আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিনে এক, রাতে আরেক। সকালে শিক্ষকতা এবং রাতে খাবার ডেলিভারি! এভাবেই দিন যাপন বিহারের এক স্কুল শিক্ষকের। সরকারি চাকরি করেও কেন খাবার ডেলিভারির মত কাজের প্রয়োজন পড়ছে ওই শিক্ষকের? অনেকের মতে, এ হেন ঘটনা সে রাজ্যে শিক্ষকদের করুণ অবস্থাতাই তুলে ধরে।
শিক্ষক অমিত কুমার। তাঁর কঠিন জীবনসংগ্রামের কথা নেট দুনিয়ায় ভাইরাল। সকালে বাচ্চাদের পড়িয়ে রাতে খাবার ডেলিভারি করে একটি বহুজাতিক সংস্থার হয়ে। তাও স্ত্রীর পরামর্শে। সংসার চালাতে খাবার ডেলিভারি বয়ের পেশাই বেছে নিয়েছেন অমিত।
বিহারের একটি সরকারি স্কুলে অমিত কুমার পার্শ্ব শিক্ষক হিসাবে কর্মরত। বেতন মাসে মাত্র ৮ হাজার টাকা। এই অগ্নিমূল্যের বাজারে ওই অল্প টাকায় সংসার চালানো দায়। তাই সংসার চালাতে ডেলিভারি বয়ের পেশাই ভরসা এই শিক্ষকের।
২০১৯ সালে, অমিত সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেন। ১০০-র মধ্যে পান ৭৪ নম্বর। দীর্ঘ অপেক্ষা, করোনা অতমারীর পর ২০২২ সালে বিহারের ভাগলপুরের কুমার পরিবারে খুশির খবর আসে। পরিবারের বড় ছেলে অমিত কুমার পায় সরকারি চাকরি। অমিতের কথায়, "আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও বেতনের টাকা বাড়েনি। স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন ৪২,০০০ টাকা, সেখানে আমি পাই মাত্র ৮ হাজার টাকা। কাজের কোনও কমতি নেই। অথচ তাঁরা আমার তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি বেতন পান। এই অবস্থায় সংসার চালাতে বহুজাতিক খাবার সরবারকারী সংস্থার ডেলিভারি বয়ের কাজকেই বেছে নিয়েছি।"
অমিতের দাবি, চলতি বছরের শুরুতে অমিত এবং অন্যান্য পার্শ্ব শিক্ষকরা চার মাস বেতন পাননি। ফলে সংসার চালাতে বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধার করতে হয়েছিল। কিন্তু ঋণের টাকায় আর কতদিন চলা যায়। শেষপর্যন্ত তাই স্ত্রীর পরামর্শে, খাবার সরবারহ কর্মী হিসাবে ওই বহুজাতিক সংস্থায় যোগ দেন।
অমি কুমার বলেছেন, 'আমি যে টাকা মাইনে পাই তাতে আমি সংসার চালাতে পারছি না। আমি যদি নিজে না খেতে পারি, তাহলে আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কী করে খাওয়াবো? আমাকে আমার বৃদ্ধ মায়ের দেখভাল করতে হয়। তাই আমি দু'টি কাজ করতে বাধ্য হচ্ছি।'
এ খবর জানাজানি হতেই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। একজন অভিভাবক প্রশ্ন, "শিক্ষকরা আমাদের সমাজের মেরুদণ্ড, তাঁদের কেন পরিবারের ভরণপোষণের জন্য সংগ্রাম করতে হবে?" শিক্ষকদের এই অবস্থা হলে ছাত্রদেরও হাল খারাপ হবে। অনেকের মতে, শিক্ষকরা অতিরিক্ত পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ফলে পড়াশুনোও ভালো হয় না। এই অবস্থা বিহারের শিক্ষাক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত শিক্ষক ও তাঁদের দুরাবস্থার কথাই প্রমাণ করে।
