আজকাল ওয়েবডেস্ক: সংবিধান দিবস উপলক্ষে দেশজুড়ে উদযাপনের মাঝেই তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কের সূচনা করলেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। ঐতিহাসিক নথি ও সাংবিধানিক পরিষদের বক্তব্যের উদ্ধৃতি সামনে তুলে ধরে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে সংবিধানকে “পদ্ধতিগতভাবে খর্ব” করার অভিযোগ আনেন।
রমেশ তার বিবৃতিতে বলেন, সংবিধান রচনার সময়ে ড. বি.আর. আম্বেদকর, জওহরলাল নেহরু এবং সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বই ভারতকে এক গণতান্ত্রিক ভিত্তি প্রদান করেছিল। তিনি দাবি করেন, বর্তমান সরকার সেই ইতিহাস থেকে সরে এসে সাংবিধানিক মূল্যবোধকে দুর্বল করছে।
২৬ নভেম্বর ১৯৪৯ সালে সংবিধান গ্রহণের মুহূর্তে সাংবিধানিক পরিষদের সভাপতি ড. রাজেন্দ্র প্রসাদের দেওয়া ভাষণের উদ্ধৃতি টেনে রমেশ জানান, প্রসাদ আম্বেদকরের অবদানকে “অসাধারণ” বলে অভিহিত করেছিলেন এবং খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব তার হাতে দেওয়াকে “সম্পূর্ণ সঠিক সিদ্ধান্ত” বলেছিলেন। তিনি বলেন, প্রসাদ স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে ড. আম্বেদকর তাঁর নিষ্ঠা ও নেতৃত্বের মাধ্যমে সংবিধানকে “দীপ্তমান” করে তুলেছেন।
রমেশ আরও উল্লেখ করেন যে, একই দিনে গুয়াহাটি থেকে সি. রাজাগোপালাচারী সংবিধান প্রণয়নের নেতৃত্বে আম্বেদকরের ভূমিকার প্রশংসা করে এটিকে “অহিংসার সর্বোচ্চ বিজয়” বলে মন্তব্য করেছিলেন। রাজাজি জানিয়েছিলেন, আম্বেদকরকে খসড়া কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব তিনিই দিয়েছিলেন এবং সেই প্রস্তাব নেহরু-প্যাটেল বিনা আপত্তিতে গ্রহণ করেছিলেন—যা সেই সময়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বৃহৎ মনোভাব এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতিফলন।
এই ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ তুলে রমেশ অভিযোগ করেন, সংবিধান রচনায় আরএসএসের “কোনও ভূমিকা ছিল না” এবং সংবিধান গ্রহণের অল্প সময়ের মধ্যেই সংগঠনটি এর বিরোধিতা শুরু করেছিল। তার দাবি, বর্তমান সরকার যেহেতু আরএসএস মতাদর্শে প্রোথিত, তাই তারা সেই বিরোধিতার ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে।
রমেশ বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কর্মকাণ্ড “সাংবিধানিক নীতি, বিধান এবং রাজনৈতিক চর্চাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিপর্যস্ত করছে,” যা প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের ভাবনা এবং ১৯৪৯ সালে নির্মিত গণতান্ত্রিক স্থাপত্যের বিরোধী। নিজের বক্তব্যের সঙ্গে তিনি সংবিধানের কথা-প্রধান লাল মলাটযুক্ত একটি কপি থেকে উদ্ধৃতি দেন—যেখানে লেখা রয়েছে: “আপনি যখন এই সামান্য বইটি হাতে নেন, তখন আপনি জাতির ভবিষ্যতই ধারণ করছেন।”
এছাড়া তিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশকে কটাক্ষ করে বলেন, “ফড়নবিশের আগে চিন্তা করা উচিত, তারপর বলা উচিত।” তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ২০২০ এবং ২০২২ সালের সংসদীয় জবাব সংক্রান্ত একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করেন, যেখানে বলা আছে—সরকার "Urban Naxal" শব্দটি অফিসিয়ালি ব্যবহার করে না। উল্লেখযোগ্যভাবে, জয়রাম রমেশ মোদি এবং অমিত শাহকে একসময় একই লাল মলাটযুক্ত সংবিধান কপি হাতে পাওয়া ছবি প্রকাশ করেন, যা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রতীকী লড়াইয়ের প্রেক্ষিতে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী মহারাষ্ট্রে নির্বাচনী প্রচারে একই রকম লাল মলাটের সংবিধান হাতে নিয়ে সভা করেছেন—বিশেষ করে নাগপুরের সম্বিধান সম্মান সম্মেলন-এ তাঁর বক্তব্য ইতিমধ্যেই শাসকদলের বিরুদ্ধে নতুন রাজনৈতিক আবহ তৈরি করেছে। বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংবিধানকে কেন্দ্র করে এই প্রতীকী এবং বক্তব্য ভিত্তিক রাজনৈতিক সংঘর্ষ আরও তীব্র আকার ধারণ করবে বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
