আজকাল ওয়েবডেস্ক: বর্ষা বিদায় নিতেই আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা শুরু হয়ে গিয়েছে। ভোরের হালকা শিরশিরানি আর দিনের ভ্যাপসা গরম- ঋতু পরিবর্তনের এই আবহে দিল্লিতে দেখা দিয়েছে এক নতুন উদ্বেগ। ঘরে ঘরে ভাইরাল জ্বর, সর্দি-কাশির দাপট। কিন্তু এ বারের ভোগান্তি যেন অন্য রকম। জ্বর দিন তিনেকের মাথায় ছেড়ে গেলেও পিছু ছাড়ছে না একটানা কাশি। থাকছে সপ্তাহ পার করেও। করোনা-স্মৃতি উস্কে দেওয়া এই নতুন আতঙ্কের নেপথ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাসের একটি সাব-টাইপ। নাম এইচ৩এন২।
দিল্লির সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলির আউটডোরে উপচে পড়ছে ভিড়। শিশু থেকে বয়স্ক, আক্রান্ত সব বয়সের মানুষ। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রতি বছরই এই সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ বাড়ে, যা ‘সিজনাল ফ্লু’ নামে পরিচিত। কিন্তু এ বছর এইচ৩এন২ ভাইরাসের দাপট অনেকটাই বেশি। পাশাপশি এর কিছু উপসর্গ রোগীদের দীর্ঘ দিন ধরে ভোগাচ্ছে।
আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
উপসর্গগুলি ঠিক কী কী?
চিকিৎসকদের মতে, এইচ৩এন২ সংক্রমণের লক্ষণগুলি সাধারণ ফ্লু-এর মতোই, তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে এর তীব্রতা বেশি।
প্রচণ্ড জ্বর: কাঁপুনি দিয়ে ১০১-১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর আসছে, যা সাধারণত দুই থেকে তিন দিন স্থায়ী হচ্ছে।
গা-হাত-পায়ে ব্যথা: জ্বরের সঙ্গে সারা শরীরে এবং পেশিতে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করছেন রোগীরা।
গলা ব্যথা ও মাথাব্যথা: গলায় খুসখুসে ভাব, ব্যথা এবং তীব্র মাথাব্যথা এর অন্যতম প্রধান লক্ষণ।
দীর্ঘস্থায়ী কাশি: সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই কাশি। জ্বর কমে যাওয়ার পরেও শুকনো কাশি সপ্তাহ দুয়েক, এমনকী মাসখানেক পর্যন্ত থাকছে। অনেকের ক্ষেত্রে কাশির দাপটে বুকে ব্যথাও হচ্ছে।
অন্যান্য লক্ষণ: এগুলি ছাড়াও নাক থেকে জল পড়া, হাঁচি, শারীরিক দুর্বলতা এবং ক্লান্তি দেখা যাচ্ছে রোগীদের মধ্যে। কিছু ক্ষেত্রে বমি ভাব বা ডায়েরিয়ার মতো উপসর্গও দেখা যাচ্ছে।
চিকিৎসা এবং সতর্কতা
এইচ৩এন২ একটি ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ। তাই এখানে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনও ভূমিকা নেই। অযথা নিজের ইচ্ছেমতো অ্যান্টিবায়োটিক খেলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি। চিকিৎসকদের মত অনুযায়ী, এই রোগের নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ নেই, সেকারণে মূলত উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করা হচ্ছে।
বিশ্রাম ও জলপান: রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে। শরীরকে সতেজ রাখতে প্রচুর পরিমাণে জল, ফলের রস বা স্যুপের মতো তরল খাবার খেতে হবে।
জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধই যথেষ্ট।
অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ: যাঁদের কো-মর্বিডিটি (ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কিডনির সমস্যা) রয়েছে বা যাঁরা বয়স্ক রোগী, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে চিকিৎসক অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ (যেমন- ওসেলটামিভির) দিতে পারেন।
ঘরোয়া টোটকা: কাশির উপশমে গরম জলে নুন দিয়ে গার্গল করা, আদা-মধু চা পান বা স্টিম (ভাপ) নেওয়া যেতে পারে।
রোগ ঠেকাতে বিশেষজ্ঞরা করোনার কালে শেখা মাস্ক পরা, ভিড় এড়িয়ে চলা এবং বারবার হাত ধোয়ার মতো সুরক্ষাবিধিগুলি মাথায় রাখতে বলছেন। তাঁদের মতে, আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, নিজে থেকে ওষুধ খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।
