ইরানের চলচ্চিত্র পরিচালক জাফর পানাহি। বিশ্ববরেণ্য পরিচালকদের তালিকায় তাঁর নাম থাকে একেবারে শুরুর দিকেই। অস্কার-দৌড়ে যখন তাঁর পরিচালিত ছবি ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’ তরতর করে এগিয়ে চলেছে, ঠিক তখনই ইরান থেকে এল এক চাঞ্চল্যকর খবর। বিশ্ববরেণ্য এই পরিচালককে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস নিউজ এজেন্সি (HRANA)। উল্লেখ্য, কান চলচ্চিত্র উৎসবে এ বছর ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’-এর জন্য পাম দ’অর সম্মান পেয়েছেন পানাহি।

পিপল ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার প্রকাশিত এক সংক্ষিপ্ত আপডেটে হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ৬৫ বছর বয়সি এই পরিচালক শুধু জেল নয়, দু’বছরের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনের সদস্যপদে নিষেধাজ্ঞার মুখেও পড়েছেন। অভিযোগ, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়ানো।

পানাহির আইনজীবী মোস্তাফা নিলি এক বিবৃতিতে বলেন, “তেহরান রেভোলিউশনারি কোর্টের ব্রাঞ্চ ২৬, অনুপস্থিত অবস্থাতেই পানাহিকে এক বছরের জেল, দু’বছরের ট্রাভেল ব্যান এবং রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনে যুক্ত থাকার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা আইনি সময়সীমার মধ্যেই এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।” তবে এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’-এর নির্মাতা পক্ষ বা ইরানের সরকারি মহল কোনও মন্তব্য করেনি।

 

উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই ছবি ইতিমধ্যেই ২০২৬ অস্কার-এর অন্যতম শক্তিশালী দাবিদার হিসেবে উঠে এসেছে। বিভিন্ন পূর্বাভাসে পানাহির নাম উঠে আসছে সেরা পরিচালক বিভাগে, পাশাপাশি ছবিটি সেরা চলচ্চিত্র বিভাগেও জায়গা করে নিতে পারে বলে জল্পনা। আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম বিভাগেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা থাকলেও, ইরান সরকারি ভাবে ছবিটি পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়। শেষ পর্যন্ত ছবিটি অস্কারে জমা দেয় ফ্রান্স, যারা এই প্রকল্পের সহ-প্রযোজক। অস্কার মনোনয়ন ঘোষণা হবে ২২ জানুয়ারি, আর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান ১৫ মার্চ।

 

দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র মহলে সম্মানিত জাফর পানাহি, যাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ‘দ্য হোয়াইট বেলুন’, ‘দ্য সার্কেল’ এবং ‘ট্যাক্সি’-নিজের দেশে বারবার সেন্সরশিপ ও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন। ২০০৯ সাল থেকেও একাধিকবার কারাবন্দি হয়েছেন তিনি। এমনকি দীর্ঘ সময় ধরে তাঁকে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থেকেও, কখনও গোপনে, কখনও দূর থেকে ছবি বানাতে হয়েছে।

 

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানাচ্ছে, ২০২৩ সালে অনশন ধর্মঘটের পর মুক্তি পাওয়ার পরই, গোপনে ইরানের ভেতরে ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’-এর একাংশের শুটিং করেন পানাহি।চলতি বছরের মে মাসে কান চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তির পর ছবিটি প্রবল প্রশংসা কুড়িয়েছে। ছবির গল্প অনুপ্রাণিত কারাগারের ভেতরে পানাহির শোনা সহবন্দিদের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে। ছবির গল্প আবর্তিত হয়েছে এক প্রাক্তন বন্দিকে ঘিরে, যে এমন একজনকে অপহরণ করে, যাকে সে নিজের নির্যাতনকারীর ভূমিকায় সন্দেহ করে। যদিও চোখ বাঁধা থাকার কারণে সে কখনওই নিশ্চিত হতে পারে না।

 

সব মিলিয়ে, জাফর পানাহির জীবন আর সিনেমা যেন ক্রমশ একে অপরের প্রতিবিম্ব হয়ে উঠছে, যেখানে পুরস্কারের আলো আর কারাগারের অন্ধকার পাশাপাশি হাঁটে।


প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের গ্রেফতার হওয়া পরিচালক মোহাম্মদ রাসুলফের বিষয়ে খোঁজ নিতে গত ১১ জুলাই তেহরানের এভিন কারাগারে গিয়েছিলেন পানাহি। একটি পুরনো মামলার দোহাই দিয়ে সেখানেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। এরপর সাত মাস ধরে তেহরানের এই কুখ্যাত এভিন কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছিল পানাহিকে। ২০২৩-এর অক্টোবরে তাঁকে জামিনে মুক্তি দেয় শীর্ষ আদালত।