বলিউডের তারকারা শুধুই অভিনয়ের উপর ভরসা রাখেন না, অনেকেই বিনিয়োগ করেন রিয়েল এস্টেটে কিংবা নিজস্ব ব্যবসায়।  অমিতাভ বচ্চনও নব্বইয়ের দশকে এমনই এক চেষ্টা করেছিলেন—এবিসিএল (অমিতাভ বচ্চন কর্পোরেশন লিমিটেড) নামের সংস্থা চালু করেছিলেন তিনি। কিন্তু সংস্থা ভয়াবহ লোকসানে পড়ে যায়, ১৯৯৯ সালে অমিতাভকে দেউলিয়া ঘোষণার পথেই হাঁটতে হয়।

সেই সময় তাঁর অভিনয় কেরিয়ারও একেবারে মন্দার দিকে। একসময় দেশজোড়া জনপ্রিয় এই নায়কের হাতে কাজই ছিল না। তবে ঠিক সেই দুঃসময়েই ঘটে তাঁর ‘কমব্যাক’। আর সেই সময়ের অমিতাভকে কাছ থেকে দেখেছিলেন অভিনেতা আশীষ বিদ্যার্থী, যিনি সম্প্রতি স্মৃতিচারণা করলেন।

মায়ের জন্য অমিতাভের চিঠির কথা এই প্রথম বললেন আশিস বিদ্যার্থী। আশিস জানালেন, “আমি তখন মৃত্যুদাতা ছবিতে অমিতাভজির সঙ্গে কাজ করছি। আমার বাবা খুব বয়স্ক, আর মা সদ্য হার্ট অ্যাটাক থেকে সেরে উঠছিলেন। প্রতিদিন শুটিং শেষে আমি রাতে দিল্লি চলে যেতাম মায়ের কাছে থাকার জন্য, সকালে আবার ফ্লাইটে মুম্বই ফিরতাম। তখন আমি অমিতাভজিকে বললাম—‘স্যার, আপনি কি মায়ের জন্য একটা চিঠি লিখবেন?’ তিনি লিখে দিলেন। আমি সেটা মাকে হাসপাতালে পড়ে শোনালাম।”

এই ছোট্ট মানবিক মুহূর্ত আজও ভুলতে পারেন না আশিস।
 
এরপর আসে মেজর সাব। আশিস বললেন, “শুটিংয়ের সময়ে যেখানে অন্যরা মেকআপ, উইগ, নকল গোঁফ খুলে ফেলে দেন, অমিতাভজি রাতভর চরিত্রে থাকতেন। একেবারেই অদ্ভুত শৃঙ্খলা। এমন মানুষকে দেখে আপনি নিজের হতাশা দূর করতে পারবেন। তিনি যেই না ছিলেন—দেশব্যাপী জনপ্রিয়তার শীর্ষে, এমনকি কুলি শ্যুটিংয়ে আহত হলে মানুষ না খেয়ে বসে পড়েছিল। অথচ যখন দুঃসময় এল, তিনি বিন্দুমাত্র হাহাকার করেননি।”

আজও সমান বিনয়ী অমিতাভ, জানান আশিস।  আশিস বললেন, “সবচেয়ে অবাক লাগে, আমি সম্প্রতি যখন গুডবাই ছবিতে তাঁর সঙ্গে কাজ করলাম, তখনও তিনি একইরকম। পরিচালক যাই বলেন মাথা নত করে মেনে নেন। কখনও অনীহা নেই, কখনও কারও অস্বস্তি তৈরি করেন না। সময়মতো হাজির, শৃঙ্খলাবদ্ধ, আর নিখুঁত অভিনয়ে সকলকে স্তব্ধ করে দেন। এমন মানুষ থেকে শেখার শেষ নেই।”
অমিতাভ নিজেও এক পুরনো সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছিলেন—প্রায় ৫৫টি কেস, ৯০ কোটি টাকা পরিশোধের দায়, প্রতিদিন ঋণদাতাদের দরজায় কড়া নাড়া—সবই সহ্য করেছেন। এমনকী, তাঁর বাড়িটিও বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। অভিনেতার নিজের ভাষায়, “ সেসব খুবই লজ্জার, অপমানের দিন ছিল। কিন্তু সই করেছি, দায়ও আমার। আমাকে শোধ করতে হবে।”

অমিতাভ বচ্চন আজ শুধু এক নায়ক নন, বরং এক জীবন্ত লড়াইয়ের প্রতীক। দেউলিয়া থেকে দাঁড়িয়ে উঠে আবার নিজেকে গড়ে তোলা—এ যেন সিনেমার থেকেও নাটকীয়। আর আশীষ বিদ্যার্থীর স্মৃতিচারণ শুধু মনে করিয়ে দিল, কিংবদন্তিরা কখনও হাল ছাড়েন না।