আজকাল ওয়েবডেস্ক: আমিষ না নিরামিষ কোন খাবার বেশি ভাল, তাই নিয়ে বিতর্ক লেগেই থাকে। এবার ফের ঘি পড়ল সেই বিতর্কের আগুনে। সম্প্রতি প্রকাশিত একাধিক আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এক চমকপ্রদ তথ্য, নিরামিষাশী মানুষের মস্তিষ্কের আয়তন তুলনামূলকভাবে আমিষভোজীদের থেকে কিছুটা কম। যদিও এই তথ্য শতভাগ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, তবুও গড় প্রবণতা তেমনই ইঙ্গিত করছে। আর এর ভিত্তিতে পুষ্টিবিদ ও নিউরোলজিস্টদের মধ্যে ইতিমধ্যেই আলোচনার ঝড় উঠেছে। বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল হলেও, গবেষণাগুলির বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও তার প্রভাব নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে।
এই গবেষণাগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ওয়ারক্রিক বিশ্ববিদ্যালয়, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফিউডান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি যৌথ গবেষণা। তিন বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এই সমীক্ষায় ব্রিটেনের বায়োব্যাংকের এর ১৮০,০০০-এর বেশি ব্যক্তির তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, যাঁরা দীর্ঘস্থায়ী ভাবে নিরামিষাশী বা সম্পূর্ণ উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্য গ্রহণ করেছেন, তাঁদের মস্তিষ্কের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে গ্রে ম্যাটার বা ধূসর পদার্থের ঘনত্ব তুলনামূলকভাবে কম ছিল। বিশেষ করে ফ্রন্টাল কর্টেক্স ও হিপোক্যাম্পাসে এই পার্থক্যটি পরিলক্ষিত হয়। প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য এই গ্রে ম্যাটার বা ধূসর বস্তুই মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির মূল উৎস।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
কিন্তু কেন এমন হয়?
এর প্রধান কারণ হিসেবে গবেষকরা উল্লেখ করেন ভিটামিন বি ১২, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন ও জিঙ্ক-এর ঘাটতি। এই সব পুষ্টি উপাদান সাধারণত আমিষ খাদ্য, যেমন- মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। নিরামিষ খাবারে এসব উপাদান থাকে নামমাত্র। এই সমস্ত উপাদান স্নায়ুর বিকাশ ও কার্যকারিতা বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে এই উপাদানগুলি ঘাটতি হলে মস্তিষ্কের গঠন ও কর্মক্ষমতার উপর তার প্রভাব পড়তে পারে।
এমডিপিআই-এর বিখ্যাত বিজ্ঞানপত্রীকা নিউত্রিয়েন্টস-এ প্রকাশিত অপর একটি গবেষণাতেও উঠে এসেছে একই তথ্য। ২০২৫ সালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গিয়েছে নিরামিষাশী শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন বি ১২-এর ঘাটতির ফলে মস্তিষ্কের বিকাশ কম। এর ফলে বুদ্ধিবৃত্তির বিলম্বের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে এই গবেষণায়। এখানে স্পষ্টতই বলা হয়েছে, খাদ্য থেকে এই বিশেষ ভিটামিন না পেলে নিউরোডেভেলপমেন্ট বা মস্তিষ্কের বিকাশে প্রভাব পড়তে পারে।
তবে গবেষকরা এটিও সতর্ক করে বলেন, মস্তিষ্কের আয়তনে পার্থক্য থাকলেও তা মানেই সব সময় বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি হবে এমন নয়। মানুষের বুদ্ধিমত্তা নির্ভর করে বহু জটিল ফ্যাক্টরের উপর। যেমন- নিউরনের সংযোগ, শেখার অভ্যাস, মানসিক উদ্দীপনা, ও বংশগত বৈশিষ্ট্য। মস্তিষ্কের কিছু কাঠামোগত পার্থক্য থাকলেও, তা ব্যক্তির জ্ঞান বা ক্ষমতার সরাসরি পরিমাপক নয়।
তবে তার পরেও পুষ্টিবিদদের মতে, নিরামিষাশীদের উচিত একটি সুষম খাদ্য গ্রহণ করা, প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে ভিটামিন বি ১২, ওমেগা-৩, আয়রন ও জিঙ্ক-এর ঘাটতি পূরণ করা উচিত।
সব মিলিয়ে জীবনের নানা পর্যায়ে খাদ্যাভ্যাস যেমন শারীরিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে, তেমনই মস্তিষ্কের গঠন ও কর্মক্ষমতাকেও কমবেশি প্রভাবিত করতে পারে। এটা গবেষণার মাধ্যমে আরও একবার প্রকাশ্যে এল এই কথা। বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন, প্রতিটি খাদ্যের নিজস্ব ভূমিকা আছে। কেবল নিরামিষ খাদ্য শরীরের সব প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে না।
কাজেই ধর্মান্ধতা, গোঁড়ামি, কিছু স্বঘোষিত পুষ্টিবিদ বা ভণ্ড বাবার উস্কানিতে কান না দিয়ে বিজ্ঞানের কথা শুনুন। বিশেষ করে ভারতের মতো দেশে বহু শিশু অপুষ্টির শিকার। তার মধ্যেই ধর্মের ধ্বজাধারীদের চাপে বেশ কিছু রাজ্যে মিড ডে মিলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ডিম। সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে বিজ্ঞানমনষ্ক হন। আপনার সন্তানের ভাগ্য আপনার হাতেই। তাই তাকে কী খাওয়াবেন সেটাও ভেবে নিন আগেই।
