আজকাল ওয়েবডেস্ক: আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বা এয়ার-ডিফেন্স সিস্টেম এখন যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণের অন্যতম প্রধান উপাদান। শত্রু বিমান, ড্রোন, ক্রুজ মিসাইল কিংবা ব্যালিস্টিক মিসাইল—এসব সমস্যা টার্গেটে পৌঁছানোর আগেই সনাক্ত, অনুসরণ ও ধ্বংস করতে পারে শক্তিশালী এয়ার-ডিফেন্স নেটওয়ার্ক। কোনও দেশের প্রতিরক্ষা সাধারণত বহুস্তর বিশিষ্ট হয়—দীর্ঘ দূরত্বের ইন্টারসেপ্টর, মধ্য-পাল্লার ব্যাটারি, স্বল্প-পাল্লার পয়েন্ট ডিফেন্স এবং রাডার-নির্ভর কমান্ড লিঙ্ক একসঙ্গে কাজ করে একটি ঘন সুরক্ষা বলয় তৈরি করে। এই স্তরগুলো যত শক্তিশালী ও সংহত, ততই বাড়ে আকাশ মোকাবিলার ক্ষমতা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
এয়ার-ডিফেন্স প্রযুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখনও বিশ্বে শীর্ষে। তাদের বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় রয়েছে প্যাট্রিয়ট PAC-3, THAAD এবং জাহাজ-ভিত্তিক এগিস সিস্টেম। এগুলো বিমান, ক্রুজ মিসাইল এমনকি কিছু ব্যালিস্টিক মিসাইলও প্রতিহত করতে সক্ষম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাইপারসনিক অস্ত্র প্রতিরোধ ও মহাকাশ-ভিত্তিক সেন্সর প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে, যা তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্বব্যাপী নজিরবিহীন করেছে। মিত্র রাষ্ট্রগুলোতে এসব সিস্টেম মোতায়েন থাকায় এটি শুধু প্রতিরক্ষাই নয়, মার্কিন শক্তির কৌশলগত প্রক্ষেপণ হিসেবেও কাজ করে।
রাশিয়া
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই আকাশ প্রতিরক্ষায় বিশেষ দক্ষতার জন্য পরিচিত। তাদের S-400 এবং উন্নত S-500 Prometey সিস্টেম বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এয়ার-ডিফেন্স প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে অন্যতম। S-400 চারশ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে পারে, আর S-500 উচ্চতর উচ্চতায় ব্যালিস্টিক ও হাইপারসনিক হামলা প্রতিরোধের জন্য তৈরি। রাশিয়ার ঘন রাডার নেটওয়ার্ক ও মোবাইল লঞ্চার দেশটির বিশাল ভূখণ্ডে বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করে।
চীন
দ্রুতগতিতে নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়াচ্ছে চীন। তাদের HQ-9 ও HQ-22 সিস্টেম দীর্ঘ-পাল্লার প্রতিরক্ষার মেরুদণ্ড। উন্নত রাডার, স্যাটেলাইট লিঙ্ক ও কমান্ড সিস্টেমের সমন্বয়ে চীনের প্রতিরক্ষা দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ব্যাপক উৎপাদন ক্ষমতা এবং দ্রুত মোতায়েন সক্ষমতা চীনকে পশ্চিমা প্রযুক্তির ব্যবধান কমাতে সাহায্য করছে।
ইজরায়েল
বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর বলে পরিচিত ইজরায়েলের তিন-স্তর বিশিষ্ট এয়ার-ডিফেন্স। Iron Dome স্বল্প-পাল্লার রকেট প্রতিরোধে বিশ্বসেরা; David’s Sling মাঝারি পাল্লার হুমকি মোকাবিলা করে; আর Arrow সিস্টেম দীর্ঘ-পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিহত করে। ইজরায়েলের এসব সিস্টেম হাজার হাজার হামলা প্রতিহত করে কার্যকারিতার প্রমাণ দিয়েছে। রাডার, কমান্ড ও লঞ্চ ইউনিটের নিখুঁত সমন্বয় এই সিস্টেমগুলোর প্রতিক্রিয়ার সময়কে অত্যন্ত কম রাখে।
ভারত
ভারত এশিয়ার অন্যতম উন্নত এয়ার-ডিফেন্স নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। বর্তমানে রাশিয়ার S-400 পাশাপাশি দেশীয় আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা Akash এবং ভারত-ইজরায়েল যৌথ উদ্যোগে তৈরি Barak-8 পরিচালনা করছে। এসব সিস্টেম বিমান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের মিসাইল হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম।
সম্প্রতি অপারেশন সিন্দুরের সাফল্যে ভারতের একীভূত আকাশ প্রতিরক্ষা ও স্ট্রাইক সক্ষমতার দক্ষতা প্রমাণিত হয়েছে, যেখানে শত্রুপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করতে বহুস্তরীয় এয়ার-ডিফেন্স অসাধারণ সমন্বয় দেখায়। এরপর থেকেই ভারত DRDO-নেতৃত্বাধীন দীর্ঘ-পাল্লার SAM প্রোগ্রাম এবং দেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল শিল্ড গঠনে আরও গতি এনেছে। যদিও বিশ্বসেরা প্রতিরক্ষাগুলোর সঙ্গে ভারতের ব্যবধান এখনও কিছুটা আছে, তবু ভারত দ্রুত আত্মনির্ভরতার দিকে এগোচ্ছে।
ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া
ফ্রান্স পরিচালনা করে SAMP/T Aster সিস্টেম, যা মোবিলিটি ও নির্ভুলতার কারণে বিশেষ পরিচিত। যুক্তরাজ্য তাদের Sea Viper প্রতিরক্ষা ও ন্যাটো মিসাইল শিল্ডের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আকাশ প্রতিরক্ষা বিস্তৃত করেছে। জাপান স্তরভিত্তিক সুরক্ষা গড়েছে Patriot PAC-3 এবং Aegis সিস্টেম দিয়ে। দক্ষিণ কোরিয়া KAMD নেটওয়ার্কে দেশীয় ও বিদেশি প্রযুক্তির সমন্বয়ে নিজস্ব নিরাপত্তা বলয় মজবুত করছে।
আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ইজরায়েল আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও সক্ষমতায় শীর্ষস্থান দখল করে আছে। ভারত দ্রুত তাদের কাতারে উঠে আসছে, দেশীয় গবেষণা, উন্নয়ন ও কৌশলগত অংশীদারিত্বকে ভিত্তি করে। ভবিষ্যতে হাইপারসনিক অস্ত্র, ড্রোন ঝাঁক বা দ্রুতগতির মিসাইল—যে কোনও হামলা মোকাবিলায় ‘সনাক্ত, সিদ্ধান্ত, ধ্বংস’ করার ক্ষমতাই আসল শক্তি নির্ধারণ করবে।
