আজকাল ওয়েবডেস্ক: দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে জাতিগত সংঘাতে জর্জরিত মণিপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দীর্ঘ নীরবতা নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা যখন চরমে, তখন রাজ্য প্রশাসন ঘোষণা করল—ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে রাজ্যের সব ত্রাণ শিবির বন্ধ করে ৬০ হাজারের বেশি অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষকে পুনর্বাসন দেওয়া হবে। রাজ্য এখন রাষ্ট্রপতির শাসনের অধীনে। মুখ্যসচিব পিকে সিং জানিয়েছেন, তিন ধাপে বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথম ধাপ জুলাই মাসেই শুরু হয়েছে, দ্বিতীয় ধাপ অক্টোবরে, এবং চূড়ান্ত ধাপ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়া পরিবারদের ৩.০৩ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। যাঁদের বাড়ি জরাজীর্ণ হয়েছে, তাঁরাও কিছু সহায়তা পাবেন। তবে এখনও ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ তাঁদের নিজ গ্রামে ফিরতে পারবেন না বলে জানিয়েছে প্রশাসন। তাঁদের জন্য ১,০০০টি প্রিফ্যাব ঘর নির্মিত হচ্ছে।

তবে রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, এতবড় মানবিক সংকটেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন এখনও রাজ্যে পা রাখেননি? ২০২৩ সালের মে মাসে কুকি-মেইতেই সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে মোদি শুধু একবার লোকসভায় বক্তব্য রেখেছেন, তাও মাত্র কয়েক মিনিট। দুই বছর ধরে নিরব দর্শকের ভূমিকা নেওয়া মোদির নেতৃত্ব এবং দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা, মানবাধিকার কর্মী এবং নাগরিক সমাজ।

হিন্দুস্তান টাইমসের সূত্র অনুযায়ী, মোদির অবশেষে জুলাই মাসে মণিপুর সফরের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে, যদিও সফরের নির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত নয়। বিরোধীদের মতে, মোদির এই সম্ভাব্য সফর নিছক লোক দেখানো, যখন রাজ্যের বহু এলাকা এখনও মিলিশিয়া গোষ্ঠীর দখলে, এবং বহু কুকি ও মেইতেই পরিবার এখনও নিরাপদে ফিরতে পারছেন না। দ্য ওয়ায়ারের এক রিপোর্টে দাবি করা হয়, ইম্ফলের কুকি মালিকানাধীন বহু ঘরবাড়ি এখনও বিজেপি ঘনিষ্ঠ সশস্ত্র গোষ্ঠী অরম্বাই তেংগলের নিয়ন্ত্রণে।

সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারকে পুনর্বাসনের অগ্রগতি নিয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছে এবং বিচারপতি গীতা মিত্তলের নেতৃত্বে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে। এদিকে, মুখ্যসচিব পিকে সিং জানিয়েছেন, পাহাড় ও উপত্যকার মধ্যে চলাচল শিগগিরই চালু হবে এবং দুই সম্প্রদায়ের মানুষ চোখের সামনেই কৃষিকাজ করছেন, যা স্বস্তিদায়ক।

তবু, বিশ্লেষকদের মতে, যদি মোদি মণিপুর সফরে যানও, জনগণের বিক্ষোভ ও হতাশা মুখ থুবড়ে পড়া সরকার ও রাষ্ট্রের ব্যর্থতারই প্রতিফলন হবে। দুই বছর অপেক্ষা করে অবশেষে উপস্থিতি, আদৌ কি মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত করতে পারবে? প্রশ্ন রয়ে যায়।