আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুম্বইয়ে গত কয়েকদিন ধরে টানা ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে শহরের একাধিক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সোমবার শহরের কেন্দ্রীয় অংশ মাতুঙ্গা এলাকায় একটি বেসরকারি স্কুলবাস জলে আটকে পড়ে। জানা গিয়েছে বাসটিতে ছয়জনের বেশি শিশু এবং দুজন স্টাফ সদস্য ছিলেন। প্রায় আধঘণ্টা ধরে বাসটি জলমগ্ন রাস্তায় আটকে থাকার পর স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। এরপর শিশু ও স্টাফদের উদ্ধার করে। পরে তাঁদের মাতুঙ্গা পুলিশ স্টেশনে নিরাপদে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যাচ্ছে স্কুলবাসের দরজা পর্যন্ত জল উঠে এসেছে। এমনকী জল হাঁটু থেকে বুক পর্যন্ত উচ্চতায় ছিল। উদ্ধারকর্মীরা সেই জল ভেঙেই শিশুদের নিরাপদে বের করে আনেন। আশপাশের এলাকাও মারাত্মকভাবে জলমগ্ন অবস্থায় ছিল। সড়কের অন্যান্য গাড়িও জলে আংশিক ডুবে গিয়েছিল, ফলে যান চলাচল একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
মুম্বইয়ের আবহাওয়া পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাওয়ায় ভারতের আবহাওয়া দপ্তর পুরো শহরের জন্য ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করে। এর প্রেক্ষিতে বৃহন্মুম্বই পৌরনিগম (BMC) শহরের যেসব স্কুল ও কলেজ দুপুর ১২টার পর চালু হয়, সেগুলোর উদ্দেশে অবিলম্বে ছুটি ঘোষণা করে। সকালবেলার শিফটে চালু থাকা স্কুলগুলোও আধ বেলা হয়ে ছুটি দিয়ে শিক্ষার্থীদের আগেভাগে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার জেরে মুম্বই পুলিশ একটি এক্স (পূর্বতন টুইটার) পোস্টে শহরবাসীকে সতর্ক করে জানায়, অনাবশ্যক যাতায়াত এড়িয়ে চলার জন্য। পাশপাশি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরোনোর অনুরোধ করা হয়। পুলিশ আরও জানিয়েছে যে জলাবদ্ধতা এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া যান চলাচলকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, নিচু এলাকাগুলি যেমন আন্ধেরি সাবওয়ে ও লোকহান্ডওয়ালা কমপ্লেক্সে অতিরিক্ত জল জমে গিয়েছে। এতে ট্রাফিক চলাচলে চরম সমস্যা দেখা দেয়। শহরের প্রাণ হিসেবে পরিচিত লোকাল ট্রেন পরিষেবাও এই দুর্যোগে ব্যাহত হয়েছে। জানা গিয়েছে সেন্ট্রাল রেলওয়ের হারবার লাইনে কিছু নিম্নভূমি অংশে ট্র্যাকে জল জমে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। বিশেষ করে কুরলা ও তিলকনগর স্টেশনের মধ্যবর্তী অংশে ট্র্যাক চেঞ্জিং পয়েন্টে সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে পরিষেবাতেও অনেক দেরি হয়।
যদিও লোকাল ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, তবুও গড়ে ১০ মিনিট দেরিতে চলছে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। শহরের কিছু অংশে টানা বৃষ্টিতে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়, ফলে যান চলাচল আরও ধীর হয়ে পড়ে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিনেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে, ফলে নাগরিকদের সতর্ক ও সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ হাঁটতে বেরিয়েছিলেন তিন প্রৌঢ়া, কয়েক মুহূর্তে চরম পরিণতি তাঁদের! অসমে হাড়হিম কাণ্ড ...
প্রসঙ্গত, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ শীঘ্রই পরিণত হতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। এর ফলে ধেয়ে আসছে প্রবল দুর্যোগ। এই নিম্নচাপের ফলে অন্ধ্রপ্রদেশের পাঁচটি জেলায় জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ১৯ আগস্ট অর্থাৎ মঙ্গলবার সকালে দক্ষিণ ওড়িশা এবং উত্তর অন্ধ্র প্রদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়। মৌসম ভবনের তরফে জানানো হয়েছে, ‘এই ঘূর্ণিঝড় ১৯ তারিখে দক্ষিণ ওড়িশা এবং উত্তর অন্ধ্রের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাব হিসেবে অন্ধ্র প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে’। আবহাওয়ার এই পরিস্থিতির কারণে বিশাখাপত্তনম, অনাকাপল্লী, ডঃ বি আর অম্বেদকর কোনসীমা, কাকিনাডা ও পশ্চিম গোদাবরী জেলায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
পাশাপাশি, শ্রীকাকুলম, পার্বতীপুরম মন্যম, পূর্ব গোদাবরী, আল্লুরি সীতারামারাজু, এলুরু, কৃষ্ণা, বাপতলা, পালনাডু, প্রকাশম ও নন্দ্যাল জেলায় জারি করা হয়েছে কমলা সতর্কতা। কুর্নুল, অনন্তপুর, ওয়াইএসআর কড়পা, নেল্লোর, তিরুপতি ও চিত্তুর জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশাখাপত্তনমের ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা কেন্দ্র জানিয়েছে, উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা ঝোড়ো হাওয়া (ঘণ্টায় ৩০–৪০ কিলোমিটার বেগে) ও ভারী বর্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে শ্রীকাকুলম, বিজিয়ানাগরম, বিশাখাপত্তনম, অনাকাপল্লী, কাকিনাডা, কোনসীমা, পূর্ব গোদাবরী এবং ইয়ানাম জেলায় পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
