আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভুয়ো চাকুরীজীবী, ভুয়ো চিকিৎসক, ভুয়ো কূটনীতিক, ভুয়ো বিজ্ঞানী। মানুষের চোখে ভুয়ো পরিচয়ে ধুলো দেওয়ার ঘটনা নতুন নয়, তবে এবার দুই ভাইয়ের কীর্তিতে একেবারে চোখ ছানাবড়া তদন্তকারী আধিকারিকদের। ভুয়ো বিজ্ঞানী। বছরের পর বছর ধরে নিজেকে পরমাণু গবেষক বলে পরিচয় দিয়েছেন। কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন বছরে। দিনকয়েক আগেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। এবার সামনে এল তাঁর আরও বড় কীর্তির হদিশ। কেবল নিজেকে বিজ্ঞানী বলে পরিচয় দিতেন না, তিনি ইরানের সংস্থায় তাঁর পারমাণবিক পরিকল্পনা বিক্রি করার সমস্ত পথ তৈরি করে ফেলেছিলেন বলেও জানা গিয়েছে।
আখতার হুসেইনি কুতুবদ্দিন। ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। বয়স ৬০। গত প্রায় তিন দশক ধরে ভুয়ো কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন সকলের চোখে ধুলো দিয়ে। এক, নিজের ভুয়ো পরিচয় দেওয়া, দুই, সেই পরিচয়ের আধারে কোটি কোটি টাকা রোজগার করা। গত কয়েক বছরের আখতার হুসেইনির অ্যাকাউন্টে বারে বারে মোটা অঙ্কের বিদেশি অর্থ এসেছে বলে তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে পুলিশ।
দিন কয়েক আগেই আখতারকে গ্রেপ্তার করে মুম্বই পুলিশ। গ্রেপ্তারির সময় পুলিশ তাঁর কাছ থেকে অন্তত ১০টি মানচিত্র, পরমাণু সম্পর্কিত একাধিক গোপন, স্পর্শকাতর তথ্য উদ্ধার করেছে বলে খবর সূত্রের। সঙ্গেই বাজেয়াপ্ত করেছে পরমাণু কেন্দ্রের ভুয়ো আইকার্ড, ভুয়ো পরিচয় পত্রও। জানা গিয়েছে তিনি নানা দেশে গোপন পারমাণবিক তথ্য পাচার করতেন আর তার বিনিময়ে তাঁর অ্যাকাউন্টে আসত কোটি কোটি টাকা। ১৯৯৫ থেকে তিনি এই ভুয়ো কাজ কর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, পুলিশ তদন্তে নেমে কেবল আখতারে হুসেইনিকেই নয়, তাঁর ভাই আদিল হুসেইনিকেও (৫৯) গ্রেপ্তারও করেছে। তাঁরা ভিপিএন এবং একটি এনক্রিপ্টেড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে লিথিয়াম-৬ চুল্লির জন্য তৈরি একটি নকশা বিক্রি করার চেষ্টা করছিলেন ব্লে জানা গিয়েছে। মার্চ-এপ্রিল মাসে দু' ভাই তেহরানে গিয়েছিলেন এবং ভারত ও দুবাইতে বেশ কয়েকবার ইরানি দূতাবাসেও গিয়েছিলেন। প্রমাণ মিলেছে সেসবের।
তদন্তকারী আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, দুই ভাই মুম্বাই-ভিত্তিক একজন ইরানি কূটনীতিককে একজন সিনিয়র বিএআরসি বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচয় দিয়েই মূল প্রতারণার ছক কষেন। সূত্র জানিয়েছে, জাল বিবরণ এবং চুল্লির ব্লু-প্রিন্টের মাধ্যমে কূটনীতিককে তাঁরা বিশ্বাস করিয়েছিলেন, তাঁরা যা বলছেন, যা তথ্য দিচ্ছেন, সমস্তটাই সত্য।
সূত্রের তথ্য, অভিযুক্তরা ইরানি কোম্পানিগুলির সামনে দাবি করেছেন যে, তাঁরা প্লাজমা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি লিথিয়াম-৬-ভিত্তিক ফিউশন রিঅ্যাক্টর প্রোটোটাইপ তৈরি করেছে। লিথিয়াম-৭ ব্যবহার করে এমন একটি রিঅ্যাক্টর পরীক্ষা করার দাবিও করেছেন এবং জনান, পরীক্ষায় স্রেফ অল্পের জন্য সেটি সফল হয়নি। অন্যথায় সমস্তকিছু ছাপিয়ে আরও একধাপ এগিয়ে যেতেন তাঁরা।
তবে তদন্তের সাথে যুক্ত বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে অভিযুক্ত যে প্রোটোটাইপের কথা উল্লেখ করেছেন তা তাত্ত্বিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু এর কার্যকারিতা প্রমাণ করার জন্য কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। লিথিয়াম-৭ ব্যবহার করা চুল্লি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে লিথিয়াম-৭ কোনও ফিউশনের জন্য অনুপযুক্ত। সূত্র জানিয়েছে, উভয় অভিযুক্তই তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার জন্য পারমাণবিক চুল্লি পদার্থবিদ্যা, আইসোটোপ রসায়ন এবং প্লাজমা গতিবিদ্যার মতো জটিল বৈজ্ঞানিক শব্দ ব্যবহার করেছেন।
