আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার শুরু হতে যাওয়া সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরু হতেই তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। রবিবার কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে ডাকা রীতিনিষ্ঠ সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধী দলগুলি একযোগে দাবি জানায়—পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বারংবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি মধ্যস্থতার দাবি এবং নির্বাচনী রাজ্য বিহারে চলমান SIR (Special Intensive Revision) প্রক্রিয়া নিয়ে সংসদে বিস্তারিত আলোচনা হোক। এই অধিবেশনটি পহেলগাঁও হামলার পর প্রথম সংসদীয় অধিবেশন, যেখানে সাম্প্রতিক চার দিনের ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘর্ষ ও ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রেক্ষাপটও উঠে আসবে।
সর্বদলীয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ৫৪ জন সাংসদ। বৈঠক শেষে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু সাংবাদিকদের জানান, “সরকার আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে কোন বিষয় সংসদে উত্থাপিত হবে, তা শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করবে বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটি (BAC)।” তিনি বলেন, “আমরা সমস্ত দলের বক্তব্য শুনেছি। আলোচনা অবশ্যই হবে, তবে নিয়ম ও রীতিনীতি মেনে।” রিজিজু আরও বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট বা অন্য কারোর বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া তখনই দেওয়া সম্ভব, যখন সংসদে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি আলোচনায় ওঠে।”
লোকসভার কংগ্রেস উপনেতা গৌরব গগৈ বলেন, “আমরা দাবি জানিয়েছি প্রধানমন্ত্রী নিজে সংসদে এসে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—পহেলগাঁও হামলা, ট্রাম্পের মন্তব্য ও বিহারে SIR নিয়ে তাঁর অবস্থান ব্যাখ্যা করুন। দেশের সম্মান ও সেনাবাহিনীর মর্যাদা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের জবাব একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই দিতে পারেন।” শনিবার ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ভার্চুয়াল বৈঠকে এই তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, যেখানে ২৪টি দল অংশ নেয়। যদিও আম আদমি পার্টি (AAP) সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিল না, তারা জানায় যে তাদের অংশগ্রহণ সীমিত থাকবে শুধুমাত্র ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য।
আরও পড়ুন: ভয়ঙ্কর! নাগপঞ্চমীতে সাপ নিয়ে মিছিল! দেখলে শিউরে উঠবেন আপনিও
তবে AAP সাংসদ সঞ্জয় সিং সর্বদলীয় বৈঠকে উপস্থিত থেকে বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার বলছেন তিনি যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করেছেন। সরকারকে সংসদে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।” পাশাপাশি তিনি দিল্লির বস্তি উচ্ছেদ, বিহারের SIR এবং গত মাসে এয়ার ইন্ডিয়া বিমানের দুর্ঘটনা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। কমিউনিস্ট পার্টির এমপি সন্দোষ কুমার পি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই সংসদে এসে পহেলগাঁও হামলার বিষয়ে মুখ খুলতে হবে। সরকার এখনও পর্যন্ত কিছুই স্পষ্টভাবে জানায়নি।” বিজু জনতা দলের সাংসদ সসমিত পাত্র বলেন, “ওডিশায় বিজেপি শাসিত সরকারে আইন-শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। বলেশ্বরে এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে—সে বারবার বিজেপি এমপি, প্রশাসন, এমনকি মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের কাছে আরজি জানিয়েছিল, কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। সম্প্রতি পুরীতে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। রথযাত্রার সময় ঘটে যাওয়া পদদলনের ঘটনাও প্রশাসনিক ব্যর্থতার বড় উদাহরণ।” এছাড়া, বিরোধীরা বিচারপতি শেখর যাদবের সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক মন্তব্য নিয়েও সংসদে প্রশ্ন তোলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব গ্রহণের দাবি জানান।
এই প্রসঙ্গে রিজিজু বলেন, সরকার ইতিমধ্যেই বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করছে। দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি থাকা অবস্থায় তাঁর বাড়ি থেকে অগ্নিকাণ্ডের পর বিপুল পরিমাণ পুড়ে যাওয়া নগদ অর্থ উদ্ধারের ঘটনা সামনে আসে। প্রধান বিচারপতির নিযুক্ত কমিটি তাঁকে অভিযুক্ত করে, যার বিরুদ্ধে তিনি সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেছেন। রিজিজু জানান, “এই বিষয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়, কারণ BAC-এর অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত কোনও বিষয়ে অগ্রাধিকার স্থির করা যায় না। তবে বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর ইতিমধ্যেই ১০০ ছাড়িয়েছে।” এই পরিস্থিতিতে বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরুর আগেই সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে উত্তেজনা চরমে। এখন দেখার বিষয়, অধিবেশনে আদৌ গঠনমূলক আলোচনা সম্ভব হয় কিনা।
