ওটমিল যে একটি পুষ্টিকর, ভরপেট এবং ফাইবারযুক্ত প্রাতঃরাশ— তা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। কিন্তু যদি প্রতিদিন সকালে শুধু ওটস খাওয়াকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেন, তবে এবার প্লেটে একটু বৈচিত্র্য আনা জরুরি হতে পারে। ওটস হল এক ধরনের সিরিয়াল শস্য, যা দুধ, ফল, বীজ এবং বাদামের সঙ্গে খেতে দারুণ লাগে। তবে প্রতিদিন এটি খাওয়া কিছু মানুষের জন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে।
2
8
পুষ্টিবিদ ড. পবিত্রা এন. রাজ জানিয়েছেন, প্রতিদিন ওটস খাওয়া সকলের জন্য উপযুক্ত নয়। ওটসে স্বাভাবিকভাবে গ্লুটেন নেই, কিন্তু বেশিরভাগ ওটস প্রক্রিয়াকৃত হয় এমন কারখানায়, যেখানে গম, বার্লি ও রাই-এর মতো গ্লুটেনযুক্ত শস্যও প্রক্রিয়াকৃত হয়। ফলে ক্রস-কন্টামিনেশন হতে পারে। যাদের সিলিয়াক রোগ বা গ্লুটেন ইনটলারেন্স আছে, তাদের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে।
ড. রাজ বলেন, “এই ধরনের মানুষদের অবশ্যই ‘সার্টিফায়েড গ্লুটেন-ফ্রি’ ওটস বেছে নেওয়া উচিত, নইলে প্রদাহ, পেটের অস্বস্তি ও অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে
3
8
ওটসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমের জন্য ভাল। তবে হঠাৎ বেশি ফাইবার খেলে গ্যাস, পেট ফোলা ও অস্বস্তি হতে পারে। ড. রাজের পরামর্শ, “প্রতিদিন না খেয়ে ধীরে ধীরে ফাইবারের পরিমাণ বাড়ান। ছোট পরিমাণে শুরু করুন এবং দেখুন শরীর কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়।” এভাবে আপনি ওটসের গুণাগুণ উপভোগ করতে পারবেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই।
4
8
ওটসে থাকা ফাইটিক অ্যাসিড শরীরে ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং জিঙ্ক-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানের শোষণ কমিয়ে দিতে পারে। ফলে প্রতিদিন সকালে ওটস খাওয়া পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। ড. রাজ জানান, ওটস রান্নার আগে ভিজিয়ে রাখা বা ফারমেন্ট করলে ফাইটিক অ্যাসিডের মাত্রা কমে যায় এবং শরীর সহজে পুষ্টি শোষণ করতে পারে।
5
8
ওটস সাধারণত ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, তবে অতিরিক্ত খেলে উল্টে ওজন বেড়ে যেতে পারে। প্রতি ১০০ গ্রাম ওটসে প্রায় ৩৭৯ ক্যালোরি থাকে। ফলে বড় বাটিতে ফল-ওটসের পরিমাণ বেশি হলে অজান্তেই বেশি ক্যালোরি চলে আসে। ড. রাজের পরামর্শ, “পরিমাণে নজর দিন, আর প্রতিদিন বড় বাটি না খেয়ে মাঝে মাঝে স্মুদি, বা সবজিযুক্ত অমলেট বেছে নিন।”
6
8
ওটস পুষ্টিকর হলেও, এটি শরীরের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি সরবরাহ করে না। প্রতিদিন যদি প্রাতঃরাশে শুধুই ওটস খান, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি হতে পারে। ড. রাজ বলেন, “ওটস ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজে সমৃদ্ধ হলেও, সুষম পুষ্টির জন্য ফল, সবজি ও প্রোটিনও জরুরি।”
7
8
ওটস নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যকর। সপ্তাহে দু’তিন দিন ওটস খেলে এর উপকারিতা বজায় থাকে, কিন্তু প্রতিদিন খেলে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। ওটসে ফাইবার, আয়রন, বি ভিটামিন ও খনিজ প্রচুর থাকে। এর বিটা-গ্লুকান ফাইবার ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। জটিল কার্বোহাইড্রেট থাকার কারণে এটি দীর্ঘক্ষণ শক্তি বজায় রাখে। ওটসের লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রক্তে চিনির মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে পারে। এতে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে সহায়ক।
8
8
ওটসকে স্বাস্থ্যকর রাখতে ভারসাম্যপূর্ণভাবে খাওয়া জরুরি। সপ্তাহে কয়েকদিন ওভারনাইট ওটস বানিয়ে দই, চিয়া সিড ও ফলের সঙ্গে খান। বাকি দিনগুলিতে স্মুদি বা সবজিযুক্ত ডিমের পদ বেছে নিন। এভাবে আপনার প্রাতঃরাশ হবে পুষ্টিকর, বৈচিত্র্যময় ও ভারসাম্যপূর্ণ।