একই দেহে দু'টি মানুষের বাস। না কাব্য নয়, বাস্তবেই। বিষয়টিকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়, কনজয়েন্ড টুইন। এটি এমন এক বিরল অবস্থা, যেখানে দু'টি শিশু কোনও না কোনও অংশে জুড়ে থাকে। এমনই এক অবস্থার শিকার আমেরিকার অ্যাবি এবং ব্রিটনি হেনসেল।
2
11
কনজয়েন্ড টুইন হল এমন যমজ শিশু, যারা জন্মের সময় শারীরিকভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এটি খুব বিরল ঘটনা, প্রতি ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০টি জন্মের মধ্যে একটি ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে।
3
11
কনজয়েন্ড টুইন কীভাবে সৃষ্টি হয়? চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী, সাধারণত নিষিক্ত ডিম্বাণু বিভাজিত হয়ে যমজ শিশুর জন্ম দেয়। কিন্তু কনজয়েন্ড টুইনের ক্ষেত্রে, ডিম্বাণু সম্পূর্ণভাবে বিভাজিত হয় না। ফলে, শিশুদের শরীরের কোনও না কোনও অংশ একসঙ্গে জুড়ে থাকে।
4
11
অ্যাবি এবং ব্রিটনি হেনসেল হলেন ডাইসেফালাস কনজয়েন্ট টুইন, অর্থাৎ তাঁদের দু'টি মাথা, দু'টি মেরুদণ্ড, দু'টি হৃদয় এবং দু'টি পৃথক ফুসফুস রয়েছে। তবে পরিপাকতন্ত্র এবং প্রজনন তন্ত্র একটিই রয়েছে দুই বোনের দেহে।
5
11
১৯৯০ সালের ৭ই মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার কারভার কাউন্টিতে জন্মগ্রহণ করেন অ্যাবি এবং ব্রিটনি। বাবা-মায়ের নাম প্যাটি এবং মাইক হেনসেল। সন্তানদের যখন প্রথমবার দেখেছিলেন বাবা-মা ভেবেছিলেন কোনও ভাবেই বাঁচবে না তারা। কিন্তু সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠেছে দুই বোন।
6
11
অ্যাবি এবং ব্রিটনির শরীর পেটের কাছ থেকে সংযুক্ত। প্রত্যেকের নিজস্ব হৃদয়, ফুসফুস এবং মেরুদণ্ড রয়েছে, কিন্তু পরিপাকতন্ত্র এবং প্রজনন অঙ্গ এক। অ্যাবি দেহের ডান হাত এবং ডান পা নিয়ন্ত্রণ করে, অন্যদিকে ব্রিটনি বাম হাত এবং বাম পা নিয়ন্ত্রণ করে।
7
11
শরীর থামিয়ে রাখতে পারেনি দুই বোনকে। দু'জন মায়ার লুথেরান হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন এবং বেথেল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হয়েছেন। বর্তমানে দু'জনেই একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন। অ্যাবি গণিত এবং ব্রিটনি ইংরেজি পড়ান।
8
11
শরীরের নিয়ন্ত্রণ ভাগ করে নেওয়া নিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা চোখে পড়ার মতো। দুই বোন একসঙ্গে গাড়ি চালাতে পারেন, খেলাধুলা করতে পারেন। এমনকী দু'জনের আলাদা আলাদা ড্রাইভিং লাইসেন্সও রয়েছে।
9
11
কিছুদিন আগেই বাগদানও সেরেছেন দু'জন, স্বামীর সঙ্গে ভালই চলছে সংসার। তাঁদের জীবন এবং চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত বিভিন্ন গণমাধ্যমে হাজির হন দুই বোন। তাঁদের জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে বিশেষ তথ্যচিত্রও।
10
11
তবে সব কনজয়েন্ড টুইন কিন্তু সুস্থ জীবন কাটাতে পারে না। কনজয়েন্ড টুইনরা প্রায়ই বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভোগে, কারণ তারা শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভাগ করে নেয়। আবার সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে। দু'জনের মধ্যে একজনের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে, অন্যজনেরও ঝুঁকি বাড়ে।
11
11
কিছু ক্ষেত্রে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কনজয়েন্ড টুইনদের আলাদা করা সম্ভব। তবে, এটি অত্যন্ত জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া। অস্ত্রোপচারের সাফল্য নির্ভর করে তারা শরীরের কোন অংশে যুক্ত এবং কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভাগ করে নেয়, তার ওপর।