আজকাল ওয়েবডেওস্ক: দিনকয়েক আগেই সামনে এসেছিল এক তথ্য। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লিখিত, অপারেশন সিঁদুরের ছ' মস পর, লস্কর, জইশ জম্মু ও কাশ্মীরে পুনরায় হামলা চালানোর বড় পরিকল্পনা করছে। পর পর বৈঠকে তৈরি হচ্ছে ব্লু প্রিন্ট।
এই তথ্য সামনে আসার পরেই, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং হরিয়ানা পুলিশের যৌথ অভিযানে হরিয়ানার ফরিদাবাদের একটি মেডিকেল কলেজ থেকে ৩৫০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক, বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক, একটি অ্যাসল্ট রাইফেল এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বেলায় বেলায় ঘটনার মোড় ঘোরানো তথ্য। জানা গিয়েছে, প্রথমে দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তারির পর, আরও এক মহিলা চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর গাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে একে ৪৭।
ফরিদাবাদে ৩৫০ কিলোগ্রামেরও বেশি বিস্ফোরক এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় একজন গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহভাজন হিসেবে ওই মহিলা চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তথ্য সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে। সাহারানপুর থেকে চিকিৎসক আদিলকে গ্রেপ্তার করার পরেই, মোর ঘুরে যায় গোটা ঘটনার। চিকিৎসক আদিল আহমেদ র্যাদারকে কিছু দিন আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। অভিযোগ, তিনি শ্রীনগরের রাস্তায় দেওয়ালে দেওয়ালে পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদের সমর্থনে পোস্টার সাঁটছিলেন। আদিল দক্ষিণ কাশ্মীরের বাসিন্দা। অনন্তনাগের গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র রেসিডেন্ট ছিলেন ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। কিছু দিন আগে শ্রীনগরের রাস্তা ছেয়ে গিয়েছিল জইশ গোষ্ঠীকে সমর্থকারী পোস্টারে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ঘেঁটে পুলিশ আদিলকে চিহ্নিত করে। তাঁকেই ওই সমস্ত পোস্টার দেওয়ালে সাঁটতে দেখা গিয়েছিল। ন’দিনের মাথায় গত ৬ নভেম্বর আদিলকে গ্রেফতার করা হয় উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের অম্বালা রোডের একটি হাসপাতাল থেকে।
পুলিশ সূত্রে খবর, আদিলকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ফরিদাবাদের আল ফালাহ হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে বিপুল বিস্ফোরক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। হাসপাতালে কর্মরত আরও এক চিকিৎসক মুজামিল শাকিলকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফরিদাবাদ পুলিশ কমিশনার সতেন্দ্র কুমার গুপ্তা জানিয়েছেন, ৩৫০ কেজি বিস্ফোরকের সঙ্গে ২০টি টাইমারও পাওয়া গিয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, একটি পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিন এবং একটি ওয়াকি-টকি সেটও উদ্ধার করা হয়েছে।
আদিলকে বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রেখে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুত এবং পরিবহনে তাঁর ভূমিকার কী ছিল সেই সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর আগে, পুলিশ কাশ্মীর উপত্যকায় তাঁর একটি লকার থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল এবং অন্যান্য গোলাবারুদ বাজেয়াপ্ত করেছিল। তদন্তে পুলওয়ামা জেলার কোয়েলের বাসিন্দা শাকিলের জড়িত থাকার বিষয়টিও উঠে এসেছে। তিনি ফরিদাবাদে বাজেয়াপ্ত রাসায়নিক ও অস্ত্র মজুদ করতে সহায়তা করেছিলেন বলে সন্দেহ পুলিশের। উভয় ডাক্তারকে জম্মু ও কাশ্মীরে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং তারা এখনও পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। পুলিশ এই বিস্ফোরক উদ্ধারকে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উপত্যকার সঙ্গে সম্পর্কিত বৃহত্তম বিস্ফোরক উদ্ধার অভিযানের একটি বলে বর্ণনা করেছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের ধারা ৭/২৫ এবং বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের (ইউএপিএ) ধারা ১৩, ২৮, ৩৮ এবং ৩৯ এর অধীনে মামলা করা হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের ডাক্তারদের একটি নেটওয়ার্কের উপর এখন আরও বিস্তৃত তদন্ত চলছে। তদন্তকারীদের সন্দেহ ওই ডাক্তারদের নেটওয়ার্কের সঙ্গে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ এবং গাজওয়াত-উল-হিন্দের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে যে, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বাইরে অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাচার এবং অস্ত্র মজুদের সঙ্গে জড়িত নেটওয়ার্কটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তদন্ত সংস্থাগুলি।
জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছে, 'সন্ত্রাস দমনে এক বড় সাফল্যের মাধ্যমে, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম) এবং আনসার গাজওয়াত-উল-হিন্দ (এজিইউএইচ)-এর সঙ্গে যুক্ত একটি আন্তঃরাজ্য ও আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসী মডিউলের সন্ধান পেয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর এবং অন্যান্য রাজ্যে সমন্বিত তল্লাশি অভিযানের সময় এই অভিযানের ফলে মূল কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।'
