শনিবার অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলার কাশিবুগ্গার ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরে পদপিষ্টি হয়ে কমপক্ষে ১২ জন ভক্ত নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। একাদশী উপলক্ষে হাজার হাজার মানুষ বেসরকারিভাবে পরিচালিত মন্দিরে জড়ো হওয়ার সময় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মন্দির কর্তৃপক্ষ যদি ভিড় সম্পর্কে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করত, তাহলে ঘটনাটি এড়ানো যেত। ঘটনার পরপরই, সরকার এবং ক্ষমতাসীন টিডিপির মন্ত্রীদের বেশ কয়েকজন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, মন্দিরটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন এবং এনডাউমেন্টস বিভাগ দ্বারা পরিচালিত নয়।

অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের জারি করা এক বিবৃতি অনুসারে, মন্দিরের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে বহু সংখ্যক ভক্ত এক সঙ্গে মন্দিরের মধ্যে প্রবেশের চেষ্টা করায় পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। যার ফলে ভক্তদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, ঘটনার সময় প্রায় ১৫ হাজার ভক্ত ঘটনাস্থলে জড়ো হয়েছিলেন। সরকার জানিয়েছে যে ভিড়ের চাপে একটি রেলিং ভেঙে পড়েছিল। যার বিশৃঙ্খলা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। কারণ, প্রবেশ এবং প্রস্থান উভয় পথ একই পথ দিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বঙ্গালপুদি অনিতা বলেন, ভক্তরা উঁচু মন্দির প্রাঙ্গণে উঠছিলেন। তাঁর বক্তব্য উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে যে, এক তলায় অবস্থিত মন্দিরে ভক্তরা যখন উপরে উঠছিলেন তখন একটি রেলিং ভেঙে পড়ে, যার ফলে রেলিংয়ের কোণায় থাকা ভক্তরা পড়ে যান এবং অন্যরা তাঁদের উপর পড়ে যান।

সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, মন্দিরের ধারণক্ষমতা প্রায় ২০০০-৩,০০০ লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পূর্ব সমন্বয় ছাড়াই প্রায় ২৫ হাজার ভক্ত একসঙ্গে এসেছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিতা আরও উল্লেখ করেছেন যে একাদশী এবং কার্তিক মাসম শনিবারে পড়ার কারণে অস্বাভাবিকভাবে বিপুল সংখ্যক ভক্ত উপস্থিত হয়েছিলেন।

এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু বলেন, “শ্রীকাকুলাম জেলার কাশিবুগ্গা ভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে পদপিষ্টের ঘটনা আমাকে মর্মাহত করেছে। এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় ভক্তদের মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।” 

নাইডু বলেন, আহতদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য তিনি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় নেতাদের ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন। মন্দিরে পদপিষ্টে প্রাণহানির ঘটনায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও শোকপ্রকাশ করেছেন।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস জগন মোহন রেড্ডি এই দুর্ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন এবং ভক্তদের প্রাণহানির ঘটনাকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে বর্ণনা করেছেন। রেড্ডি উল্লেখ করেছেন যে এর আগেও একই ধরণের দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিরুপতিতে বৈকুণ্ঠ একাদশীর সময় ছ’জন ভক্ত এবং সিংহচলম মন্দিরে সাত জন ভক্তের মৃত্যু হয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে তিনি বলেন, “বারবার দুর্ঘটনা সত্ত্বেও, সরকার যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সম্পূর্ণ অবহেলার সঙ্গে কাজ করেছে।”

ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধে রাজ্যকে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে রেড্ডি বলেন, “নিরীহ প্রাণহানির এই পুনরাবৃত্তি চন্দ্রবাবু নাইডুর প্রশাসনের অদক্ষতার প্রতিফলন।”