আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারে বিশেষ সারসংক্ষেপ সংশোধন (Special Intensive Revision – SIR) প্রক্রিয়া ঘিরে বিরাট অনিয়মের অভিযোগ তুলল কংগ্রেস। দলটির দাবি, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষপাতদুষ্ট ও অস্পষ্ট পদ্ধতির ফলে লক্ষাধিক প্রকৃত ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, অথচ বহু মৃত ব্যক্তির নাম এখনও রয়ে গেছে চূড়ান্ত খসড়া ভোটার তালিকায়। এর ফলে নির্বাচনী স্বচ্ছতা ও ভোটাধিকার সুরক্ষায় গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।
প্রথম অভিযোগ: মুছে দেওয়া ভোটারদের তথ্য অনলাইনে নেই
কংগ্রেস জানিয়েছে, ১ আগস্ট অনলাইনে প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় ২৪ জুন ২০২৫-এর আগে বিদ্যমান তালিকা থেকে বাদ দেওয়া নামগুলো দেখানো হয়নি। ইসি নিজেই স্বীকার করেছে, প্রায় ৬৫ লক্ষ নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অনলাইনে সেই তালিকা দেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোকে কেবল হার্ড কপি দেওয়া হয়েছে, যেখানে বাদ পড়া ভোটারের ইপিক নম্বর (EPIC) বা ঠিকানা নেই। ফলে যাচাই প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠেছে।
দ্বিতীয় অভিযোগ: কারণ অস্পষ্ট
হার্ড কপির প্রতিটি পাতার উপরে কেবল লেখা আছে — "Enumeration form is not submitted"। অথচ নির্দিষ্ট কারণ — যেমন ভোটার মারা গেছেন, স্থায়ীভাবে সরে গেছেন, খুঁজে পাওয়া যায়নি বা একাধিক তালিকায় নাম রয়েছে — কিছুই উল্লেখ নেই। কংগ্রেসের বক্তব্য, এই অস্পষ্টতা স্বচ্ছতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং বহু ভোটার না জেনেই চিরতরে বাদ পড়ে যাবেন।
তৃতীয় অভিযোগ: বুথ নম্বরে বিশৃঙ্খলা
এসআইআর প্রক্রিয়ায় বুথ সংখ্যা ৭৭ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার। কিন্তু নতুন বুথগুলিকে আলাদা নম্বর না দিয়ে সবগুলো বুথের নম্বর নতুন করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পুরনো বুথ নম্বরের সাথে নতুন নম্বর মিলিয়ে দেখা এক দুঃসাধ্য কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) পুনর্বিন্যাসের ফলে আগের ফর্ম ও নথি সংগ্রহেও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
চতুর্থ অভিযোগ: প্রকৃত ভোটার বাদ, মৃতরা তালিকায়
কংগ্রেসের সমীক্ষায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তেঘরা বিধানসভা এলাকার পুরনো বুথ ২৭৪ (নতুন নম্বর ২৩৭)-এ ৮ জন প্রকৃত ভোটার, যাদের বৈধ ইপিক নম্বর রয়েছে, তারা বাদ পড়েছেন। অথচ একই বুথে ৩৭ জন মৃত ব্যক্তির নাম এখনও রয়ে গেছে। দলটির অভিযোগ, “মৃতদের নাম মুছে দেওয়ার বদলে জীবিত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।”
পঞ্চম অভিযোগ: ভুল সংশোধনে বাধ্যতামূলক ‘ফর্ম ৬’
যারা বাদ পড়েছেন, তাদের অভিযোগ জানানোর পর জেলা প্রশাসন ‘ফর্ম ৬’ পূরণ করতে বলছে, যা নতুন ভোটার হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ব্যবহৃত হয়। অথচ সংশোধনের জন্য ‘ফর্ম ৭’ (আপত্তি) ও ‘ফর্ম ৮’ (তথ্য সংশোধন) ব্যবহার করা উচিত। অর্থনীতিবিদ ও কর্মী প্রসেনজিৎ বসুর অভিযোগ,
> “ইসি ইচ্ছাকৃতভাবে ফর্ম ৭ ও ৮ ব্যবহার নিরুৎসাহিত করছে। এতে তারা বলতে পারবে অভিযোগ প্রায় নেই। বাদ পড়া মানুষকে নতুন ইপিক কার্ডের জন্য অযথা ভোগান্তি পোহাতে হবে।”
তিনি সতর্ক করেছেন, নতুন ইপিক কার্ড ডাকযোগে পাঠানো হবে, যা নির্বাচন আগে বিশাল লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
কংগ্রেসের দাবি
১. বুথভিত্তিক বাদ দেওয়া ভোটারদের তালিকা, বাদ দেওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ ও ইপিক নম্বরসহ অনলাইনে অনুসন্ধানযোগ্য ফরম্যাটে প্রকাশ করতে হবে।
২. প্রতিটি বুথের BLO যেন ব্যক্তিগতভাবে বাদ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন।
৩. BLO বা ইসি কর্তাদের ভুল শুধুমাত্র ফর্ম ৮ এর মাধ্যমে সংশোধন করতে হবে, ফর্ম ৬ নয়।
৪. খসড়া ভোটার তালিকার সংশোধনের শেষ তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়াতে হবে এবং চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ পিছিয়ে দিতে হবে।
কংগ্রেসের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এই রিপোর্ট প্রকাশ পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে — এই বাদ পড়া নামগুলির অধিকাংশ কি নির্দিষ্ট ভোটব্যাঙ্ককে লক্ষ্য করে? নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই এই প্রশ্ন আরও জোরালো হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
