আজকাল ওয়েবডেস্ক: বেঙ্গালুরুর এক আবাসনে ‘নীতি পুলিশ’ ও অনধিকার প্রবেশের অভিযোগে প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নেমে বিপুল আলোচনার কেন্দ্রে এক তরুণী। আইনি নোটিস, সিসিটিভি ভিডিও প্রমাণ এবং ৬২ লক্ষ টাকার দেওয়ানি মামলার মাধ্যমে কীভাবে তিনি নিজের পক্ষে পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দিলেন, তার বিস্তারিত বিবরণ সম্প্রতি তিনি রেডিটের r/LegalAdviceIndia সাবরেডিটে প্রকাশ করেছেন। সেই পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর তাঁকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনই প্রশ্নও উঠেছে তাঁর দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে।

তরুণীর বক্তব্য অনুযায়ী, আইনি নোটিস পাঠানোর পর পরিস্থিতি দ্রুত তাঁর অনুকূলে মোড় নেয়। তিনি লেখেন, নোটিস পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট আবাসনের নির্মাতা নিজে ফ্ল্যাটে আসেন, সঙ্গে ছিলেন হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান। সেখানে তিনি নিজের বসার ঘরের ক্যামেরায় ধরা পড়া পুরো ঘটনার ভিডিও দেখান এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। নির্মাতা ও চেয়ারম্যান তাঁকে আশ্বাস দেন যে তাঁরা তাঁর পাশেই আছেন। সেদিনই জরুরি ভিত্তিতে একটি সোসাইটি মিটিং ডাকা হয়, যেখানে সমস্ত বাসিন্দার সামনে সেই ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়। এর পরই অভিযুক্ত কয়েকজন সদস্যকে সোসাইটির বোর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং আইন ভঙ্গের দায়ে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। শুধু তাই নয়, সোসাইটির তরফে লিখিতভাবে ক্ষমাও চাওয়া হয় তাঁর কাছে এবং সমস্ত সদস্যের কাছেই। তরুণীর দাবি, চেয়ারম্যান ওই বৈঠকে স্পষ্ট করে বলেন, বিষয়টি কোনও ব্যক্তিগত ঝামেলা নয়, বরং গোটা সোসাইটির নিরাপত্তার প্রশ্ন, এবং এই ধরনের ঘটনা ওই আবাসনে এই প্রথম।

তবে এখানেই থামেননি তিনি। এক সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শের পর তিনি ফৌজদারি মামলা না করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর পোস্টে লেখা রয়েছে, আইনজীবী তাঁকে বোঝান যে ফৌজদারি মামলা হলে তা বছরের পর বছর চলতে পারে, শাস্তি সামান্য হতে পারে এবং জেল হলেও সহজেই জামিন পাওয়া যায়। তার বদলে তিনি দেওয়ানি মামলার পথ বেছে নেন। মানহানি, অনধিকার প্রবেশ, শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহ, স্টকিং, বিরক্তি সৃষ্টি এবং গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তিনি ৬২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা দায়ের করেন এবং স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন জানান। তাঁর কথায়, আইনজীবী তাঁকে বলেছেন, “এখানে মানুষ সবচেয়ে বেশি যেটা বোঝে, সেটা টাকা।” মামলা দায়ের হওয়ার পরেই অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যরা তাঁর কাছে এসে মামলা তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেন। “ওরা বলেছে, ‘ যা ঘটার তা ঘটে গেছে, আর হবে না, দয়া করে কেসটা তুলে নাও’-কিন্তু আমি রাজি হইনি,” তিনি লেখেন। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, তিনি পিছু হটবেন না।

এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল তাঁর আগের একটি পোস্ট থেকে। সেখানে তিনি জানান, শনিবার রাতে নিজের ফ্ল্যাটে বন্ধুদের ডাকার পর প্রতিবেশীদের একাংশ আপত্তি তোলে। তিনি লেখেন, তিনি ২২ বছর বয়সি এক তরুণী, একাই থাকেন এবং বেঙ্গালুরুর একটি নামী আবাসনে নিজের কেনা ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। তাঁর দাবি, এক প্রতিবেশী দরজায় কড়া নাড়ে এবং বলে যে ওই সোসাইটিতে ‘ব্যাচেলর’দের থাকার অনুমতি নেই, সঙ্গে ফ্ল্যাটের মালিককে ফোন করতে বলা হয়। তিনি যখন জানান যে তিনিই ফ্ল্যাটের মালিক, তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। তাঁর অভিযোগ, চার-পাঁচজন মধ্যবয়সি পুরুষ কোনও অনুমতি ছাড়াই তাঁর বসার ঘরে ঢুকে পড়ে ‘চেক’ করার অজুহাতে, তাঁকে মদ্যপান ও গাঁজা সেবনের অভিযোগে দোষারোপ করে এবং পরদিনই ফ্ল্যাট ছাড়ার হুমকি দেয়। পরে পুলিশ ডাকা হলেও, তিনি দাবি করেন, পুলিশ জানতে পেরে যে তিনি ফ্ল্যাটের মালিক এবং পুরো ঘটনাই ক্যামেরায় রেকর্ড হয়েছে, তখন আর বিষয়টি এগোয়নি।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে ওই তরুণী লেখেন, তাঁর কাছে আইনি জ্ঞান ও আর্থিক সামর্থ্য ছিল বলেই তিনি লড়াই করতে পেরেছেন, কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। ভাড়ায় থাকা বা অন্য শহরে কাজ করতে আসা বহু ব্যাচেলরের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তাঁর ভাষায়, আবাসনে মোরাল পুলিসিং বা নীতি পুলিশ একটি গুরুতর ও প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা। বিশেষ করে একা থাকা মহিলাদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব আরও গভীর। তিনি আশা প্রকাশ করেন, তাঁর এই লড়াই ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকাতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি জানান, আদালতের শুনানির পরেই তিনি পরবর্তী আপডেট দেবেন।

তবে এই ভাইরাল কাহিনি নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। একাধিক রেডিট ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, এত অল্প সময়ের মধ্যে দেওয়ানি মামলা দায়ের, নথি  দাখিল করা এবং অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া বাস্তবে কঠিন। কারও কারও মতে, পোস্টের ভাষা ও গঠন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি লেখার মতো। ফলে ঘটনাটি যতটা আলোড়ন তুলেছে, ততটাই বিতর্কও তৈরি করেছে- বাস্তব অভিজ্ঞতার সাহসী বিবরণ না কি অতিরঞ্জিত বা মনগড়া গল্প, সেই প্রশ্নের উত্তর আপাতত অধরাই।