাকায় নাইটক্লাব। ছিল না যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। আর এই গাফিলতিতেই বেঘোরে প্রাণ হারালেন ২৫ জন। রাতভর হুল্লোড়ের প্ল্যান ছিল সকলের। মালিক, ম্যানেজারের ত্রুটিতেই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন পর্যটকরা। 

 রবিবার ভোরেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী ড. প্রমোদ সাওয়ান্ত। তিনি এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বির্চ বাই রোমিও লেন নাইটক্লাবের মালিক ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে নিরাপত্তায় গাফিলতির অভিযোগে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। শীঘ্রই মালিক ও ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করা হবে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ চিহ্নিত করতে, পুরো ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নর্থ গোয়ার পানাজি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরপোরা গ্রামে বির্চ বাই রোমিও লেন নাইটক্লাব। শতাধিক পর্যটক, কর্মীরা ছিলেন গতকাল রাতে। ডিজে পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। ডান্স ফ্লোর মাতিয়ে রেখেছিলেন পর্যটকরা। খাবারের আয়োজনেও ব্যস্ত ছিলেন কর্মীরা। সেই সময়েই ঘটে বিপত্তি। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত একটা নাগাদ দাউদাউ আগুন ছড়িয়ে পড়ে ডান্স ফ্লোরে। বেশিরভাগ পালিয়ে যান কোনও মতে। পালাতে গিয়েও হুড়োহুড়ি শুরু হয়। কারণ, নাইটক্লাবের এক্সিট গেটের পথ অত্যন্ত সরু। যেখান থেকে তাড়াহুড়োতে পালিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। অন্যদিকে কয়েকজন পর্যটক ও কর্মীরা পালাতে না পেরে নাইটক্লাবের বেসমেন্টে ঠাঁই নেন। সেখানেই দমবন্ধ হয়ে অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আরপোরা নদীর পিছনেই ছিল এই নাইটক্লাব। এন্ট্রি ও এক্সিটের পথ ছিল সরু। মূল সড়কের পাশে সরু রাস্তা দিয়ে পৌঁছনো যেত এই 'আইল্যান্ড ক্লাব'-এ। দমকলের ইঞ্জিন নাইটক্লাব পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। ৪০০ মিটার দূরে দাঁড়িয়েই দমকলের একাধিক ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ওই বেসমেন্ট থেকে ২৫ জনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও দমকল বাহিনী। 

 আরপোরা-নাগোয়া পঞ্চায়েতের প্রধান রোশন রেডকার বলেন, 'ক্লাবটি সৌরভ লুথরা পরিচালনা করতেন৷ সঙ্গীর সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল। তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। আগেই ওই এলাকা পরিদর্শন করে দেখেছি, তাঁদের ক্লাবটি নির্মাণের অনুমতি ছিল না। পঞ্চায়েত এটি ভাঙার নোটিশ জারি করেছিল। এরপর পঞ্চায়েত অধিদপ্তরের আধিকারিকরা তা স্থগিত করেছিলেন। প্রাঙ্গণের মূল মালিক লুথরাকে জায়গাটি ভাড়া দিয়েছিলেন৷' 

 সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বির্চ বাই রোমিও লেন নামের জনপ্রিয় নাইটক্লাব কোনও এনওসি জমা দেয়নি। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও ছিল না। এমার্জেন্সি এক্সিটের ব্যবস্থাও ছিল না বেসমেন্টে। জানা গেছে, একতলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। বাঁচার জন্য অনেকেই বেসমেন্টে ঠাঁই নিয়েছিলেন। বেসমেন্টে ছিল না ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা। ছিল না এক্সিট গেট। সেখানেই আটকে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।