ভারতে সোনার প্রতি প্রেম চিরন্তন। যুগে যুগে পরিবর্তিত হলেও এই ধাতব টানের গুরুত্ব কেবল বেড়েই চলেছে। বাজারে ওঠা-নামা থাকলেও ভারতীয় পরিবারের ঘরে ঘরে সোনা মানে আভিজাত্যের প্রতীক। নববধূর অলঙ্কার থেকে শুরু করে অক্ষয় তৃতীয়া, দীপাবলি, ধনতেরাসের মতো উৎসবে কিংবা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মুহূর্তে সোনা সর্বদাই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
2
9
প্রতিবার উৎসবের সিজনে ভোক্তাদের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোনার দামও উর্ধ্বমুখী হয়। তবে ভোক্তাদের জন্য এই দামী কেনাকাটা প্রায়ই বিভ্রান্তিকর হয়ে ওঠে—বিশেষ করে বিক্রেতার প্রতি আস্থার অভাব, স্বচ্ছতার অভাব, খাঁটি সোনা ও হলমার্কিং সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার কারণে। তাই উৎসবের ভিড়ে কীভাবে নিরাপদে ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সোনা কিনবেন, তা জানা জরুরি।
3
9
আজকের অন্যতম বড় সমস্যা হল—বিশ্বাসযোগ্য বিক্রেতা চিহ্নিত করা। অনেক সময় ভোক্তারা অজান্তেই এমন বিক্রেতার কাছ থেকে সোনা কিনে বসেন, যারা খাঁটি নয় বা বেআইনি পথে সোনা সংগ্রহ করেন। এতে শুধু টাকার ক্ষতিই নয়, দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের মূল্যও হারায়।
4
9
তাই প্রথম কাজ হল—বিক্রেতা বিউরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস দ্বারা অনুমোদিত হলমার্ক সোনার বিক্রেতা কিনা তা যাচাই করা। কেনার পর অবশ্যই ইনভয়েস, গ্যারান্টি কার্ড, ও অ্যাসে রিপোর্ট সংগ্রহ করবেন। ইনভয়েসে সেদিনের সোনার দাম, মেকিং চার্জ, অপচয়, এবং ট্যাক্সের স্পষ্ট বিভাজন থাকতে হবে। এতে তুলনা করে ভালো বিক্রেতা বেছে নেওয়া সহজ হবে।
5
9
এছাড়া নিশ্চিত হতে হবে যে বিক্রেতার একটি স্পষ্ট রিটার্ন/বাইব্যাক নীতি আছে, এবং পরবর্তী সেবাও সুষ্ঠুভাবে প্রদান করে। দোকানে প্রদর্শিত সার্টিফিকেটগুলো খতিয়ে দেখা জরুরি। কেনা গয়নায় হলমার্ক স্ট্যাম্প আছে কিনা না দেখে কখনো বের হবেন না—কারণ এটি ভবিষ্যতে পুনর্বিক্রয়মূল্য ও বীমা কভারেজ নিশ্চিত করে।
6
9
বাজারে সোনা তার বিশুদ্ধতার ভিত্তিতে দামি হয়। তাই কেনার আগে বিভিন্ন ক্যারেট সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। ১৮ ক্যারেট সোনা: তিন-চতুর্থাংশ খাঁটি সোনা, বাকিটা অন্যান্য ধাতুর সংমিশ্রণ। এটি হালকা, আধুনিক ডিজাইনের গয়নার জন্য উপযোগী। ২২ ক্যারেট সোনা: ৯১.৬% খাঁটি, বিয়েবাড়ি ও ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয়। ২৪ ক্যারেট সোনা: একেবারেই খাঁটি হলেও এটি দিয়ে গয়না বানানো যায় না। বরং কয়েন বা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য আদর্শ।
7
9
অ্যালয় মিশ্রণের ধরন সরাসরি প্রভাব ফেলে গয়নার স্থায়িত্ব, চেহারা ও দীর্ঘমেয়াদি মূল্যে। একজন সৎ বিক্রেতা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রাখবে। ভারতে সোনা কেনা সবসময় শুধু ঐতিহ্য রক্ষার অংশ নয়; বরং এখন এটি মূল্যস্ফীতি ও বাজারের অস্থিরতার বিরুদ্ধে একটি নির্ভরযোগ্য বাফার। দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল রিটার্নের কারণে সোনা এখন বার্ষিক বিনিয়োগ পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
8
9
অনেক পরিবার সন্তানদের জন্য উত্তরাধিকার হিসেবে সোনা রেখে যাচ্ছেন। আবার তরুণ প্রজন্ম ক্রমশ ডিজিটাল সোনার দিকে ঝুঁকছে—যেখানে রক্ষণাবেক্ষণ, সুদহার, সার্টিফিকেশন ও রিডেম্পশন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য জানা জরুরি।
9
9
সোনা কেনা মানে শুধু অলঙ্কার নয়—এটি একদিকে ঐতিহ্য, অন্যদিকে এক মুনাফাযোগ্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ। তাই কেনার আগে বিক্রেতার বিশ্বাসযোগ্যতা, হলমার্কিং, ইনভয়েস, নীতি ও সোনার খাঁটিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখুন—সঠিক তথ্য, স্বচ্ছতা ও আস্থা—এই তিনিই আপনার সোনার বিনিয়োগকে করবে নিরাপদ ও লাভজনক।