আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহার বিধানসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)-র। বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, এনডিএ ২০৯টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। মহাগঠবন্ধন এগিয়ে রয়েছে ২৯টি আসনে। বাকি আসনে এগিয়ে রয়েছে অন্যান্যরা। ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভার জাদুসংখ্যা ১২২।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিহারে এনডিএ জোটের বিজেপি ৯৫টি, নীতিশ কুমারের জেডিইউ ৮৫টি, চিরাগ পাসওয়ানের এলজেপি ১৯টি  আসনে এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে, বিরোধী মহাগঠবন্ধনের তথৈবচ অবস্থা। একা কুম্ভ তেজস্বী যাদবে আরজেডি। তারা ২৫টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। ধুলোয় মিশে গিয়েছে কংগ্রেস। রাহুলের দল মাত্র দু’টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। বামেরাও এক সংখ্যক আসনেই এগিয়ে রয়েছে। 

বিহারে একমাত্র খবরে রয়েছেন তেজস্বী যাদব। রাঘোপুরে ২২ রাউন্ডের গণনার শেষে আট হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। মোকামায় জয়ী শাসকজোটের জেডিইউয়ের জেলবন্দি প্রার্থী অনন্ত সিংহ ২৮ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন। ভোটের প্রচারের সময়েই খুনের মামলায় গ্রেফতার হন তিনি।

এসআইআর কী বলছে? উত্তর পেতে নজর ছিল বিহারের গণনার দিকে। বেলা গড়াতে দেখা গেল, এসআইআর-এ সাপে বর হচ্ছে এনডিএ জোটের। নিরঙ্কুশ জয় পেতে চলেছে তারা। বিহারে যে এনডিএ জিতবে, সব সংস্থার বুথ ফেরত সমীক্ষা স্পষ্ট জানিয়েছিল তা। তবে এখনও পর্যন্ত গণনার পরিসংখ্যান যা, ফারাক এতটা হতে পারে, তা ভাবনার বাইরে ছিল বোধহয় সংস্থাগুলির। 

বিহারে দলের সাফল্যে দিল্লিতেও উল্লাসে মেতেছেন বিজেপি কর্মীরা। সংবাদসংস্থা এএনআই প্রকাশিত এক ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, দলীয় পতাকা, ঢোল নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন বিজেপির মহিলা সমর্থকেরা। ফলাফল নিশ্চিত হওয়ার পরে বিহারবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও।

বিশেষজ্ঞদের মত, বিহার ভোটে এনডিএ জোটের লক্ষ্য ছিল ‘মহিলা ভোট’। সেই লক্ষ্যে তারা সফল। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে, মুখ্যমন্ত্রী  মহিলা রোজগার যোজনার সূচনা করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ৭৫ লক্ষ মহিলার প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে একসঙ্গে ১০,০০০ টাকা স্থানান্তর করার কথা ঘোষণা করেছিলেন।  এনডিএ-র নির্বাচনী ইশতেহারেও স্পষ্ট উল্লেখ ছিল নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি। এক কোটি মহিলাকে লাখপতি দিদি প্রকল্পের আওতায় আনা প্রতিশ্রুতিগুলির মধ্যে অন্যতম।  তাতে বলা হয়েছিল, যে সব মহিলা ব্যবসা করতে চান, তাঁদের ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য করা হবে। এই সব প্রতিশ্রুতি মহিলা ভোট ঢেলে দিয়েছে এনডিএ-র ঝুলিতে।

অন্যদিকে, রাহুল মহাগঠবন্ধনের মিত্র, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের সঙ্গে বিহারে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিলেন। তাঁর ভোটাধিকার যাত্রা ২৩টি জেলা জুড়ে ১৬ দিনে ১,৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ অতিক্রম করেছিল। সেখানে ভোটার অধিকার এবং স্থানীয়দের সঙ্গে সংযোগ তৈরির উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। যা দেখে মনে হয়েছিল এনডিএ-র ডবল ইঞ্জিন সরকার ধাক্কা খাবে বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু হল বিপরীত। তৃণমূল-স্তরে জনসংযোগ এক সপ্তাহে সম্ভব হয় না। আরজেডি এবং কংগ্রেসের প্রচার ধরণও ছিল ভিন্ন। তেজস্বী চাকরি এবং বেকারত্ব নিয়ে প্রচার করেছিলেন এবং রাহুল গান্ধীর প্রচার ছিল ভোট চুরি এবং এসআইআর নিয়ে। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, উচ্চাকাঙ্খার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারতের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া রাজ্যটির মানসিকতা ভেঙে ফেলা কঠিন। যেখানে গড় মাসিক আয় মাত্র ৫,৭০০ টাকা। তা যতই মসৃণ, যুক্তিসঙ্গত বা বাস্তবসম্মত শোনাক না কেন।