আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্বপ্নের কোনও সীমা নেই। দারিদ্র্য সাহসীকে বন্দি করতে পারে না। দিল্লির রাস্তায় মোমো বিক্রেতা এক তরুণী এটিই প্রমাণ করেছেন। বিউটি ঝা একসময় দিল্লির একটি ছোট ঠেলাগাড়িতে করে মানুষকে মোমো পরিবেশন করতেন। ২০২৮ সালে তিনি একজন এমবিবিএস ডাক্তার হতে চলেছেন। বিহারের মধুবনী জেলার বাসিন্দা বিউটির নিট (ডাক্তারি এন্ট্রান্স) পরীক্ষার সাফল্যের গল্প প্রবল প্রতিকূলতায় কঠোর পরিশ্রমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
নিউজ ১৮ হিন্দি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিউটির যখন মাত্র ছয় বছর বয়স তখন তাঁর ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে দিল্লি থেকে বিহারে মধুবনীতে পরিবার নিয়ে চলে আসেন তাঁর বাবা। কখনও কোনও কারখানা বা কোনও বাড়িতে মালির কাজ করে দিন গুজরান করতেন তিনি। ২০২০ সালে কোভিড অতিমারির সময় বাবা চাকরি হারানোর পরেই পরিবারে সঙ্কট দেখা দেয়। সংসারের হাল ধরতে মায়ের সঙ্গে মোমো বিক্রি করা শুরু করেন বিউটি। দোকানে ফাঁকা সময় পেলেই বই নিয়ে বসে পড়তেন। বাইরের কোনও শব্দ কোনও প্রভাব ফেলত না তাঁর উপর।
তাঁদের দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে ছিল সকালে পড়াশোনা করা এবং সন্ধ্যায় মোমো বিক্রি করা। এই সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, বিউটির একটিই স্বপ্ন ছিল, ডাক্তার হওয়া। তাঁর দৈনন্দিন রুটিন ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মোমোর বিক্রি করতেন। দোকান থেকে ফিরে মা ঘুমিয়ে পড়লে বিউটি তার মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করতেন। দামি পড়াশোনার উপকরণের টাকা না থাকায়, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং ইউটিউবই ছিল তাঁর শিক্ষক।
বিউটি দারিদ্র্যকে তাঁর শক্তিতে পরিণত করেছিল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন শিক্ষাই হল এই অবস্থা থেকে মুক্তির চাবিকাঠি। বিউটির সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প তাঁর সংকল্পের এক জ্বলন্ত প্রমাণ। তাঁর সাফল্য এই বিশ্বাসকে ভুল প্রমাণ করে যে, নিট-এর মতো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে বড় কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া এবং সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা আবশ্যক। এমবিবিএস-এ ভর্তি হওয়া শুধু তাঁর পরিবারকেই গর্বিত করেনি বরং টাকার অভাব নিয়ে আক্ষেপ করা লক্ষ লক্ষ তরুণের জন্য একটি দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছে।
ডাক্তার হয়ে বিউটি গরিব মানুষের সেবা করতে চান। টাকার অভাবে যাঁরা স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হন তাঁদের সেবা করতে চান। তিনি বর্তমানে লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পড়ছেন। ২০২৩ সালের নিট (NEET) পরীক্ষায় ৪৮০৯ ব়্যাঙ্ক করেছিলেন বিউটি।
