আজকাল ওয়েবডেস্ক: আহমেদাবাদের সেভেন্থ ডে অ্যাডভেন্টিস্ট হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল-এ দশম শ্রেণির এক ছাত্র খুন হওয়ার ঘটনার পর রাজ্যজুড়ে স্কুলগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার হয়েছে। নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হঠাৎ ব্যাগ তল্লাশি চালাচ্ছে। আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে চমকে দেওয়া তথ্য। শিক্ষক ও প্রশাসকরা জানিয়েছেন, ব্যাগের ভেতর শুধুই বই আর টিফিন নয়, পাওয়া যাচ্ছে মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, লাইটার, সিগারেট, ভ্যাপ, এমনকি পানির বোতলে ভরে আনা অ্যালকোহলও। এক প্রিন্সিপাল বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন— “এটি আশ্চর্যজনক এবং চিন্তার বিষয়। ক্লাসওয়ার্কের বাইরেও ছাত্রজীবন কতদূর বিস্তৃত হচ্ছে তা এতে স্পষ্ট।” অন্য এক প্রিন্সিপাল জানান— “আমরা হোয়াইটনার, লিপস্টিক, কাজল, নেইল ফাইলার, ডিওডোরেন্ট, মুখে খাওয়ার গর্ভনিরোধক ওষুধ, কন্ডোম, এমনকি বাড়তি জামাকাপড় ও জুতো পর্যন্ত পেয়েছি।”
তল্লাশির খবর অভিভাবকদের জানানো হলে কেউ কেউ বলেন, সন্তানরা তাদের কথা শোনে না। আবার অনেকেই বিষয়টিকে “বড় হয়ে ওঠার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া” বলে এড়িয়ে যান। একটি স্কুলের শিক্ষক জানান, বাজেয়াপ্ত সামগ্রী অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয় অভিভাবক-শিক্ষক বৈঠকের সময়। ঘটনার পর একটি স্কুল আরও কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। কাঁচি ও রাউন্ডারসহ ধারালো জিনিস স্কুলে আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন থেকে লিখিত অনুমতি ছাড়া এ ধরনের জিনিস আনতে দেওয়া হবে না। শুধু তাই নয়, তল্লাশিতে মিলেছে তাস, প্রেম ও পর্নোগ্রাফিক উপন্যাস, দামি কলম, গয়না, ব্যক্তিগত ডায়েরি, এমনকি নগদ টাকা ১০০–২০০ টাকারও বেশি।
আরও পড়ুন: দিল্লি দাঙ্গা মামলায় পুলিশের ভুয়ো সাক্ষী ও সাজানো প্রমাণ: আদালতের কড়া মন্তব্য
এক প্রিন্সিপাল মন্তব্য করেন— “ব্যাগ চেক করা কেবল উপরের স্তরটুকু দেখানো। ব্যাগের ভেতরের জিনিসগুলোই বাইরের পরিবেশ, বাড়ি, মোবাইল স্ক্রিন ও রাস্তাঘাটের প্রতিফলন। স্কুল সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করতে পারে, কিন্তু আসল কাজ হল ছাত্রছাত্রীদের বোঝানো কেন তারা এসব আনছে।” মনোবিজ্ঞানী ড. প্রশান্ত ভিমানি জানান, “পিয়ার প্রেসার বা সহপাঠীদের প্রভাব সবচেয়ে বড় কারণ। একজন ছাত্র কিছু আনলে বাকিরাও সেটি নকল করতে চায়। সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, এমনকি কে-পপ কালচার কিশোরদের প্রভাবিত করছে। তারা পর্দায় যা দেখে, সেটি নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করতে চায়।”
আরও পড়ুন: ভুয়ো ভোটার তালিকা সংক্রান্ত অভিযোগে কংগ্রেসের দাবির অনেকটাই স্বীকার করল নির্বাচন কমিশন
আরেক কাউন্সেলর স্মিতা ঘোষ বলেন, “ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অতিরিক্ত হিংস্র কনটেন্ট দেখার ফলে কিছু শিশু মনে করছে ব্লেড, কাটার বা চেইন স্কুলে নিয়ে আসা স্বাভাবিক এবং আত্মরক্ষার জন্য জরুরি।” তিনি আরও যোগ করেন, “বাড়ির পরিবেশও দায়ী। যেখানে সহজেই নেশাজাতীয় দ্রব্য পাওয়া যায়, সেখানে শিশুরা সেটিকে জীবনের অঙ্গ হিসেবে নিতে শুরু করছে।” আহমেদাবাদের ঘটনায় গুজরাট জুড়ে স্কুলগুলোর নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠে এসেছে। শিক্ষাবিদদের মতে, শুধু তল্লাশিতে সমস্যার সমাধান হবে না, পরিবার, সমাজ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া কিশোর-কিশোরীদের এ বিপজ্জনক প্রবণতা রোখা সম্ভব নয়।
