আজকাল ওয়েবডেস্ক: আরাবলী পাহাড়ের ‘সংজ্ঞা’ এবং খননকার্য নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায় ঘিরে বিতর্ক চলছে। এই আবহে চমকপ্রদ তথ্য এল সামনে। সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গত সাত বছরে রাজস্থানে ৭১,৩২২টি ছোট এবং বড় অবৈধ খননের ঘটনা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ হাজারের বেশি শুধু আরাবলী লাগোয়া জেলাগুলিতেই। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪০, ১৭৫টি ঘটনার মধ্যে গত সাত বছরে রাজস্থানে অবৈধ খনন, পরিবহন, মজুত ইত্যাদি সংক্রান্ত ৭,১৭৩টি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪,১৮১টি শুধুমাত্র আরাবলী জেলারই। রাজস্থানে আরাবলী পর্বতমালায় ২০টি জেলা রয়েছে।

কংগ্রেসের পাঁচ বছরের শাসনের সঙ্গে বিজেপি সরকারের দুই বছরের সময়ের পরিসংখ্যানের তুলনা করে দলটির মুখপাত্র এবং প্রাক্তন তিনবারের বিধায়ক রামলাল শর্মা বলেছেন, “রাজস্থান সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট উদ্দেশ্য হল আরাবল্লীর একটি পাথরও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।” তিনি বলেন, “বিজেপি সরকার গত দুই বছরে অবৈধ খনন এবং খনি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।”

রামলালের দেওয়া সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ সালের মধ্যে আরাবলী জেলাগুলিতে অবৈধ খননের ২৯,২০৯টি ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। যেখানে ভজনলাল শর্মা সরকারের প্রথম দুই বছরে, অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ১০,৯৬৬। কংগ্রেস শাসনকালে আরাবলী জেলাগুলিতে অবৈধ খনিজ উত্তোলন কার্যকলাপের জন্য ৩,১৭৯টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। অন্যদিকে, বিজেপি সরকারের দুই বছরে ১,০০২টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

রিপোর্ট করা ঘটনা এবং দায়ের করা এফআইআর-এর মধ্যে পার্থক্য প্রসঙ্গে খনি ও পেট্রোলিয়াম বিভাগের প্রধান সচিব টি রবিকান্ত বলেন, “রিপোর্ট করা ঘটনা বলতে এমন সব ধরনের মামলা বোঝায় যেখানে খনি বিভাগ নিজে থেকেই নোটিশ জারি করা, জরিমানা আরোপ করা ইত্যাদি পদক্ষেপ নিয়েছে। যা এক ধরনের শাস্তিও বটে। অন্যদিকে, এফআইআর বলতে শুধুমাত্র থানায় দায়ের করা মামলাগুলিকেই বোঝায়।”

গত সাত বছরে রাজ্যজুড়ে অবৈধ খনির কার্যকলাপের জন্য ৩,৭৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে অশোক গেহলৌত সরকারের আমলে আরাবলি জেলা থেকে ১,৪১৫ জনকে এবং শর্মা সরকারের আমলে ৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এছাড়াও, গত সাত বছরে রাজ্যজুড়ে ৭০,৩৯৯টি যানবাহন, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে কংগ্রেস আমলে ২৯,১৩৮টি এবং বিজেপি সরকারের আমলে ১০,৬১৬টি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

আইনি ও বেআইনি খনি এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে গত কয়েক দশক ধরে পাহাড়গুলো এমনিতেই তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে নতুন সংজ্ঞাটি রাজস্থান এবং তার বাইরেও ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে।

পরিবেশ সচিবের অধীন একটি কমিটি কর্তৃক প্রস্তাবিত এবং ২০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট  অনুমোদিত নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, স্থানীয় ভূখণ্ড থেকে ১০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতায় অবস্থিত যে কোনও ভূমিরূপকে তার ঢাল এবং সংলগ্ন জমিসহ আরাবলি পাহাড়ের অংশ হিসেবে গণ্য করা হবে। এর ফলে এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে এই নতুন সংজ্ঞা পাহাড়টিকে খনিজ উত্তোলনের জন্য উন্মুক্ত করে দেবে। যদিও ২০ নভেম্বরের আদেশ অনুযায়ী পরিবেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, বিস্তারিত সমীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও নতুন খনিজ উত্তোলনের লিজ দেওয়া হবে না।