আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারসভা, জনসভা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই ভেসে আসছে। এবার সেই বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে দিল্লি বিজেপির শেয়ার করা একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের কারণে। বিশেষ ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) নামে ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া চলাকালীন বিজেপির পক্ষ থেকে ইসলাম বিদ্বেষমূলক কনটেন্ট প্রচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে দ্যা ওয়্যার-এর এক প্রতিবেদনে।
১ ডিসেম্বর দিল্লি বিজেপির X অ্যাকাউন্ট থেকে একটি গ্রাফিক পোস্ট করা হয়, যেখানে রাহুল গান্ধী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অখিলেশ যাদব এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুসলিম পোশাকে দেখানো হয়। পোস্টটির শিরোনাম ছিল— “ঘুসপৈঠিয়োঁ কে ভাইজান”। সেখানে দাবি করা হয়, যে সব রাজনৈতিক নেতা SIR প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করছেন, তারা নাকি “অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থক”। বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপি রাজনৈতিক ভাষণে অনুপ্রবেশকারী শব্দটি ব্যবহার করে মূলত ভারতের মুসলিমদের লক্ষ করছে, যদিও বিজেপির দাবি এটি কেবল বাংলাদেশ ও মায়ানমার থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
বিহারে নির্বাচন প্রচারের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বহুবার বলেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে “বিদেশি ভোটারদের” নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। তবে এখনও নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে কতজন বিদেশির নাম বাদ গিয়েছে, তা জানায়নি। অন্যদিকে দ্য ওয়্যারের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিহারে SIR চলাকালীন ভোটার তালিকায় বিদেশির উপস্থিতি মাত্র ০.০১২ শতাংশ ছিল। বিরোধী দলগুলোর প্রশ্ন— এত কম সংখ্যাকে কেন্দ্র করে কেন এত বড় প্রচার এবং কেন এই প্রক্রিয়া মুসলিম পরিচয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে।
দিল্লি বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও বিতর্কিত কনটেন্ট পাওয়া গেছে। এক গ্রাফিকে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেয়ালের ছিদ্র বন্ধ করছেন, যাতে ইঁদুর ঢুকতে না পারে। দেয়ালে বড় হরফে লেখা— “infiltrators”। আরেক ভিডিওতে দেখানো হয়, ক্ষেতে হারভেস্টার চালানো হলে শুকরের মতো প্রাণী পালিয়ে যাচ্ছে। আরেক পোস্টে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চেয়ারে বসানো হয়েছে, যার দুটি পায়ে লেখা ছিল “infiltrators” এবং “Rohingya”। SIR লেখা করাত সেই পা কেটে দিচ্ছে।
সবচেয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে সেই ভিডিও, যেখানে মুসলিম পোশাক পরা এক পরিবারকে “মশা”র সঙ্গে তুলনা করা হয়। ভিডিওতে দেখানো হয়, SIR শুরু হওয়ার খবরেই পরিবারটি ভয় পেয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে এবং ঘরে জ্বালানো মশার কয়েলের ধোঁয়া থেকে “SIR” লেখা তৈরি হচ্ছে। সমালোচকদের মতে, এসব পোস্ট মুসলমানদের বারবার অমানবিক প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করে ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
শুধু দিল্লি নয়, বিজেপির অন্যান্য রাজ্য ইউনিট থেকেও একই ধরনের পোস্ট করা হয়েছে। NDA বিহারে জয়লাভ করার পর আসামের মন্ত্রী অশোক সিংহল X-এ বাঁধাকপি ক্ষেতের ছবি পোস্ট করে লেখেন— “বিহার approves cauliflower farming।” অনেকেই এটিকে ১৯৮৯ সালের ভয়াবহ ভগতপুর দাঙ্গার প্রতি ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন, যেখানে নিহত মুসলমানদের দেহ বাঁধাকপি গাছ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল।
এদিকে, X-এর নীতিতে ধর্ম, জাতি, বর্ণ বা পরিচয়ের ভিত্তিতে ব্যক্তিকে বা গোষ্ঠীকে হেনস্থা করা নিষিদ্ধ। ২০২২ সালে একই কারণে গুজরাট বিজেপির একটি পোস্ট প্ল্যাটফর্মটি সরিয়ে দিয়েছিল।
SIR নিয়ে বিতর্কের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কাজ করা ব্লক-লেভেল অফিসারদের মৃত্যুর ঘটনাও সামনে আসছে। উত্তর প্রদেশে গত বারো দিনে দশজন BLO মারা গিয়েছেন, যার মধ্যে তিনজন আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগ উঠছে, অসহনীয় চাপ এবং অনিয়ন্ত্রিত প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার কারণেই এই মৃত্যু।
বিরোধী দলগুলোর বক্তব্য, এই পুরো প্রচার রাজনৈতিকভাবে মুসলিমদের আরও প্রান্তিক করা এবং নির্বাচনী প্রচারে ধর্মীয় বিভাজনকে তীব্র করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিজেপি অবশ্য দাবি করেছে, SIR কেবল দেশের “অবৈধ বিদেশি ভোটারদের” শনাক্ত করার উদ্যোগ।
