আজকাল ওয়েবডেস্ক: শনিবার কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ বিভাজন আরও একবার প্রকাশ্যে চলে এল, যখন রাজ্যসভা সাংসদ ও প্রাক্তন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি পুরনো ছবি শেয়ার করে বিজেপি ও তার আদর্শগত মূল সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (RSS) সাংগঠনিক শক্তির প্রকাশ্য প্রশংসা করেন। এই মন্তব্য এমন এক সময় সামনে এল, যখন কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক সংস্থা কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির (CWC) বৈঠক চলছিল, ফলে দিগ্বিজয়ের বক্তব্যকে দলীয় নেতৃত্বের প্রতি একপ্রকার পরোক্ষ বার্তা হিসেবেই ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
দিগ্বিজয় সিং যে ছবিটি শেয়ার করেছেন, তা ১৯৯০-এর দশকের। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তরুণ নরেন্দ্র মোদি মেঝেতে বসে আছেন, আর বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা এল কে আদভানি চেয়ারে বসে রয়েছেন। দিগ্বিজয় এই ছবিটিকে ‘প্রভাবশালী’ (impactful) বলে উল্লেখ করেন। জানা গেছে, ছবিটি ১৯৯৬ সালে গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শঙ্করসিং ভাগেলার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সময় তোলা।
এক্স-এ দেওয়া পোস্টে দিগ্বিজয় লেখেন, “আমি এই ছবিটি কোয়ারায় পেয়েছি। এটি অত্যন্ত প্রভাবশালী। একজন আরএসএসের তৃণমূল স্বয়ংসেবক ও জনসংঘ/বিজেপির কর্মী, যিনি একসময় নেতাদের পায়ের কাছে মেঝেতে বসতেন, কীভাবে তিনি একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং পরে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে উঠলেন, এটাই সংগঠনের শক্তি। জয় সিয়া রাম।”
এই পোস্টে দিগ্বিজয় সিং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, সাংসদ রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকেও ট্যাগ করেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, এতে স্পষ্ট যে তিনি সরাসরি কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের নজর আকর্ষণ করতেই এই বার্তা দিয়েছেন।
এই মন্তব্য ঘিরে কংগ্রেসের অন্দরমহলে অস্বস্তি তৈরি হয়। এমনিতেই দলের ভেতরে মতভেদ ও অসন্তোষের ইঙ্গিত মিলছিল। এর আগে কেরলের কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের একাধিক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির প্রশংসা দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব আরও বাড়িয়েছে।
দিগ্বিজয়ের পোস্টকে হাতিয়ার করে বিজেপিও আক্রমণে নামে। বিজেপি মুখপাত্র সিআর কেশবন এক্স-এ কটাক্ষ করে প্রশ্ন তোলেন,
“দিগ্বিজয় সিং যে ‘সত্য বোমা’ ফেলেছেন, তার জবাব দেওয়ার সাহস কি রাহুল গান্ধীর আছে? এই পোস্ট কংগ্রেসের প্রথম পরিবারের স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক নেতৃত্বকে প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে।”
বিতর্ক তীব্র হওয়ার পর দিগ্বিজয় সিং অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, তিনি বিজেপির রাজনীতি বা আদর্শের প্রশংসা করেননি; কেবলমাত্র সংগঠনের কাঠামো ও কার্যক্ষমতার কথা বলেছেন। তিনি স্পষ্ট করেন যে বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর রাজনৈতিক লড়াই অব্যাহত থাকবে।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন মন্তব্য নয়। মাত্র এক সপ্তাহ আগেই দিগ্বিজয় সিং কংগ্রেসের সাংগঠনিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বের ধরন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। সে সময় তিনি লেখেন, কংগ্রেসের প্রয়োজন আরও “বাস্তববাদী ও বিকেন্দ্রীভূত সাংগঠনিক কাঠামো”।
রাহুল গান্ধীকে উদ্দেশ্য করে তাঁর সেই পোস্টে বলা হয়, “রাহুল গান্ধীজি, নির্বাচন কমিশনের যেমন সংস্কার দরকার, তেমনই কংগ্রেসেরও প্রয়োজন। আপনি সংগঠন গঠনের কাজ শুরু করেছেন, কিন্তু আরও বাস্তববাদী ও বিকেন্দ্রীভূত কার্যপদ্ধতি দরকার। আমি জানি আপনি তা করতে পারেন। একমাত্র সমস্যা হলো আপনাকে ‘বোঝানো’ সহজ নয়।”
এই প্রেক্ষাপটে দিগ্বিজয় সিংয়ের সাম্প্রতিক পোস্ট কংগ্রেসের নেতৃত্ব সংকট, সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র নিয়ে চলমান বিতর্ককে আরও তীব্র করে তুলেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একই সঙ্গে, বিজেপির শক্তিশালী সংগঠন বনাম কংগ্রেসের নেতৃত্বকেন্দ্রিক কাঠামো, এই পুরনো তুলনাও নতুন করে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে।
