আবু হায়াত বিশ্বাস, দিল্লি, ১৪ ডিসেম্বর: ভোট চুরি ইস্যুতে নির্বাচন কমিশন ও বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ কংগ্রেসের। কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলল তারা। রবিবার দিল্লির রামলীলা ময়দান থেকে মোদি সরকার ও কমিশনের যোগসাজশ নিয়ে সরব হলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী থেকে শচীন পাইলটরা। বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগের পাশাপাশি কমিশনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আবার দাবি করেন, কংগ্রেস হারলেও মুছে যায়নি। অটুট রয়েছে দলের মতাদর্শ। কিন্তু একবার নরেন্দ্র মোদি হারলে তাঁর নামগন্ধও থাকবে না। তাঁর কথায়,‘আমরা নির্বাচনে হেরেছি, তবুও লড়াইয়ে আছি। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা একটা নির্বাচনে হারলেই ‘নাম-নিশান’ বলে আর কিছু থাকবে না।’
এদিন বিজেপি-আরএসএসকে নিশানা করেন খাড়গে। দাবি করেন, আরএসএস-বিজেপির বপন করা বিভাজনের বীজ দেশের গরিব মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ। তাদের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেন কংগ্রেস সভাপতি। বিজেপি নেতাদের ‘গদ্দার’, ‘নাটকবাজ’ তকমা দিয়ে বলেছেন ভোটাধাকির রক্ষা ও সংবিধান বাঁচাতে ওদের ক্ষমতাচ্যুত করাতে হবে। দলের নেতা রাহুল গান্ধীর দাবি, নির্বাচন কমিশনের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে তারা দেশের নির্বাচন কমিশন, বিজেপির বা মোদির নয়। খাড়গে বিজেপিকে নিশানা করে বলেছে,‘এই লোকেরা আমাদের বন্দেমাতরমও চুরি করেছে। তারা জওহরলাল নেহরু এবং সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মধ্যে ফাটল তৈরি করে। গান্ধী এবং নেহেরু, আম্বেদকরকে আক্রমণ করে। এই বিশ্বাসঘাতকদের পরাস্ত করতে হবে।’
ভিড়ে ঠাসা রামলীলা ময়দানের মঞ্চ থেকে নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় তোলেন কংগ্রেস নেতারা। তাদের অভিযোগ, বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে কাজ করে কমিশন। পক্ষপাতমূলক আচরণ করে কমিশন। বিজেপির ‘কাঠপুতলি’-তে পরিণত হয়েছে কমিশন। রাহুল-প্রিয়াঙ্কা এদিন নির্বাচন কমিশনকে হুঁশিয়ারি দেন, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার, কমিশনার সুখবীর সিং সান্ধু এবং বিবেক জোশিকে দেশ কখনও ভুলবে না। মোদি সরকার তাদের যতই বাঁচানোর চেষ্টা করুক না কেন, একদিন ওদের দেশের কাছে জবাবদিহি করতেই হবে। রাহুল গান্ধী বলেন,‘নরেন্দ্র মোদি নির্বাচন কমিশনারদের রক্ষায় আইনে বদল এনেছেন, যাতে ওরা যা খুশি করলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাবেনা। কিন্তু মনে রাখুন, আমরা এই কমিশনারদের রক্ষার আইনে সংশোধন করব এবং তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করব। নির্বাচন কমিশন বিজেপির নয়, এটা বোঝা উচিত ওদের।’ রাহুল দাবি করেছেন, কংগ্রেসের ‘ডিএনএ’-তেই ‘সত্য’ রয়েছে, আর বিজেপি-আরএসএসের রাজনীতি ‘অসত্য’ ও ভোট চুরির ওপর দাঁড়িয়ে। ভোট চুরি মানে সংবিধান ও আম্বেদকরের আদর্শের ওপর আঘাত। তাঁর মতে, সত্য বনাম অসত্যের এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জিতবে কংগ্রেসের আদর্শ। সত্যকে হাতিয়ার করেই নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহদের ক্ষমতাচ্যুত করবে কংগ্রেস।
কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকে প্রিয়াঙ্কার খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ, একবার ব্যালট পেপারে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচনে লড়ে দেখুক। ব্যালটে ভোট হলে বিজেপি ক্ষমতায় কোনও দিন আসতে পারবেনা। বিহারে ৬৫ লাখ ভোটার বাদ দেওয়া হয়েছে। ভোটের আগে ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। এভাবেই ভোট চুরি হয়েছে বলে দাবি প্রিয়াঙ্কার। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অপব্যবহারের অভিযোগ তোলেন কংগ্রেস নেত্রী। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচনের আগে বিরোধী শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রীদের জেলে ঢোকায় বিজেপি। কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিরোধী নেতাদের নামে মিথ্যে করে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। আবার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা নেতাদের বিজেপিতে যোগদানের পর সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। বিজেপির ওয়াশিং মেশিনে দুর্নীতির অভিযোগ সাফ হয়ে যায়। এদিন দিল্লি লাগোয়া রাজ্যগুলির পাশাপাশি বাংলা থেকেও কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা রামলীলা ময়দানের জনসভায় এসেছিলেন।
