আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রেম কিংবা পরিবারের সম্মতি, পদ্ধতি যাই হোক না কেন, বিবাহ এবং সন্তানজন্মের পরে বহু দম্পতিই একাধিক কারণে বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন। কোথাও অভিযোগ থাকে বিবাহ বহির্ভূত অন্য সম্পর্কের, কোথাও অভিযোগ গার্হস্থ্য হিংসার, কোথাও বাবা-মা দু’ জনেই কর্মক্ষেত্র-সহ একাধিক বিষয় মাথায় রেখে একে অন্যের সম্মতিতে বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যা দেখা দেয়, দম্পতির বিচ্ছেদের পর সন্তান থাকবে কার কাছে তা নিয়ে। কখনও সন্তানের বয়স কয়েক মাস, কখনও কয়েক বছর।

মা দাবি করেন তাঁর কাছে থাকবে সন্তান, বাবা দাবি করেন থাকবে তাঁর কাছে। দু’ পক্ষের পরিবারও ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ে জটিল মামলায়। ফ্যামিলি আদালতে এক সিদ্ধান্তে সম্মত না হয়ে, অনেক ক্ষেত্রেই মামলার জল গড়ায় হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। তেমনই ১২ বছরের এক নাবালক কার কাছে থাকবে, তা নিয়েই বাবা-মায়ের টানপোড়েনের জল গড়ায় সর্বোচ্চ আদালতে। আর ওই মামলা প্রসঙ্গেই আদালত বেশকিছু পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে। 

আরও পড়ুন: সিরিয়ায় হামলা ইজরায়েলের, মুহূর্তে যা ঘটে গেল সংবাদ উপস্থাপিকার সঙ্গে, শিউরে উঠছে বিশ্ব, প্রতিক্রিয়া জানাল আমেরিকা...

ওই মামলা প্রসঙ্গে বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি প্রসন্ন বি ভারালের বেঞ্চ উল্লেখ করেছে যে কাস্টাডির আদেশ শিশুটির স্বাস্থ্যের উপর বড় প্রভাব ফেলেছে বিগত দিনে। আর সেই প্রসঙ্গেই বড় সিদ্ধান্ত। ১২ বছরের ওই শিশুর হেফাজত অর্থাৎ কাস্টাডি তার বাবার কাছে হস্তান্তরের আদেশ বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়েছে আদালত নাবালকের সর্বোত্তম স্বার্থে রায় পরিবর্তন করার অধিকার রাখে। সর্বভারতীয় এক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনের সূত্রে তথ্যও তেমনটাই।


মামলা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, ওই শিশুটির বাবা-মা ২০১১ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ওই শিশুর জন্ম দেন ২০১২ সালে। যখন তাঁরা আলাদা হয়ে যান, তখন শিশুটির বয়স এক বছরও হয়নি। একাধিক দিক বিচার করে তখন শিসুর দায়িত্ব যায় তার মায়ের কাছে।  মা ২০১৬ সালে পুনরায় বিয়ে করেন। তার দ্বিতীয় স্বামীর আগের বিয়ের দুটি সন্তান ছিল এবং বিয়ের পরে তাঁরা আরও এক সন্তানের জন্ম দেন। 

এতদূর পর্যন্ত ঠিক চললেও, আচমকা মামলা দায়ের করেন ওই শিশুর বায়োলজিক্যাল বাবা। তাঁর অভিযোগ ছিল, ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি শিশুটির অবস্থান সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। একাধিক বিষয়ে জানতে পারেন, যখন মা কিছু কাগজপত্রের জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যোগাযোগের কারণ ছিল শিশুটির মা, এবং মায়ের নতুন স্বামী পরিবার মিলে অন্য দেশে স্থানান্তরিত হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন।  ওই ব্যক্তির অভিযোগ, তিনি জানতে পারেন যে তার সম্মতি বা অজান্তেই শিশুটির ধর্ম হিন্দু থেকে খ্রিস্টান ধর্মে পরিবর্তন করা হয়েছে।

 

এরপর বাবা সন্তানের হেফাজতের জন্য একটি পারিবারিক আদালতের দ্বারস্থ হন, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। তিনি হাইকোর্টে এই মামলাটি চ্যালেঞ্জ করেন, সেখানে আদালত সন্তানের দায়িত্ব দেয় ওই ব্যক্তিকে। শিশুর মা এই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন, কিন্তু গত বছরের আগস্টে শীর্ষ আদালত তাঁর আবেদন খারিজ করে দেয়।

পরে তিনি আবার আদালতের দ্বারস্থ হন। নতুন করে আবেদন জানান। বলেন, নতুন নির্দেশ, আচমকা স্থান পরিবর্তনের নির্দেশ, অন্যত্র থাকা শিশুটির মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। নিজের অভিযগের পক্ষে তিনি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের রিপোর্টও পেশ করেন আদালতে। 

এই মামলাতেই আদালত জানায়, মামলায় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য, এবং সর্বোত্ত, অধিকার তার অবস্থানের। এসব অরসঙ্গে আদলত কখনওই একটি কঠিন সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারে না। প্রয়োজনে শিশুর কথা ভেবে যে কোনও সময় বদল হতে পারে নির্দেশ। 

মামলায় আদালতের পর্যবেক্ষণ, শিশুটির বয়স যখন ১১ মাস তখন ওই দম্পতি আলাদা হয়ে যায়। তারপর থেকে, শিশুটি তার বায়োলজ্যিকাল বাবার সঙ্গে মাত্র কয়েকবার দেখা করেছে, বাবার সঙ্গে তার সেই ধরনের কোনও বন্ধন তৈরি হয়নি। এই পরসিথিতিতে আচমকা কাস্টাডি নিয়ে মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা বিপর্যস্ত করে তার চেনা পরিবেশকে।

 

আদালতের পর্যবেক্ষণ, শিশুটির তার মায়ের, মায়ের নতুন স্বামী, অন্যান্য দুই দাদা এবং ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বসবাসে কোনও সমস্যা নেই, ছিল না। উলটে আচমকা বাবার কাছে থাকার সিদ্ধান্তে তার মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে প্রবলভাবে। তবে বাবার সন্তানের সঙ্গে দেখার যে আকাঙ্খা, তাকেও স্বীকৃতি দিয়েছে আদালত। মা’কেও সেই নির্দেশ দিয়েছে এবং স্পষ্টতই বাবা-মা’কে পূর্ব তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলে সন্তানের বড় হওয়ার দিকে, সুস্থ জীবন দানের দিকে আরও বেশি মনযোগী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।