জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী জুবিন গর্গের অকাল মৃত্যুতে শোকাহত গোটা দেশ। সিঙ্গাপুরে ‘নর্থইস্ট ফেস্টিভ্যাল’-এ যোগ দিতে গিয়েছিলেন গায়ক। ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠানে তাঁর গান পরিবেশনের কথা ছিল। কিন্তু অনুষ্ঠানের আগের দিনই ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। গায়কের আকস্মিক মৃত্যুতে উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে উঠল গাফিলতির অভিযোগ। গুয়াহাটিতে দায়ের হয়েছে এফআইআর।
সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে জুবিনের। এই ঘটনায় ইভেন্ট ম্যানেজার শ্যা মকানু মহন্তের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। অ্যাডভোকেট রতুল বোরা অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন মরিগাঁও থানায়। অভিযোগে বলা হয়েছে, অনুষ্ঠানের সুষ্ঠু ও নিরাপদ ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক ঘাটতি ছিল, আর সেই অব্যবস্থাই জুবিন গার্গের অকালমৃত্যুর অন্যতম কারণ।এফআইআর-এ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মহন্তর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অবহেলা বা অপরাধমূলক অবহেলার অভিযোগও। অন্যদিকে সংবাদমাধ্যমের কাছে জুবিনের স্ত্রী জানিয়েছেন, স্কুবা ডাইভিংয়ের সময় নয়, সাঁতার কাটার সময় খিঁচুনি ওঠায় তাঁর পেটে জল ঢুকে যায়। এর ফলে প্রাণ যায় গায়কের।
আরও পড়ুনঃ মৃত্যুর আগের দিনই অনুরাগীদের ডেকেছিলেন অনুষ্ঠানে—জুবিন গর্গের শেষ ভিডিওতে ভেসে উঠল অনন্ত বিদায়ের সুর
জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে পারফরম্যান্সের আগের দিন স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় জুবিনের। সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে সিঙ্গাপুর পুলিশের তরফে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। অভিযোগ, লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই জলে নামেন জুবিন এবং সেখানেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ইভেন্ট ম্যানেজারের বিরুদ্ধে দায়ী করে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগকারীর দাবি, পুরো আয়োজনের ব্যবস্থাপনায় একাধিক গাফিলতি ছিল, যা সরাসরি শিল্পীর প্রাণহানির জন্য দায়ী।

এদিকে ঘটনার পরদিনই একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। যেখানে দেখা যায় জুবিনকে লাইফ জ্যাকেট পরে সমুদ্রের জলে নামতে। আনন্দে ভেসে বেড়ানোর সেই কয়েক মুহূর্তই হয়ে উঠল তাঁর জীবনের শেষ দৃশ্য। ওই ভিডিওতে গায়ককে দেখা যায় জ্যাকেট ঠিক করতে করতে সমুদ্রে ঝাঁপ দিচ্ছেন। কয়েক মিনিট পরই ঘটে অঘটন। জুবিনের শনিবার উত্তর-পূর্ব উৎসবে মঞ্চে গাইবার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ভক্তদের কাঁদিয়ে চলে গেলেন তিনি। খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা অসম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নেমে আসে শোকের ছায়া।
১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর অসমের তেজপুরে জন্মগ্রহণ করেন জুবিন। কিশোর বয়স থেকেই গানকে সঙ্গী করেছিলেন। শুধু অসম নয়, গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতে সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে তিনি ছিলেন এক আবেগের নাম। ‘ইয়া আলি’ গানটির মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তিনি। মহেশ ভাটের ছবি গ্যাংস্টার (২০০৬)-এর এই গান রাতারাতি তাঁকে সর্বভারতীয় তারকা বানিয়ে দেয়। এরপর থেকে বলিউড ও আঞ্চলিক সঙ্গীতে একের পর এক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি।
অসম সংস্কৃতি ও সঙ্গীতচর্চায় তাঁর অবদান অপরিসীম। নাটক, চলচ্চিত্র, সুরসৃষ্টি—সর্বত্রই ছাপ রেখেছিলেন তিনি। শুধু গায়ক নয়, অভিনেতা, গীতিকার, পরিচালক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ভক্তরা তাঁকে আদর করে ডাকতেন ‘জনতার গায়ক’। গায়কের মৃত্যুতে শোকবার্তা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। সঙ্গীত থেকে বিনোদন অজস্র মানুষ শোকজ্ঞাপন করেছেন।
