আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারের ২০২৫ বিধানসভা নির্বাচনে প্রশান্ত কিশোরের বহুল প্রচারিত রাজনৈতিক অভিষেক যে প্রত্যাশিত ফল দিতে পারেনি, তা একাধিক এক্সিট পোলের পূর্বাভাসেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন হিসেবের সম্মিলিত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) আরামেই জয় ছিনিয়ে নিতে পারে এবং ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারে, আর নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা জন সুরাজ পার্টি (জেএসপি) তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না।


নির্বাচনের আগে প্রশান্ত কিশোর নিজেই বলেছিলেন, তার দল হয় থাকবে “আর্শ পর” — চরম সাফল্যের শিখরে, নয় “ফর্শ পর”— সম্পূর্ণ ব্যর্থতার মুখে। মাঝামাঝি কোনো জায়গা থাকবে না। এক্সিট পোলের ইঙ্গিত বলছে, আপাতত জন সুরাজের জন্য কিশোরের ভবিষ্যদ্বাণীর দ্বিতীয় অংশটাই সত্যি হতে চলেছে।


মুখ্য সংস্থাগুলোর সমন্বিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় এনডিএ সহজেই ১২২–এর ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে যেতে পারে। আরজেডি-নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন (এমজিবি) পেতে পারে ৭০ থেকে ১০৮ আসন। প্রশান্ত কিশোরের জেএসপি, বহুল আলোচিত প্রচারাভিযান ও ব্যাপক প্রচেষ্টার পরও, সীমাবদ্ধ থাকতে পারে ০ থেকে ৫ আসনের মধ্যে। ছোট দলসমূহ ও নির্দলীয়রা মিলে সর্বাধিক ৮টি আসন পেতে পারে বলে অনুমান।


তবে এক্সিট পোলের সংখ্যাই চূড়ান্ত নয়—বিশেষত বিহার নির্বাচনে এর আগেও একাধিকবার অনুমান ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তাই ১৪ নভেম্বর ঘোষণা হতে যাওয়া আসল ফলাফলই শেষ কথা বলবে।
প্রশান্ত কিশোরের জন্য এই নির্বাচন শুধু রাজনৈতিক অভিষেকের পরীক্ষা নয়, বরং তার দীর্ঘ তিন বছরের পদযাত্রা ও “জন সুরাজ” চিন্তার বাস্তব মূল্যায়নের মঞ্চ ছিল। রাজ্যের গ্রাম-গঞ্জ ঘুরে তিনি যে স্বচ্ছ, ইস্যুভিত্তিক রাজনীতির বার্তা ছড়িয়েছিলেন—চাকরি, শিক্ষা, কৃষি, অভিবাসন—তা কি আদৌ পুরোনো জোটভিত্তিক, জাতপাত-কেন্দ্রিক রাজনীতির ভেতরে জায়গা করে নিতে পারবে কিনা, সেটাই ছিল বড় প্রশ্ন।


নির্বাচনী প্রচারে কিশোরের সভাগুলোতে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তার বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, এবং দলের হলুদ পতাকা বিহারের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে দৃশ্যমান ছিল। জেএসপি ২৩৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে, যা নতুন দলের জন্য নজিরবিহীন উপস্থিতি।


কিন্তু এক্সিট পোলের পূর্বাভাস বলছে—এই জনপ্রিয়তা এখনও ভোটে রূপান্তরিত হতে পারেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জন সুরাজের ভোট শেয়ার রাজ্যের বৃহত্তর সমীকরণকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো পরিমাণে একত্রিত হয়নি। বরং বিভিন্ন আসনে তাদের ভোট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাওয়ায় দলটি উল্লেখযোগ্য কোনো আসন নিশ্চিত করতে পারেনি।


নির্বাচনের ফলাফল যেমনই হোক, প্রশান্ত কিশোরের এই রাজনৈতিক যাত্রা বিহারের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে নতুন প্রশ্ন তুলেছে—বিতর্ক, সাম্প্রদায়িকতা ও জাতপাতের রাজনীতির মাঝখানে কি আদৌ ইস্যুভিত্তিক, বিকল্প রাজনীতির জায়গা আছে? আর যদি থাকে, তবে সেই জায়গা তৈরি করতে আর কতটা সময় লাগবে? ১৪ নভেম্বরের গণনার পরই তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের রূপরেখা আরও স্পষ্ট হবে।