আজকাল ওয়েবডেস্ক: অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়া জেলায় এক নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত এক বৃদ্ধ। জানা গিয়েছে অভিযুক্তের বয়স ৬২ বছর। অভিযুক্ত ওই বৃদ্ধের পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন মৃত্যু হয়েছে। বুধবার গভীর রাতে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্তকে স্থানীয় আদালতে পেশ করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সেই সময় টুনি শহরের উপকণ্ঠে কোমাটি চেরুভু হ্রদে ঝাঁপ দিয়ে 'আত্মঘাতী' হন তিনি।
জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি শৌচাগারে যাওয়ার কথা বলে পুলিশের কাছ থেকে সময় চেয়ে নেন। অভিযুক্তের নাম তাতিকা নারায়ণ রাও। খবর অনুযায়ী, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে শিশুদের যৌন নির্যাতন বিরোধী 'পকসো' (প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) আইন-সহ একাধিক গুরুতর ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্যাতিতা একাদশ শ্রেণির এক ১৩ বছরের ছাত্রী। অভিযোগ, রাও নিজেকে ওই ছাত্রীর 'ঠাকুরদা' পরিচয় দিয়ে স্কুল থেকে ভুলিয়ে নিয়ে আসেন। পুলিশ জানিয়েছে, এর পর তিনি মেয়েটিকে একটি মাঠে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে অন্য এক ব্যক্তি রাওকে বাধা দেন। তিনি জানতে চান, কেন ওই বৃদ্ধ ঝোপের আড়ালে মেয়েটিকে লুকিয়ে রেখেছেন এবং তার পোশাক খুলিয়েছেন। এর পরই ওই ব্যক্তি চিৎকার করে লোক জড়ো করেন সেখানে।
পরে পুলিশ রাওয়ের গ্রেপ্তারির খবর নিশ্চিত করে এবং জানায়, পকসো আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। অন্যদিকে রাওয়ের গ্রেপ্তারিকে কেন্দ্র করে তীব্র রাজনৈতিক ঝড় ওঠে। নির্যাতিতার বাবা-মা এবং দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজন সুবিচারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। স্কুলের অধ্যক্ষার গাফিলতির অভিযোগে তাঁর সাসপেনশনের দাবিও ওঠে।
অন্ধ্রের মন্ত্রী তথা শাসক দল তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) বরিষ্ঠ নেতা নারা লোকেশ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, "আমরা নির্যাতিতার পরিবারের পাশে দৃঢ় ভাবে আছি। দোষীরা যাতে কঠোর শাস্তি পায়, আমরা তা নিশ্চিত করব। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আমি আধিকারিকদের কড়া পদক্ষেপ করার আর্জি জানাচ্ছি।"
পাল্টা আসরে নেমেছে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন মোহন রেড্ডির দল ওয়াইএসআর কংগ্রেসও (ওয়াইএসআরসিপি)। দলের মহিলা শাখার মাধ্যমে তারা নির্যাতিতার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। ওয়াইএসআরসিপি-র দাবি, অভিযুক্ত রাও টিডিপি-রই নেতা ছিলেন।
এক বরিষ্ঠ পুলিশ আধিকারিক স্কুলের এই গাফিলতির কথা স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
একইসঙ্গে ওই আধিকারিক এই অপরাধ নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সমস্ত রাজনৈতিক দল ও সমাজকর্মীদের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিদ্বেষ ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেন। পাশাপাশি, নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ করে দেয় এমন কোনও ছবি বা ভিডিও ছড়ানোর বিরুদ্ধেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, পকসো আইনে এটি দণ্ডনীয় অপরাধ।
অন্ধ্রপ্রদেশ মহিলা কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেছে। তারা নির্যাতিতা ও তার পরিবারকে সুরক্ষা, চিকিৎসা এবং আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্টও তলব করেছে কমিশন। পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন রাওয়ের মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত এবং বিভাগীয় তদন্তের পরেই বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
