জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং হরিয়ানা পুলিশের যৌথ অভিযানে হরিয়ানার ফরিদাবাদের একটি মেডিকেল কলেজ থেকে ৩৫০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক, বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক, একটি অ্যাসল্ট রাইফেল এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্র মামলায় এক কাশ্মীরি ডাক্তারের গ্রেপ্তারের পর এই বিপুল বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের সন্দেহ ওই বিস্ফোরক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট হতে পারে।
চিকিৎসক আদিল আহমেদ র্যাদারকে কিছু দিন আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। অভিযোগ, তিনি শ্রীনগরের রাস্তায় দেওয়ালে দেওয়ালে পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদের সমর্থনে পোস্টার সাঁটছিলেন। আদিল দক্ষিণ কাশ্মীরের বাসিন্দা। অনন্তনাগের গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র রেসিডেন্ট ছিলেন ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। কিছু দিন আগে শ্রীনগরের রাস্তা ছেয়ে গিয়েছিল জইশ গোষ্ঠীকে সমর্থকারী পোস্টারে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ঘেঁটে পুলিশ আদিলকে চিহ্নিত করে। তাঁকেই ওই সমস্ত পোস্টার দেওয়ালে সাঁটতে দেখা গিয়েছিল। ন’দিনের মাথায় গত ৬ নভেম্বর আদিলকে গ্রেফতার করা হয় উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের অম্বালা রোডের একটি হাসপাতাল থেকে।
পুলিশ সূত্রে খবর, আদিলকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ফরিদাবাদের আল ফালাহ হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে এই বিস্ফোরক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। হাসপাতালে কর্মরত আরও এক চিকিৎসক মুজামিল শাকিলকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফরিদাবাদ পুলিশ কমিশনার সতেন্দ্র কুমার গুপ্তা জানিয়েছেন, ৩৫০ কেজি বিস্ফোরকের সঙ্গে ২০টি টাইমারও পাওয়া গিয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, একটি পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিন এবং একটি ওয়াকি-টকি সেটও উদ্ধার করা হয়েছে।
আদিলকে বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রেখে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুত এবং পরিবহনে তাঁর ভূমিকার কী ছিল সেই সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর আগে, পুলিশ কাশ্মীর উপত্যকায় তাঁর একটি লকার থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল এবং অন্যান্য গোলাবারুদ বাজেয়াপ্ত করেছিল। তদন্তে পুলওয়ামা জেলার কোয়েলের বাসিন্দা শাকিলের জড়িত থাকার বিষয়টিও উঠে এসেছে। তিনি ফরিদাবাদে বাজেয়াপ্ত রাসায়নিক ও অস্ত্র মজুদ করতে সহায়তা করেছিলেন বলে সন্দেহ পুলিশের। উভয় ডাক্তারকে জম্মু ও কাশ্মীরে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং তারা এখনও পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। পুলিশ এই বিস্ফোরক উদ্ধারকে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উপত্যকার সঙ্গে সম্পর্কিত বৃহত্তম বিস্ফোরক উদ্ধার অভিযানের একটি বলে বর্ণনা করেছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের ধারা ৭/২৫ এবং বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের (ইউএপিএ) ধারা ১৩, ২৮, ৩৮ এবং ৩৯ এর অধীনে মামলা করা হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের ডাক্তারদের একটি নেটওয়ার্কের উপর এখন আরও বিস্তৃত তদন্ত চলছে। তদন্তকারীদের সন্দেহ ওই ডাক্তারদের নেটওয়ার্কের সঙ্গে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ এবং গাজওয়াত-উল-হিন্দের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে যে, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বাইরে অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাচার এবং অস্ত্র মজুদের সঙ্গে জড়িত নেটওয়ার্কটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তদন্ত সংস্থাগুলি।
তদন্তে দেখা গিয়েছে, ২০২১-২২ সাল থেকে নেটওয়ার্কটি মৌলবাদের প্রচেষ্টা শুরু করে। প্রথমে হাশিম নামে একজন ব্যক্তির নির্দেশে এবং পরে উপত্যকায় ডা. ওমরের নেতৃত্বে পুনরায় সংগঠিত হয়। সাহারানপুরে অবস্থিত ডা. আদিলকে শীঘ্রই জম্মু এবং কাশ্মীর পুলিশ গ্রেপ্তার করে। সে পুলিশকে তাঁর সহকর্মী ডাক্তারদের কাছে নিয়ে যায়। সেখানেই ডায় মুজ্জামিলকে গ্রেুপ্তার করা হয় এবং বিপুল বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।
গোয়েন্দা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, মডিউলটিকে একটি সম্ভাব্য ‘স্লিপার-সেল’ হিসেবে কাজ করছে। এরা সাধারণত লোকচক্ষুর আড়ালে থাকে এবং কোনও পেশাদার ছদ্মবেশ ধারণ করে থাকে। এদের বিস্তারিত স্টোরেজ এবং লজিস্টিক পরিকল্পনা রয়েছে। ফরিদাবাদের দিল্লির কৌশলগত নৈকট্য, ধৌজের মতো আধা-গ্রামীণ এলাকাগুলি বিস্ফোরক মজুতের জন্য আদর্শ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই এলাকাগুলি রাজধানী অঞ্চলে সহজে প্রবেশাধিকার প্রদান করে। পুলিশ সূত্রগুলি জানিয়েছে যে এই গোষ্ঠীর ঘোষিত উচ্চাকাঙ্ক্ষার মধ্যে রয়েছে দিল্লি-এনসিআর এলাকাকে ‘বড়’ অভিযানের জন্য নিশানা করা। এর ফলে তল্লাশি আরও জোরদার করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে, জম্মু ও কাশ্মীর জুড়ে একটি বিশাল সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলছে। রবিবার, উপত্যকা জুড়ে অভিযান চালিয়ে একজন মহিলা সহ নয়জনকে আটক করা হয়েছে, সোমবারও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা গিয়েছে, উপরের অংশে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা শীতের জন্য সমতল অঞ্চলে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে। তাই রামবান, কিশতওয়ার, ডোডা, কাঠুয়া, রিয়াসি, পুঞ্চ এবং রাজৌরি জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে।
