আজকাল ওয়েবডেস্ক: একদিকে এনডিএ জোট। গেরুয়া শিবির, নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং আরও তিনটি দল। অন্যদিকে বিরোধী মহাগঠবন্ধন, অর্থাৎ মহাজোট। জোটে আরজেডি, কংগ্রেস এবং আরও তিন দল। সকাল সাড়ে ন'টা পর্যন্ত, বিহারে এনডিএ জোটের অন্যতম দুই শরিক দল, বিজেপি এবং জেডিইউ এগিয়ে রয়েছে ৭০ এবং ৭৩ আসনে। অন্যদিকে, মহাগঠবন্ধনের অন্যতম দুই শরিক দল, আরজেডি, আইএনসি অর্থাৎ কংগ্রেস, দুই দল এখনও পর্যন্ত এগিয়ে ৫১ এবং ১৪ আসনে। 

যদিও বুথ ফেরত সমীক্ষা থেকেই আলোচনায়, এমনিতেই দুর্বল ঘাঁটি, এবারেও চেষ্টাতেও সেখানে বিশেষ কোনও ফল করতে পারবে না কংগ্রেস। সকাল থেকে এগিয়ে থাকার পরিসংখ্যান দেখে, ইঙ্গিতও মিলছে তেমনটাই। ২০২০ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে, আরজেডি ৭৫টি আসন পেয়ে একক বৃহত্তম দল হিসেবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত হয়েছিল। তবে, কংগ্রেসের ফলাফল খারাপ ছিল সেবারেও। মাত্র ১৯টি আসন জিতেছিল। 

এবছরের, এগিয়ে থাকার পরিসংখ্যান দেখে মনে যেন একেবারে ২০২০-এর প্রতিচ্ছবিই দেখা যাচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, কেবলমাত্র নড়বড়ে  শরিকের কারণে, এবারেও প্রধান দুই বিরোধী রাজনৈতিক দলকে কাঁটায় কাঁটায় টক্কর দিলেও, শরিকের আসন সংখ্যার কারণেই, এবারেও পিছিয়েই যাবেন  তেজস্বী। যেন, নিজের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে, তেজস্বীর কাছে বোঝা হয়ে গেল, তাঁর শরিক দল।

তবে বিহারের রাজনীতি, আর সেই রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝে ওঠা জটিল।  ভোট এবং ভোটের ফলাফল কেমন হবে, কোনদিকে যাবে, তা নির্ভর করে সে রাজ্যের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উপর। বিহার আজও জাতপাতভিত্তিক রাজনীতি ও সামাজিক বিভাজনে জর্জরিত। ফলে ভোটারদের সিদ্ধান্ত অনেক সময় অর্থনৈতিক বাস্তবতার চেয়ে সামাজিক আনুগত্য বা স্বল্পমেয়াদি প্রলোভনের উপর নির্ভর করে। নগদ অর্থসাহায্য ও অন্যান্য নির্বাচনী প্রলোভন  সহজেই বিরোধী মনোভাবকে স্তিমিত করে দিতে পারে। উপরন্তু, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় ভোটের ফল অনুমান করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ২০২৩–২৪ অর্থবর্ষে বিহারের প্রতি ব্যক্তি মোট রাজ্য আয় (NSDP) ছিল মাত্র ₹৬০,৩৩৭, যা ভারতের গড় (₹১,৮৪,৯০৩)-এর প্রায় ৩০ শতাংশ। এটি দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। দারিদ্র্যের হারও ভয়াবহ। 

 ৬ নভেম্বর এবং ১১ নভেম্বর, দু'দফার ভোট গ্রহণ হয়েছে বিহারে। বিহারে মোট ভোটার উপস্থিতি ৬৬.৯১%, যা তাদের নির্বাচনী ইতিহাসে একটি রেকর্ড। কারণ, ২০২০ সালে বিহার নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন মাত্র ৫৭.২৯% মানুষ। বিহারের ইতিহাসের তথ্য, যখনই আগের ভোটের থেকে পাঁচ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পড়েছে, তখনই বদলে গিয়েছে সরকার। ১৯৬৭'র ভোট বড় উদাহরণ তার। ভারতের যে কোনও রাজ্যে বা অঙ্গ রাজ্যেও, পাঁচ বছরে ভোট দানের হার দশ শতাংশের আসেপাশে গেলে বা ছাড়িয়ে গেলে, সেই সরকারের আর পরত্যাবর্তন আর হয় না। বিহারের ক্ষেত্রে কী হতে চলেছে? বিহার কি রাজনীতির সেই হিসেবও বদলে দেবে এবার? অপেক্ষা সেটারই।