আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার এক বিরল ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকল বোলপুর শান্তিনিকেতন। আইআইটি খড়গপুরের প্ল্যাটিনাম জুবিলি উপলক্ষে বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করল ভারতীয় ডাক বিভাগ। শান্তিনিকেতনের বল্লভপুরের রাঙাবিতান ট্যুরিজম প্রপার্টিতে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে ডাক বিভাগের এই জাতীয় উদ্যোগের মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। পাশাপাশি শান্তিনিকেতনে দাঁড়িয়ে পৌষমেলার স্টল বুকিংয়ের ওয়েবসাইট নিয়েও মুখ খুললেন আইআইটি খড়গপুরের ডিরেক্টর অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী। ফলে এদিনের অনুষ্ঠান একদিকে যেমন অতীত–ঐতিহ্যের সম্মান জানালো, অন্যদিকে আগামী দিনের প্রযুক্তিগত সহযোগিতারও দিশা রাজ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি সংযুক্ত করল।
প্রসঙ্গত, আইআইটি খড়গপুরের ৭৫ বছরের অবিস্মরণীয় যাত্রাকে স্মরণ করে ডাক বিভাগের এই স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয় দেশজুড়ে একযোগে ১,৬৪,৯৮৭টি ডাকঘরে, যা দেশের প্রথম আইআইটির প্রতি জাতীয় শ্রদ্ধার প্রতীক। ডাকটিকিট এখানে শুধু প্রতীকী সামগ্রী নয়, বরং ভারতীয় শিক্ষা, প্রযুক্তি ও গবেষণার যে বিশাল উত্তরাধিকারের নীরব দলিল। অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছিলেন আইআইটি খড়গপুরের ডিরেক্টর অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী, বোর্ড অফ গভর্নর্সের চেয়ারম্যান টি ভি নরেন্দ্রন সহ বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি। আইআইটি খড়গপুরের ৭৫ বছরের জাতিনির্মাণের অবদানকে বিশেষভাবে স্মরণ করেন।
এই প্ল্যাটিনাম জুবিলির আয়োজন শান্তিনিকেতনে করার বিষয়টি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সামগ্রিক শিক্ষাদর্শ, সৃজনশীলতা, মানবিকতা ও সমাজনির্ভর উন্নয়নের যে চেতনা শান্তিনিকেতন–শ্রীনিকেতনের মাটিতে আজও বজায় আছে, তার সঙ্গে আইআইটি খড়গপুরের শিক্ষা ও উদ্ভাবনের দর্শনের এক গভীর সংযোগ রয়েছে। ভারতের বৈচিত্র্য ও বৌদ্ধিক ঐতিহ্যের ওপর দাঁড়িয়েই যে প্রতিষ্ঠান গত সাত দশক ধরে বিশ্বমানের প্রযুক্তিগত নেতৃত্ব গড়ে তুলেছে, সেই প্রতিষ্ঠানের উদযাপনের জন্য শান্তিনিকেতনের মতো সাংস্কৃতিক পরিসরকে বেছে নেওয়া ছিল যথার্থ ও গভীর প্রতীকী সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে আইআইটি কর্তৃপক্ষ।
অনুষ্ঠানে আইআইটির সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হয়, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে প্রস্তাবিত আউটরিচ সেন্টার নিয়ে। এই কেন্দ্র গড়ে উঠলে গবেষণা, উদ্ভাবন, শিল্পক্ষেত্র, স্টার্টআপ এবং বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা নতুন মাত্রা পাবে বলে মত আইআইটি কর্তৃপক্ষের।
এদিন ডিরেক্টর অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী শান্তিনিকেতনের পৌষমেলার স্টল বুকিংয়ের ওয়েবসাইট প্রসঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ''পৌষ মেলা সংক্রান্ত না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট সংক্রান্ত বিশেষ করে যেহেতু বর্তমানে ইন্টারনেটে সিকিউরিটির অনেক সমস্যা থাকে, বিশ্বভারতীর উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষ আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেছিলেন, যদি আইআইটি খড়্গপুরের তরফ থেকে বিশ্বভারতীকে সাহায্য করতে পারি। এ বিষয়ে আমাদের যিনি বিশেষজ্ঞ রয়েছেন অধ্যাপকদের রাজা দত্ত। তাঁর সঙ্গে বিশ্বভারতীর ইতিমধ্যেই যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। কাজটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে। এছাড়া বিশ্বভারতীর তরফে পৌষ মেলার স্টল বন্টন নিয়ে যে নির্দেশিকা দেওয়া হবে, সেই মোতাবেক আমাদের বিশেষজ্ঞরা ওয়েবসাইট ডেভেলপ করবেন"।
পাশাপাশি তিনি বলেন, ''অনলাইনে সাধারণত স্বচ্ছতাই মূল মাপকাঠি হয়। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। মেলা কর্তৃপক্ষ তাদের স্টল বন্টনের নিয়মাবলী সঠিক ও যুক্তিসংগতভাবে আমাদের সাজিয়ে দিলে আমার সেই অনুযায়ী ওয়েবসাইট নির্মাণ করবো। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ে ওয়েবসাইটটি তৈরি হবে। আর শুধু মেলার ওয়েবসাইট বলেই নয় আগামী দিনে প্রযুক্তিগত বিষয়ে আইআইটি খড়্গপুরের কাছে কবিগুরুর ঐতিহ্যবাহী বিশ্বভারতী যা সাহায্য চাইবে আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব"।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি তাই শুধু একটি স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন নয়—শান্তিনিকেতনের সাংস্কৃতিক আবহে দাঁড়িয়ে আইআইটি খড়গপুরের অতীতের গৌরব, বর্তমানের দায়িত্ব ও ভবিষ্যতের বিশ্বমুখী যাত্রার এক ঐতিহাসিক সম্মিলন। পাশাপাশি দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করছে শিক্ষা মহল।
