সংবাদ সংস্থা মুম্বই: আজ তিনি সফল বলিউড অভিনেত্রী। তাঁর ঝুলিতে 'পরিণীতা', 'ভুল ভুলাইয়া', 'দ্য ডার্টি পিকচার', 'কাহানি'– একাধিক জনপ্রিয় ছবি। কিন্তু এই গ্ল্যামার আর সাফল্যের পিছনে আছে দীর্ঘ এক অবহেলা, অপমান, আরেকের পর এক দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার গল্প। বিদ্যা বালন নিজেই তুলে ধরলেন সেই দুঃসহ অতীত, যেখানে তাঁকে বলা হত 'অপয়া' .আর সেই অপবাদে বিদ্ধ হয়ে বাদ পড়তেন একের পর এক ছবি থেকে!

 

সম্প্রতি, বিদ্যা শোনান, কীভাবে দক্ষিণের একটি প্রজেক্ট ‘চক্রম’-এর হাত ধরে ফিল্মি সফর শুরু হলেও, সেটা কীভাবে এক বিভীষিকাময় অধ্যায়ে পরিণত হয়।একটি বিজ্ঞাপনের কাজ করতে গিয়ে দক্ষিণ ভারতে গিয়েছিলেন বিদ্যা, আর সেখানেই চলছিল মোহনলালের 'চক্রম' ছবির অডিশন। তাঁকে ডাকা হয় অডিশনের জন্য, এবং তিনি জানালেন—“মা বলেছিলেন হ্যাঁ করো, কারণ উনি মোহনলালের বড় ভক্ত।”

 

 

পরবর্তীতে পরিচালক তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান। মা ও দিদির সঙ্গে গিয়ে দেখা হয় পরিচালকের সঙ্গে। শুটিংও শুরু হয়ে যায়, ১৫ দিন শুটও হয়। এরপর শোনানো হয় ‘শিডিউল র্যািপ’। বলা হয়, মোহনলালের ডেট সমস্যা, তাই এক মাস পর আবার শুরু হবে।  বিদ্যার কথায়, “বম্বে ফিরে এসে দেখলাম, সবাই বলছে এক দক্ষিণী মেয়ে একটা মালায়ালম ছবিতে কাজ করছে— তখনকার দিনে যেখানে বেশিরভাগ দক্ষিণী ছবির  নায়িকাই পাঞ্জাবি। ফলে ৮–৯টা ছবির প্রস্তাব এসে যায় আমার কাছে।”বিদ্যা  বলে চলেন, “প্রযোজকরা ফোন করতেন,  চিত্রনাট্য শোনাতেন, আমার পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনা করতেন। আমি মনে করছিলাম, আমি মনে হয় তারকা হয়ে গিয়েছি!”

 

কিন্তু সেই আশার আলো নিমেষে নিভে যায়— যখন খবর আসে, চক্রম ছবি বাতিল হয়ে গিয়েছে। ছবির পরিচালক ও মোহনলালের মধ্যে সমস্যা তৈরি হয়, আর একরাশ স্বপ্ন মুহূর্তেই ভেঙে চুরমার। “আমি যে ছবিগুলোতে কাজ করতে রাজি হয়েছিলাম,  হ্যাঁ বলেছিলাম, সেগুলো একে একে হাতছাড়া হয়ে গেল। মানুষ ভাবল, হয়তো আমি ‘অপয়া’। সেই পরিচালক-অভিনেতা জুটি ৮টা হিট দিয়েছিল, ৯টা ছবিতে আমাকে নেওয়া হল, আর সেইসব  ছবিই বাতিল হয়ে গেল! সবাই ভাবল, এই মেয়েটাই হয়তো ‘অপয়া’!’


বিদ্যার বাবা-মা তখন শুরু করেন প্রার্থনা— “শুধু একটা ছবিই যেন হয়, একটা ছবি যেন ওর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।” বিদ্যার স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, “আমি প্রতিদিন রাতের শেষে চোখে জল আসত, কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। প্রতিদিন কাঁদতে কাঁদতে ঘুমোতাম। কিন্তু আশা হারাইনি। জানতাম, একদিন হবে।”

 

২০০৫ সালে মুক্তি পায় পরিণীতা, আর সেখান থেকেই বিদ্যার জীবনের পাল্টে যায় চিত্রনাট্য। লাগে রহো মুন্নাভাই, গুরু, ভুল ভুলাইয়া, পা, দ্য ডার্টি পিকচার, কাহানি— একের পর এক সফল সিনেমা, প্রশংসা, পুরস্কার, আর জনমানসে তাঁর অটুট অবস্থান। সম্প্রতি তিনি আবার ফিরেছেন ভুল ভুলাইয়া ৩-এ, যেখানে তাঁর কামব্যাক পরফরম্যান্স বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে—সারা বিশ্বে আয় ৩৮৯.২৮ কোটি টাকা।

 

যখন কেউ বলে, ‘তোমার থেকে হবে না’, তখন উত্তরটা হতে পারে বিদ্যা বালনের জীবন। কারণ যাকে একদিন বলা হয়েছিল ‘অভিশপ্ত’, তিনিই একদিন বলিউডের কাহানি লিখেছেন নিজের হাতে।